পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯৮-[১২] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার দরিদ্র মুহাজিরদের একদলের মধ্যে বসলাম। তারা নিজেদের পোশাক স্বল্পতার জন্য একে অন্যের সাথে মিশে মিশে বসেছিলেন। এ সময় একজন আমাদের সামনে কুরআন পাঠ করছিল। এ সময় হঠাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে এসে উপস্থিত হলেন এবং আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দাঁড়ালে কুরআন পাঠক চুপ হয়ে গেল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন আমাদেরকে সালাম দিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, কী করছিলে তোমরা? জবাবে আমরা বললাম, আল্লাহর কিতাব শুনছিলাম। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলার শুকর, যিনি আমার উম্মাতের মধ্যে এ ধরনের লোক সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যাদের সাথে শারীক হবার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি।
বর্ণনাকারী আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের মধ্যে বসে নিজেকে আমাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর হাত দিয়ে (ইশারা করে) বললেন, তোমরা গোল হয়ে বসো। (বর্ণনাকারী বলেন এ কথা শুনে) তারা গোল হয়ে বসলেন। তাদের চেহারা রসূলের মুখোমুখি হয়ে গেল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে গরীব মুহাজিরের দল! তোমরা কিয়ামতের দিন পূর্ণ জ্যোতির সুখবর গ্রহণ কর। তোমরা ধনীদের অর্ধেক দিন পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এ অর্ধেক দিনের (পরিমাণ) হলো পাঁচশ বছর। (আবূ দাঊদ)[1]
عَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: جَلَست فِي عِصَابَةٍ مِنْ ضُعَفَاءِ الْمُهَاجِرِينَ وَإِنَّ بَعْضَهُمْ لِيَسْتَتِرُ بِبَعْضٍ مِنَ الْعُرْيِ وَقَارِئٌ يَقْرَأُ عَلَيْنَا إِذْ جَاءَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَامَ عَلَيْنَا فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَكَتَ الْقَارِئُ فَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «مَا كُنْتُمْ تَصْنَعُونَ؟» قُلْنَا: كُنَّا نَسْتَمِعُ إِلَى كتاب الله قَالَ فَقَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ أُمِرْتُ أَنْ أَصْبِرَ نَفْسِي مَعَهُمْ» . قَالَ فَجَلَسَ وَسَطَنَا لِيَعْدِلَ بِنَفْسِهِ فِينَا ثُمَّ قَالَ بِيَدِهِ هَكَذَا فَتَحَلَّقُوا وَبَرَزَتْ وُجُوهُهُمْ لَهُ فَقَالَ: «أَبْشِرُوا يَا مَعْشَرَ صَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَاءِ النَّاسِ بِنصْف يَوْم وَذَاكَ خَمْسمِائَة سنة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কুরআন পাঠের সময় সালাম প্রদান করা মাকরূহ। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের পাঠক চুপ হওয়ার পর সালাম করেছেন। দীনী আলোচনা মাজলিসের শার‘ঈ পদ্ধতি হলো গোলাকার হয়ে বসা যেমন আলোচ্য হাদীসে পাওয়া গেল। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে এমনভাবে উপবিষ্ট হলেন যেন সবাই তার নিকট সমান। এভাবে দীনী আলোচনা করলে আল্লাহ নূরকে পরিপূর্ণ করে দেন, এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, نُورُهُمْ يَسْعٰى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا ‘‘(সেদিনের ভয়াবহ অন্ধকার থেকে মু’মিনদের রক্ষার ব্যবস্থা হিসেবে) তাদের নূর দৌড়াতে থাকবে তাদের সামনে আর তাদের ডান পাশে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের নূরকে আমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দাও’’- (সূরা আত্ তাহরীম ৬৬ : ৮)। গরীব লোকেরা ধনীদের অর্ধ দিবস তথা পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেননা কুরআনে এসেছে وَإِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ ‘‘তোমার প্রতিপালকের একদিন তোমাদের গণনায় এক হাজার বছরের সমান’’- (সূরা আল হজ ২২ : ৪৭)। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রিওয়ায়াত রয়েছে, যেমন কোন হাদীসে ৪০ বছর পূর্বের কথা বলা হয়েছে। যদিও এর বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, তবে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অনেক দিন পূর্বে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবার কেউ সমন্বয় এভাবে করেছেন যে, ব্যক্তি হিসেবে দিনের সংখ্যা কম বেশি হবে। আর এটা এজন্য যে, ধনীরা আল্লাহর সামনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। বলা হবে কিভাবে কোথা হতে সম্পদ অর্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে।