২২১২

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে

২২১২-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক লোককে কুরআন পড়তে শুনলাম। অথচ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অন্যভাবে তা পড়তে শুনেছি। আমি তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে গেলাম। তাঁকে এ খবর জানালাম। আমি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারায় বিরক্তির ভাব লক্ষ্য করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা দু’জনই শুদ্ধ পড়েছ। এ নিয়ে তোমরা কলহ বিবাদ করো না। তোমাদের আগের লোকেরা কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছেন। (বুখারী)[1]

بَابُ اِخْتِلَافِ الْقِرَاءَاتِ وَجَمْعِ الْقُرْاٰنِ

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَجُلًا قَرَأَ وَسَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ خِلَافَهَا فَجِئْتُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ فَعَرَفْتُ فِي وَجهه الْكَرَاهِيَة فَقَالَ: «كِلَاكُمَا مُحْسِنٌ فَلَا تَخْتَلِفُوا فَإِنَّ مَنْ كَانَ قبلكُمْ اخْتلفُوا فهلكوا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال: سمعت رجلا قرا وسمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقرا خلافها فجىت به النبي صلى الله عليه وسلم فاخبرته فعرفت في وجهه الكراهية فقال: «كلاكما محسن فلا تختلفوا فان من كان قبلكم اختلفوا فهلكوا» . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: কারী বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা অসন্তুষ্টির বা অপছন্দের চিহ্ন দেখা গেছে সাহাবীদের মাঝে আহলে কিতাবের মতভেদের ন্যায় বিতর্ক দেখা যাওয়ার ভয়ে। কারণ সব সাহাবী ন্যায়পরায়ণ। আর তাদের বর্ণনাও সঠিক। ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারা দু’জনের ঝগড়ার কারণে তার চেহারায় অপছন্দের ছাপ ফুটে উঠেছিল।

কুসত্বুলানী (রহঃ) বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করে যে তাদের দু’জনের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হলেও কিভাবে তাদেরকে محسن বা সঠিক বলে আখ্যায়িত করলেন। তবে উত্তরে বলা যাবে محسن এজন্য বললেন যে, ইবনু মাস্‘ঊদ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শোনার পর আবার সঠিকতা অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন এবং সেই ব্যক্তিটি ভালভাবে পড়েছে। আর উভয়ে ঝগড়া করার কারণে অপছন্দ করেছেন। কারণ তাদের উচিত ছিল প্রত্যেকের কিরাআতকে স্বীকৃতি দেয়া এবং এর কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জানতে চাওয়া।

কারী বলেন, ইবনু মাস্‘ঊদ কুরআনের বিভিন্ন পঠন পদ্ধতির বৈধতা সম্পর্কে অবগত হওয়ার আগেই এই রকম বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ইবনু মাস্‘ঊদ লোকটিকে নিয়ে আসার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করেন। কেননা তার উচিত ছিল লোকটির ব্যাপারে ভাল ধারণা করা এবং লোকটির কিরাআতের বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জানতে চাওয়া। অথবা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে যখন ‘উমার এ ধরনের বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন তখন তিনি তার ওপর ধৈর্য ধারণ করেছিলেন, কারণ তার রাগ সম্পর্কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জানা ছিল। কিন্তু ইবনু মাস্‘ঊদ -এর এত রাগ না থাকা সত্ত্বেও ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারায় অপছন্দের ছাপ ফুটে উঠেছিল।

ইবনু মালিক বলেন, লোকটির সাথে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর মতভেদের কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমন্ডলে অপছন্দের ছাপ দেখা গেছে। কারণ বিভিন্নভাবে কুরআন তিলাওয়াত জায়িয। আর কোন পদ্ধতিতে অস্বীকার করা যেন কুরআনকে অস্বীকার করা। আর এটা না জায়িয।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতদেরকে ইখতেলাফ করতে নিষেধ করেছেন। কুসতুলানী (রহঃ) لا تختلفوا এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, তোমরা এমন এখতেলাফ করো না যা তোমাদেরকে কুফরী অথবা বিদ্‘আতে নিমজ্জিত করে। যেমন স্বয়ং কুরআন সম্পর্কে মতানৈক্য করা। অথবা যাতে ফিতনার বা সন্দেহের মধ্যে মানুষ পড়ে যায় এমন ইখতেলাফ করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)