২১৬২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১৬২-[৫৪] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুহফাহ্ ও আব্ওয়া (নামক স্থানের) মধ্যবর্তী জায়গায় চলছিলাম। এ সময় প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকার আমাদেরকে ঘিরে ফেলল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ’’কুল আ’ঊযু বিরাব্বিল ফালাক’’ ও সূরা ’’কুল আ’ঊযু বিরাব্বিন্‌না-স’’ পড়ে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে ’উকবাহ্! এ দু’টি সূরা দ্বারা আল্লাহর আশ্রয় চাও। কারণ এ দু’ সূরার মতো অন্য কোন সূরা দিয়ে কোন প্রার্থনাকারীই আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেনি। (আবূ দাঊদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: بَيْنَا أَنَا سير مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ الْجُحْفَةِ وَالْأَبْوَاءِ إِذْ غَشِيَتْنَا رِيحٌ وَظُلْمَةٌ شَدِيدَةٌ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَوِّذُ ب (أعوذ بِرَبّ الفلق)
و (أعوذ بِرَبِّ النَّاسِ)
وَيَقُولُ: «يَا عُقْبَةُ تَعَوَّذْ بِهِمَا فَمَا تَعَوَّذَ مُتَعَوِّذٌ بِمِثْلِهِمَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن عقبة بن عامر قال: بينا انا سير مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بين الجحفة والابواء اذ غشيتنا ريح وظلمة شديدة فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم يعوذ ب (اعوذ برب الفلق) و (اعوذ برب الناس) ويقول: «يا عقبة تعوذ بهما فما تعوذ متعوذ بمثلهما» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: ‘জুহফাহ্’ মক্কা ও লোহিত সাগরের মাঝের একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রাম। মক্কা থেকে পাঁচ ছয় মঞ্জীল দূরে অবস্থিত। ‘মুহাল্লা’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে জুহফাহ্ মক্কা থেকে বিরাশি মাইল দূরে একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। এখানে ইয়াসরীব থেকে বিতাড়িত আমলিকা সম্প্রদায়ের এক সময়ের আবাসভূমি ছিল। ‘আদ্ জাতির একটি শাখা ‘উবায়ল’-দের সাথে এদের যুদ্ধ হয়, এ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা ইয়াসরীব থেকে বিতাড়িত হয়ে জুহফায় বসতি স্থাপন করেন।

এ স্থানের পূর্ব নাম ছিল মাহী‘আহ্ অথবা মা‘ঈশাহ্। জুহফাহ্ শব্দের অর্থ হলো মহামারী। একবার এই মা‘ঈশাহ্ গ্রামে প্রবল বন্যা দেখা দেয়, এতে মহামারী শুরু হয় সেই থেকে এ স্থানের নাম হয় জুহফাহ্ বা মহামারী কবলিত এলাকা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার জ্বরকে জুহ্ফায় চলে যাওয়ার জন্য দু‘আ করেছেন। জুহফায় কেউ গেলে সে জ্বরে আক্রান্ত হয়। এটা প্রাচীন সিরিয়াবাসীদের মীকাত বা ইহরাম বাঁধার স্থান। মিসর এবং পশ্চিমাদের মীকাতও এটাই। বর্তমান মিসরীগণ এখান থেকেই ইহরাম বাঁধে। রাবেগ জুহফার নিকটস্থ একটি স্থান, উভয়ের মাঝে দূরত্ব ৬/৭ মাইল মাত্র। আর আব্ওয়া হলো একটি পাহাড় যা মক্কা ও মদীনার মাঝখানে অবস্থিত। এখানে একটি শহর গড়ে উঠেছে ঐ পাহাড়কে কেন্দ্র করেই ঐ শহরের নামকরণ করা হয়েছে আব্ওয়া। এখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুহতারামাহ্ জননী আমীনাহ্ ইন্তিকাল করেছেন। জুহফাহ্ এবং আব্ওয়া-এর মাঝের দূরত্ব বিশ থেকে ত্রিশ মাইল। এখানেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীষণ অন্ধকার এবং ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়েছিলেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূরা আল ফালাক এবং সূরা আন্ নাস পাঠ করে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

الفلق ‘‘ফালাক’’ শব্দের অর্থ হলো সকাল। কেউ বলেছেনঃ এর অর্থ হলো- الخلق ‘‘সৃষ্টি’’। কেউ বলেছেনঃ السجين ‘‘জেলখানা, গারদখানা (অথবা জাহান্নামের একটি রূপক নাম) অথবা জাহান্নামের একটি গর্ত। কেউ কেউ ফালাক-এর অর্থ করেছেন, প্রত্যেক বস্ত্ত ফেটে কোন কিছু বের হওয়াকে। যেমন- বীজ ফেটে অঙ্কুর বের হয়, অনুরূপ রাতের অন্ধকার ফেটে প্রভাতের আলো বের হওয়াকে ফালাক বলা হয়। সুতরাং ফালাক-এর অর্থ হলো প্রভাতকাল। আশ্রয় প্রার্থনার উদ্দেশ্য হলো- ভয় থেকে নিরাপত্তায় আসা, নানা ক্ষতিকর প্রাণীর অনিষ্টতা থেকে, দুশ্চিন্তা থেকে নিশ্চিন্ত হওয়া, নিরাপদ হওয়া। যেহেতু সকাল বা প্রভাত হলে অন্ধকারের নানা ক্ষতিকর প্রাণীর ক্ষতির আশংকা ও অন্যান্য ক্ষতির আশংকা বিদূরিত হয়। সুতরাং সে প্রভাতের রবের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।

সূরা আন্ নাসও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ করলেন, এ সূরাটিও একই উদ্দেশ্য অবতীর্ণ ও ব্যবহার হয়।

এ দু’টি সূরা সৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য সবচেয়ে উত্তম সূরা। এ জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন, তখন দু’জন মালাক (ফেরেশতা) পাঠিয়ে আল্লাহ তা‘আলা তাকে শিক্ষা দেন যে, এ দু’টি সূরা পড়ে তার ওপর আপতিত ও আবিষ্ট ঐ যাদুর কার্যক্রম এবং প্রভাবকে ধ্বংস করতে হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করলেন, ফলে তার ওপরের যাদুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেল এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৮: কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)