পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ
২২৮৬-[২৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেকটা জিনিসের (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের জন্য) একটা ব্রাশ বা মাজন আছে। আর কলব বা মন পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ বা মাজন হলো আল্লাহর জিকির। আল্লাহর ’আযাব হতে মুক্তি দেয়ার জন্য আল্লাহর যিকিরের চেয়ে অধিক কার্যকর আর কোন জিনিসই নেই। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে মুজাহিদ আল্লাহর পথে প্রচন্ড বেগে তরবারির আঘাতে তা (যদি) ভেঙেও ফেলে। (বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: «لِكُلِّ شَيْءٍ صِقَالَةٌ وَصِقَالَةُ الْقُلُوبِ ذِكْرُ اللَّهِ وَمَا مِنْ شَيْءٍ أَنْجَى مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ» قَالُوا: وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: «وَلَا أَنْ يَضْرِبَ بِسَيْفِهِ حَتَّى يَنْقَطِعَ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ
ব্যাখ্যা: (لِكُلِّ شَىْءٍ) অর্থাৎ- প্রতিটি বিষয় পরিষ্কারের জন্য একটি ব্যবস্থা থাকে আর অন্তরের জং (মরিচা) পরিষ্কারের একটি মাধ্যম হলো (ذِكْرُ اللّٰهِ) তথা আল্লাহকে স্মরণ করা।
(وَصِقَالَةُ الْقُلُوبِ ذِكْرُ اللّٰهِ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেন, এ অংশটির অর্থ হলো (صدء القلوب الرين) তথা মরিচীকা পড়া অন্তরের পালিশ। যেমন- কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘কখনোই নয়, তাদের অন্তরে তাদের কৃতকর্মের জন্যই মরিচীকা পড়েছে।’’ (সূরা আল মুতাফফিফীন ৮৩ : ১৪)
অর্থাৎ- প্রবৃত্তির অনুসরণের কারণে তাদের অন্তরে মরিচীকা পড়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘‘আপনি তার দিকে লক্ষ্য করেছেন যে তার প্রবৃত্তিকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে।’’ (সূরা আল জা-সিয়াহ্ ৪৫ : ২৩)
‘আল্লামা ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) এ হাদীসটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, সীসা, রূপা ইত্যাদি জিনিসে যেমন মরিচীকা পড়ে তেমনিভাবে অন্তরেও মরিচীকা পড়ে আর এটা দূরীভূত করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে জিকির, কেননা এ জিকির অন্তরকে পরিষ্কার করে, পরিষ্কার আয়নার মতো উজ্জল করে তোলে। জিকির ছেড়ে দিলেই অন্তরে মরিচীকা পড়ে আর জিকির করলে মরিচীকা দূরীভূত হয়। আর অন্তরের মরিচীকা দু’ভাবে হয়। যথা- ১. আলস্য, ২. পাপাচার। আর এর থেকে মুক্তির মাধ্যমও দু’টি। যথা- ১. ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা), ২. জিকির।
সুতরাং আলস্য গালিব হয় তার অন্তরে মরিচীকা স্থায়ীভাবে বসে যায়। মরিচীকার পরিমাণ তার অলসতার পরিমাণ অনুপাতে হয়। আর অন্তর যখন মরিচীকা আবৃত্ত হয়ে পড়ে তখন আর তা হাজারো জানা-শুনা থাকার পরও পাপ থেকে বিরত হতে পারে না। সুতরাং ঐ মুহূর্তে সে বাতিলকে হক মনে করে আর হককে বাতিল মনে করে।