২২৮৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৮৮-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে নামগুলোর মধ্যে একটি নাম আল্ল-হ- যিনি ছাড়া আর কোন মা’বূদ নেই। আর্ রহমান- দয়াময় বা মেহেরবান। যার দয়া বা মেহেরবানী সাড়া বিশ্বকে ছেয়ে আছে। আর্ রহীম- করুণা বা বিশেষ দয়ার অধিকারী, যে করুণা শুধু মু’মিনদের প্রতি করা হয়। আল মালিক- রাজাধিরাজ, বাদশাহ। আল কুদ্দূস- অতি পাক-পবিত্র, ধ্বংস বা কোন অপশক্তি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। আস্ সালা-ম- শান্তিময় ও নিরাপদ, কোনরূপ অশান্তি তাঁকে ছুঁতে পারে না। আল মু’মিন- নিরাপত্তাদাতা বা নিরাপদকারী। আল মুহায়মিনু- রক্ষণাবেক্ষণকারী। আল ’আযীয- প্রভাবশালী, অন্যের ওপর বিজয়ী। আল জাব্বা-র- কঠিন-কঠোর, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সংশোধনকারী। আল মুতাকাব্বিরু- অহংকারের অধিকারী, যাঁর জন্য অহংকার করাই শোভা পায়।

আল খ-লিক্ব- স্রষ্টা। আল বা-রী- ত্রুটিহীন সৃষ্টিকারী। আল মুসাব্বির- প্রকল্পক ও নকশা অংকনকারী, ডিজাইনার। আল গাফফা-র- বড় ক্ষমাশীল, যিনি অপরাধ ঢেকে রাখেন এবং অসংখ্য অপরাধ ক্ষমা করতে দ্বিধাবোধ করেন না। আল কহহা-র- সকল বস্ত্ত যাঁর ক্ষমতার অধীন, অর্থাৎ- ক্ষমতা প্রয়োগে যাঁর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। আল ওয়াহহা-ব- বড় দাতা, যাঁর দান অসীম। আর্ রাযযা-ক- রিযকদাতা। আল ফাত্‌তা-হ- যিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সৃষ্টির মীমাংসাকারী, বিপদমুক্তকারী। আল ’আলীম- বড় জ্ঞাতা, যিনি পূর্বাপর সবকিছু জানেন। আল, ক্ব-বিয- রিযক ইত্যাদির সংকোচনকারী। আল বা-সিত্ব- রিযকসহ ইত্যাদির সম্প্রসারণকারী। আল খ-ফিয- যিনি নীচে নামান। আর্ র-ফি’উ- যিনি উপরে উঠান। আল মু’ইযযু- সম্মান ও পূর্ণতা দানকারী। আল মুযিল্লু- অপমান ও অপূর্ণতা দানকারী। আস্ সামী’উ- সর্বশ্রোতা, উচ্চস্বর-নিম্বস্বর সকল স্বরের শ্রোতা। আল বাসীর- দর্শক, ছোট-বড় সকল বস্ত্তর।

আল হাকাম- নির্দেশ দানকারী, বিধানকর্তা। আল ’আদলু- ন্যায়বিচারক, যিনি যা উচিত তা-ই করেন। আল লাত্বীফ- যিনি সৃষ্টির যখন যা আবশ্যক তা করে দেন; অনুগ্রহকারী, সূক্ষ্মদর্শী বা যিনি অতি সূক্ষ্ম বিষয় সম্পর্কেও অবগত। আল খবীর- যিনি গুপ্ত রহস্যাদি সম্পর্কে অবগত। আল হালীম- ধৈর্যশীল, যিনি অপরাধ জেনেও সহজে শাস্তি দেন না। আল ’আযীম- বিরাট মহাসম্মানী। আল গাফূর- যিনি অপরাধ গোপন রাখেন এবং অতি জঘন্য অপরাধও ক্ষমা করেন। আশ্ শাকূর- কৃতজ্ঞ, যিনি অল্পে বেশী পুরস্কার দেন। আল ’আলীয়্যু- সর্বোচ্চ সমাসীন; সর্বোপরি। আল কাবীর- বিরাট, মহান, ধারণার ঊর্ধে বড়। আল হাফীয- বড় রক্ষাকারী, যিনি বান্দাদের সব বিষয় লক্ষ্য রাখেন। আল মুক্বীতু- খাদ্যদাতা; দৈহিক ও আত্মিক শক্তিদাতা। আল হাসীবু- যিনি অন্যের জন্য যথেষ্ট হন; যিনি যার জন্য যা যথেষ্ট তা দান করেন।

আল জালীলু- গৌরবান্বিত, মহিমান্বিত; যাঁর মহিমা অতুলনীয়। আল কারীমু- বড় দাতা, আশার অধিক দাতা; যিনি বিনা চাওয়ায় দান করেন। আর্ রক্বীবু- যিনি সকলের সকল বিষয় লক্ষ্য রাখেন এবং সর্বদা নখদর্পণে থাকেন। আল মুজীবু- উত্তরদাতা, যিনি ডাকে সাড়া দেন। আল ওয়া-সি’উ- সম্প্রসারণকারী; যাঁর দান, জ্ঞান, দয়া ও রাজ্য বিপুল ও সম্প্রসারিত। আল হাকীমু- প্রজ্ঞাবান তত্ত্বজ্ঞানী, যিনি প্রতিটি বিষয় উত্তমরূপে ও নিখুঁতভাবে সমাধা করেন। আল ওয়াদূদু- যিনি বান্দার কল্যাণকে পছন্দ করেন। আল মাজীদু- অসীম অনুগ্রহকারী। আল বা-’ইসু- প্রেরক, রসূল প্রেরণকারী, রিযক প্রেরণকারী, কবর থেকে হাশরে প্রেরণকারী। আশ্ শাহীদু- বান্দার প্রতিটি কাজের সাক্ষী, যিনি প্রকাশ্য বিষয় অবগত, আল হাক্কু- সত্য ও সত্য প্রকাশকারী, যিনি প্রজ্ঞা অনুসারে কাজ করেন। আল ওয়াকীলু- কার্যকারক, যিনি বান্দাদের কাজের যোগানদাতা। আল কবিয়্যু- শক্তিবান, শক্তির অধিকারী। আল মাতীনু- বড় ক্ষমতাবান, যার ওপর কারো কোন প্রকার ক্ষমতা নেই। আল ওয়ালিয়্যু- যিনি মু’মিনদের অভিভাবক, ভালবাসেন ও সাহায্য করেন।

আল হামীদু- প্রশংসিত, একমাত্র প্রশংসার যোগ্য। আল মুহসী- হিসাবরক্ষক, বান্দারা যা করে তিনি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখেন। আল মুব্‌দিউ- বিনা নমুনায় স্রষ্টা, যিনি মডেল না দেখে সৃষ্টি করেন। আল মু’ঈদু- মৃত্যুর পর পুনঃসৃষ্টিকারী। যার পুনঃ সৃষ্টি, যিনি বিনা মডেলে সৃষ্টি করেন। আল মুহীউ- পুনরায় জীবিতকারী, আল মুমীতু- পুনরায় মৃত্যু দানকারী, যার পুনরায় সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে। আল হাইয়্যু- চিরঞ্জীব, আল কইয়্যূমু- স্বয়ং প্রতিষ্ঠিত, চিরস্থায়ী। আল ওয়া-জিদু- যিনি যাই চান তাই পান। আল মা-জীদু- বড় দাতা। আল ওয়া-হিদুল আহাদু- একক ও অদ্বিতীয়, যাঁর কোন শারীক নেই। আস্ সামাদু- প্রধান, প্রভু; যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন কিন্তু সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আল ক-দিরু- ক্ষমতাবান, যিনি ক্ষমতা প্রয়োগে কারো মুখাপেক্ষী নন। আল মুকতাদিরু- সকলের ওপর যাঁর ক্ষমতা রয়েছে, সার্বভৌম, যাঁর বিধান চরম। আল মুকদ্দিমু- যিনি যাকে চান নিকটে করেন এবং আগে বাড়ান। আল মুআখখিরু- যিনি যাকে চান দূরে রাখেন বা পিছনে করেন। আল আও্ওয়ালু- প্রথম, অনাদি। আল আ-খিরু- সর্বশেষ, অনন্ত। আয্ যা-হিরু- যিনি ব্যক্ত, প্রকট গুণে ও নিদর্শনে। আল বা-ত্বিনু- যিনি গুপ্ত সত্তাতে। আল ওয়া-লিয়্যু- অভিভাবক, মুরুব্বী।

আল মুতা’আ-লিয়্যু- সর্বোপরি। আল বাররু- মুহসিন, অনুগ্রহকারী। আত্ তাও্ওয়া-বু- তওবা্ কবূলকারী, যিনি অপরাধে অনুশোচনাকারীর প্রতি পুনঃঅনুগ্রহ করেন। আল মুনতাকিমু- প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল আফুব্বু- বড়ই ক্ষমাশীল। আর্ রঊফু- বড়ই দয়ালু। মালিকুল মুল্‌ক- রাজাধিরাজ, যাঁর রাজ্যে তিনি যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। যুল্ জালা-লি ওয়াল ইকর-ম- মহিমা ও সম্মানের অধিকারী। আল মুকসিত্বু- অত্যাচার দমনকারী, উৎপীড়ক থেকে উৎপীড়িতের প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল জা-মি’উ- কিয়ামতে বান্দাদের একত্রকারী অথবা সর্বগুণের অধিকারী।

আল গনিয়্যু- বেনিয়াজ, যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। আল মুগনিয়্যু- যিনি কাউকেও কারো মুখাপেক্ষী হতে বাঁচিয়ে রাখেন। আল মা-নি’উ- বিপদে বাধাদানকারী। আয্ যাররু- যিনি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখেন। আন্ না-ফি’উ- উপকারী, যিনি উপকারের ক্ষমতা রাখেন। আন্ নূরু- আলোকোজ্জ্বল, প্রভা, প্রভাকর। আল হা-দিয়ু- পথপ্রদর্শক (যারা তাঁর অনুসরণ করে তাদের)। আল বাদী’উ- অদ্বিতীয়, অনুপম অথবা যিনি বিনা আদর্শে গড়েন। আল বা-ক্বী- যিনি সর্বদা আছেন, সৃষ্টি ধ্বংসের পরেও যিনি থাকবেন। আল ওয়া-রিসু- উত্তরাধিকারী, সকল শেষ হবে আর তিনি সকলের উত্তরাধিকারী হবেন। আর্ রশীদু- কারো পরামর্শ বা জিজ্ঞাসু ছাড়া যাঁর কাজ উত্তম ও ভাল হয়। আস্ সাবূরু- বড়ই ধৈর্যশীল। (তিরমিযী, বায়হাক্বী-দা’ওয়াতুল কাবীর; তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَه هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ الْغَفَّارُ الْقَهَّارُ الْوَهَّابُ الرَّزَّاقُ الْفَتَّاحُ الْعَلِيمُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الْخَافِضُ الرَّافِعُ الْمُعِزُّ الْمُذِلُّ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ الْحَكَمُ الْعَدْلُ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ الْحَلِيمُ الْعَظِيمُ الْغَفُورُ الشَّكورُ العَلِيُّ الكَبِيرُ الحَفيظُ المُقِيتُ الْحَسِيبُ الْجَلِيلُ الْكَرِيمُ الرَّقِيبُ الْمُجِيبُ الْوَاسِعُ الْحَكِيمُ الْوَدُودُ الْمَجِيدُ الْبَاعِثُ الشَّهِيدُ الْحَقُّ الْوَكِيلُ الْقَوِيُّ الْمَتِينُ الْوَلِيُّ الْحَمِيدُ الْمُحْصِي الْمُبْدِئُ الْمُعِيدُ الْمُحْيِي المُميتُ الحَيُّ القَيُّومُ الواجِدُ الماجِدُ الواحِدُ الأحَدُ الصَّمَدُ الْقَادِرُ الْمُقْتَدِرُ الْمُقَدِّمُ الْمُؤَخِّرُ الْأَوَّلُ الْآخِرُ الظَّاهِرُ الْبَاطِنُ الْوَالِي الْمُتَعَالِي الْبَرُّ التَّوَّابُ الْمُنْتَقِمُ العَفُوُّ الرَّؤوفُ مَالِكُ الْمُلْكِ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ الْمُقْسِطُ الْجَامِعُ الْغَنِيُّ الْمُغْنِي الْمَانِعُ الضَّارُّ النَّافِعُ النُّورُ الْهَادِي الْبَدِيعُ الْبَاقِي الْوَارِثُ الرَّشِيدُ الصَّبُورُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ والبيهقيُّ فِي الدَّعواتِ الْكَبِير. وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان لله تعالى تسعة وتسعين اسما من احصاها دخل الجنة هو الله الذي لا اله هو الرحمن الرحيم الملك القدوس السلام المومن المهيمن العزيز الجبار المتكبر الخالق البارى المصور الغفار القهار الوهاب الرزاق الفتاح العليم القابض الباسط الخافض الرافع المعز المذل السميع البصير الحكم العدل اللطيف الخبير الحليم العظيم الغفور الشكور العلي الكبير الحفيظ المقيت الحسيب الجليل الكريم الرقيب المجيب الواسع الحكيم الودود المجيد الباعث الشهيد الحق الوكيل القوي المتين الولي الحميد المحصي المبدى المعيد المحيي المميت الحي القيوم الواجد الماجد الواحد الاحد الصمد القادر المقتدر المقدم الموخر الاول الاخر الظاهر الباطن الوالي المتعالي البر التواب المنتقم العفو الرووف مالك الملك ذو الجلال والاكرام المقسط الجامع الغني المغني المانع الضار النافع النور الهادي البديع الباقي الوارث الرشيد الصبور» . رواه الترمذي والبيهقي في الدعوات الكبير. وقال الترمذي: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (مَنْ أَحْصَاهَا) ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেছেন, এর অর্থ হলো যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করলো তার অর্থ অনুধাবন করলো। কোন কোন বিশিষ্ট ‘আলিম বলেন, এর অর্থ হলো একটি একটি করে গণনা করলো।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, ইমাম বুখারী (রহঃ) সহ অনেকেই বলেছেন এর অর্থ হলো, মুখস্থ করলো, এটাই অধিকাংশদের কথা। আর এটাই সঠিক।

আবূ যায়দ আল বালখী (রহঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় ‘আমল করলে জান্নাতে যাওয়া যায় এমন কথা বলেছেন। সুতরাং এখানে এরূপ ৯৯টি নাম মুখস্থ করলেই সহজভাবে জান্নাতে যাওয়ার যে কথাটি বলা হয়েছে তার সম্পর্কে একটি প্রশ্ন থেকে যায়।

এ প্রশ্নের উত্তর হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, হাদীস যেহেতু সহীহ সেহেতু তা আমরা মেনে নিব। আল্লাহর অনুগ্রহ খুবই প্রশস্ত।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)