পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ব্যাপকতা
২৩৬৫-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার একশটি রহমত রয়েছে, তন্মধ্যে মাত্র একটি রহমত তিনি (দুনিয়ার) জিন্, মানুষ, পশু ও কীট-পতঙ্গের জন্যে অবতীর্ণ করেছেন। এই একটি রহমত দিয়ে তারা পরস্পরকে স্নেহ-মমতা করে, এ রহমত দিয়ে তারা পরস্পরকে দয়া করে। এর দ্বারাই বন্য প্রাণীরা এদের সন্তান-সন্ততিকে ভালবাসে। আর অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমত আল্লাহ তা’আলা পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দিয়েছেন। যা দিয়ে তিনি কিয়ামতের দিন তাঁর বান্দাদেরকে রহম করবেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ سَعْةِ رَحْمَةِ اللهِ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِنَّ للَّهِ مائةَ رَحْمَةٍ أَنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً وَاحِدَةً بَيْنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ وَالْبَهَائِمِ وَالْهَوَامِّ فَبِهَا يَتَعَاطَفُونَ وَبِهَا يَتَرَاحَمُونَ وَبِهَا تَعْطُفُ الْوَحْشُ عَلَى وَلَدِهَا وَأَخَّرَ اللَّهُ تِسْعًا وَتِسْعِينَ رَحْمَةً يَرْحَمُ بِهَا عِبَادَهُ يَوْمَ الْقِيَامَة»
ব্যাখ্যা: হাদীসটির অনেক সানাদ এবং শব্দ রয়েছে তবে এখানে উল্লেখিত শব্দ মুসলিমের, তিনি একে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে ‘আত্বার সানাদে তাওবার অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে (علاء) ‘আলা- এর একটি বর্ণনাও আছে, যা তিনি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে পিতার মাধ্যমে বর্ণনা করেন আর তা হল, (خلق الله مائة رحمة فوضع واحدة بين خلقه وخبأ عنده مائة الا واحدة) অর্থাৎ- আল্লাহ একশতটি রহমাত তৈরি করেছেন, অতঃপর একটি তার সৃষ্টির মাঝে স্থাপন করেছেন এবং তাঁর কাছে তিনি একশতটি গোপন রেখেছেন একটি ছাড়া। এভাবে মুসলিমে তাওবাহ্ অধ্যায়ে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব এর বর্ণনাতে আছে,
جعل الله مائة جزء فأمسك عنده تسعة وتسعين جزءا وانزل فى الأرض جزءا واحدا فمن ذلك الجزء يتراحم الخلق حتى ترفع الفرس حافرها عن ولدها خشية ان تصيبه
অর্থাৎ- আল্লাহ রহমাতকে একশতটি অংশে বিভক্ত করেছেন, অতঃপর তার কাছে তিনি ৯৯ টি অংশ অবশিষ্ট রেখেছেন জমিনে মাত্র একটি অংশ অবতীর্ণ করেছেন, অতঃপর ঐ একটি অংশের কারণে সৃষ্টিজীব একে অপরের প্রতি দয়া করে থাকে। এমনকি ঘোড়া তার খুরকে তার সন্তান থেকে দূরে রাখে এ আশংকায় যে, তা তার সন্তানের গায়ে লেগে যাবে।
আর বুখারীতে আবূ হুরায়রাহ থেকে সা‘ঈদ মাকবূরীর সানাদে ‘রিকাক’ অধ্যায়ে আছে,
(ان الله خلق الرحمة يوم خلقها مائة رحمة فأمسك عنده تسعة و تسعين رحمة وأرسل فى خلقه كلهم رحمة واحد)
অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আল্লাহ যে দিন রহমাতেকে সৃষ্টি করেছেন সেদিন একশতটি রহমাত সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাঁর কাছে নিরানববইটি রহমাত মজুদ রেখেছেন এবং একটি রহমাত তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টির মাঝে অবতীর্ণ করেছেন।
(أَنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً وَاحِدَةً) এক বর্ণনাতে (وارسل فى خلقه كلهم رحمة واحدة) এসেছে। কারী বলেন, রহমাত অবতীর্ণ করা এমন এক উপমা যা ঐ দিকে ইঙ্গিত করছে যে, তা স্বভাবজনিত বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তা আসমানী বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত যা সৃষ্টির যোগ্যতা অনুযায়ী বণ্টিত।
(وَأَخَّرَ اللّٰهُ) ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ অংশটুকুকে (انزل منها رحمة) এর উপর সংযোজন করা হয়েছে এবং আল্লাহর পরকালীন রহমাতের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য স্পষ্টকরণ স্বরূপ লুকায়িত বিষয়কে প্রকাশ করা হয়েছে। এক বর্ণনাতে আছে, فأمسك عنده আর সুলায়মান-এর হাদীসে আছে, وخبأ عنده
(يَوْمَ الْقِيَامَةِ) জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে এবং পরে। এতে মু’মিন বান্দাদের ওপর আল্লাহর প্রশস্ত অনুগ্রহের দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। আরো ঐ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, তিনি অনুগ্রহকারীদের মাঝে সর্বাধিক অনুগ্রহকারী। ইবনু আবী হামযাহ্ বলেন, হাদীসে মু’মিনদের ওপর আনন্দের প্রবিষ্টকরণ আছে। কেননা স্বভাবত নাফসকে যা দান করা হয় সে ব্যাপারে নাফসের আনন্দ তখনই পূর্ণতা লাভ করবে যখন প্রতিশ্রুত বিষয়টি জানা থাকবে। হাদীসটিতে ঈমানের ব্যাপারে এবং আল্লাহর সঞ্চিত রহমাতের ক্ষেত্রে সুপ্রশস্ত আশার ব্যাপারে উৎসাহ রয়েছে।