২২০৫

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)

২২০৫-[১৯] ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যের মধ্যে পূর্ণ থেমে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তিনি বলতেন, ’আলহাম্‌দু লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন’, এরপর থামতেন। তারপর বলতেন, ’আর্ রহমা-নির রহীম’, তারপর বিরতি দিতেন। (তিরমিযী। তিনি বলেছেন, এ হাদীসের সানাদ মুত্তাসিল নয়। কারণ আগের হাদীসে লায়স একে ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ হতে এবং তিনি ইয়া’লা ইবনু মামলাক হতে আর ইয়া’লা উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। [অথচ এখানে ইয়া’লা-এর উল্লেখ নেই] তাই উপরের লায়স-এর বর্ণনাটি অধিক নির্ভরযোগ্য।)[1]

وَعَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَطِّعُ قِرَاءَتَهُ يَقُولُ: الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ثُمَّ يَقِفُ ثُمَّ يَقُولُ: الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ثُمَّ يَقِفُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِمُتَّصِلٍ لِأَنَّ اللَّيْثَ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ عَنْ يَعْلَى بْنِ مَمْلَكٍ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ وَحَدِيثُ اللَّيْث أصح

وعن ابن جريج عن ابن ابي مليكة عن ام سلمة قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقطع قراءته يقول: الحمد لله رب العالمين ثم يقف ثم يقول: الرحمن الرحيم ثم يقف. رواه الترمذي وقال: ليس اسناده بمتصل لان الليث روى هذا الحديث عن ابن ابي مليكة عن يعلى بن مملك عن ام سلمة وحديث الليث اصح

ব্যাখ্যা: ইমাম বায়হাক্বী বলেছেন, প্রতি আয়াতের শেষে ওয়াকফ করা বা থামা সুন্নাত যদিও তার পরবর্তী আয়াতের সাথে এর সম্পর্ক থাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি আয়াতকে আলাদা আলাদা করে পড়তেন। ইমাম আহমাদ, আবূ দাঊদ, হাকিম প্রত্যেক আয়াতের মাথায় থেমে যেতেন যদিও তার পরবর্তী আয়াতের সাথে এর সম্পর্ক থাকত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আয়াত পড়তেন, তারপর অল্প সময় কিরাআত থেকে বিরত থাকতেন, এরপর পরের আয়াত পড়তেন। এভাবে সম্পূর্ণ সূরা পড়তেন।

কারীদের পরিভাষায় وقف হলো কিছু সময়ের জন্য শব্দ উচ্চারণ করা থেকে আওয়াজ বন্ধ করা যাতে স্বাভাবিকভাবে কিরাআত শুরু করার উদ্দেশে শ্বাস গ্রহণ করতে পারে। কিরাআত হতে বিমুখ হওয়ার উদ্দেশে নয়। আর এটা আয়াতের শেষে অথবা মাঝে হবে। কিন্তু এটা শব্দের মধ্যে এবং যা কোন রীতি সম্বলিত তাতে নয়।

কারীগণ কিরাআত শুরু ও শেষ করার প্রকারভেদ নিয়ে বিভিন্ন রকম মতভেদ প্রকাশ করেছন, ইবনুল আনবারী (রহঃ) বলেন, ওয়াকফ তিন ধরনেরঃ

১. تام (পরিপূর্ণ)  ২. حسن (ভাল)  ৩. قبيح (মন্দ)

আবার কেউ বলেন, ওয়াকফ চার প্রকার-

1. قبيح متروك 

2. تام مختار

3. كاف جائز

4. حسن مفهوم

ইবনু জাযরী (রহঃ) বলেন, ওয়াকফ এর প্রকারভেদের নির্দিষ্ট কোন সীমা বা নিয়ম-নীতি নেই। তবে তিনি এগুলোর পর্যালোচনা করে মোটামুটি একটি নিয়ম বলেছেন তা হলো যদি ওয়াকফের পরবর্তী বাক্যের সাথে এর শাব্দিক কোন সম্পর্ক থাকে অর্থগত নয় তবে এটাকে حسن বলা হয়।

জমহূর কারীর মতানুযায়ী যে সব আয়াতের শেষের সাথে পরের অংশের সম্পর্ক রয়েছে সে ক্ষেত্রে মিলিয়ে পড়া উত্তম।

ইবনুল জাযরী (রহঃ) বলেন, আয়াতকে আলাদা করার উদ্দেশ্য প্রতিটি আয়াতের শেষে থামা মুস্তাহাব। আবার কেউ বলেছেন, এটা সুন্নাত।

ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর الشعب গ্রন্থে এবং ইমাম ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) তাঁর زاد المعاد (যাদুল মা‘আদ) গ্রন্থে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ ও সুন্নাতের সর্বাধিক অনুসরণের নিয়ম হচ্ছে প্রতিটি আয়াতের শেষে থেমে যাওয়া যদিও এর পরবর্তী অংশের সাথে এর সম্পর্ক থাকে। ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি আয়াতের শেষে ওয়াকফ করতেন।

‘আল্লামা যুহরী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিরাআত আয়াত-আয়াত করে পড়তেন। আর এটাই সর্বোত্তম ওয়াক্ব্ফের স্থান যদিও পরবর্তী আয়াতের সাথে সম্পর্ক রয়েছে।

‘আল্লামা শায়খ ‘আবদুল হক দেহলভী (রহঃ) তাঁর أشعة اللمعات গ্রন্থে বলেন, এ ধরনের আয়াতকে মিলিয়ে পড়া অগ্রাধিকারযোগ্য মত। তবে আয়াতের শেষে থেমে যাওয়া ও আয়াতের প্রথম থেকে শুরু করা সুন্নাত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)