পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উত্তম সদাক্বার বর্ণনা
১৯৪১-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ কে তা বলব না? সে হলো ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কি তোমাদেরকে ঐ ব্যক্তির মর্যাদার কাছাকাছি লোকের কথা জানাব? ওই ব্যক্তি সেই যে তার কিছু বকরী নিয়ে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে আল্লাহর হক আদায় করতে থাকে। আমি কী তোমাদেরকে খারাপ লোক সম্পর্কে জানাব? সে ঐ ব্যক্তি যার কাছে আল্লাহর কসম দিয়ে দিয়ে চাওয়া হয়। কিন্তু সে তাকে কিছুই দেয় না। (তিরমিযী, নাসায়ী, দারিমী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِخَيْرِ النَّاسِ؟ رَجُلٌ مُمْسِكٌ بِعِنَانِ فَرَسِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ. أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِالَّذِي يَتْلُوهُ؟ رَجُلٌ مُعْتَزِلٌ فِي غُنَيْمَةٍ لَهُ يُؤَدِّي حَقَّ اللَّهِ فِيهَا. أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِشَرِّ النَّاسِ
رَجُلٌ يُسْأَلُ بِاللَّهِ وَلَا يُعْطِي بِهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمِيّ
ব্যাখ্যা: মু‘তাযিল (مُعْتَزِلٌ) ‘‘পৃথক ব্যক্তি’’ বলতে লোকালয় থেকে দূরে কোন খোলা প্রান্তর কিংবা মরুভূমিতে বসবাসরত ব্যক্তিকে বুঝাচ্ছে। সেখানে সে আল্লাহর হক আদায় করে। মালিক-এর বর্ণনায় রয়েছে, সে সেথায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে, যাকাত প্রদান করে, এক আল্লাহর ‘ইবাদাত করে এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করে না। আল-বাজী বলেন, এ ব্যক্তির অবস্থান মুজাহিদের অবস্থানের পরেই। কারণ এ ব্যক্তি ফরয ‘ইবাদাতসমূহ আদায় করে, ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয় এবং সকল রকম রিয়া (লোক দেখানো ‘আমল) ও সুম্‘আহ্ (লোক শুনানো ‘আমল) থেকে দূরে থাকে। যেহেতু সে গোপনে, লোকচক্ষুর আড়ালে ‘ইবাদাত করে সেহেতু তার কোন প্রসিদ্ধি হয় না। আর ঐ ব্যক্তি কাউকে কষ্টও দেয় না। তার কথা কেউ বেশি স্মরণও করে না। তবুও তার মর্যাদা মুজাহিদের মর্যাদার সমপর্যায়ে নয়। কারণ মুজাহিদ সকল মুসলিমের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কাফিরদের সাথে জিহাদ করে যতক্ষণ না তারা ইসলামে প্রবেশ করে। এতে করে তার কর্মফলের উপকারিতা অন্যদের মাঝেও পৌঁছে অপরদিকে লোকালয় থেকে পৃথক ব্যক্তির কর্মফল থেকে অন্যরা সুফল ভোগ করতে পারে না।
সহীহুল বুখারীতে আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে দেখা যায়, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়, হে আল্লাহর রসূল! সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ মু’মিন ব্যক্তি, যে তার জান ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। সাহাবীগণ আবার জিজ্ঞেস করলেন, তারপর (সর্বোত্তম ব্যক্তি) কে? উত্তরে তিনি বলেন, ঐ মু’মিন, যে জনপদের মধ্য থেকে কোন জনপদে অবস্থান করে আল্লাহর ব্যাপারে তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং জনগণ তার থেকে কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয় না।
আলোচ্য হাদীস দ্বারা জনবিচ্ছিন্ন ও একাকী থাকার ফাযীলাত প্রমাণিত হয়। কারণ এ ব্যক্তি গীবত, অযথা কথা বা এ জাতীয় খারাপ বিষয়াবলী থেকে মুক্ত থাকে।
কিন্তু জমহূর (অধিকাংশ) ‘আলিমগণ মনে করেন, এ ফাযীলাত ঐ ব্যক্তি তখন পাবেন যখন ফিত্নাহ্ (ফিতনা) ছড়িয়ে পড়বে। এ প্রসঙ্গে আত্ তিরমিযীতে মারফূ' সানাদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে মু’মিন ব্যক্তি জনগণের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের দেয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তি হতে বেশি সাওয়াব পাবেন যে মু’মিন ব্যক্তি মানুষের সাথে মেলামেশা করে না এবং মানুষের দেয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে না।’’
ইমাম শাফি‘ঈসহ অধিকাংশ ‘আলিম-এর মতে ফিতনাহ থেকে নিরাপদ থাকার আশা করার শর্তে জনপদে মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকা সর্বোত্তম। সংসারত্যাগীদের কিছু দলের মতে নির্জনবাস সর্বোত্তম। তারা এ হাদীস দ্বারাই তাদের মতের স্বপক্ষে দলীল পেশ করে। জমহূর ‘আলিমগণ সন্ন্যাসীদের মতের জবাবে বলেন, ফিতনাহ্ ও যুদ্ধের সময় নির্জনবাস বিধেয় এবং তখন বৈধ যখন মানুষ নিরাপদবোধ করে না কিংবা মানুষের নির্যাতনে ধৈর্যধারণ করতে পারে না। নাবীগণ, অধিকাংশ সাহাবী, তাবিঈ, ‘আলিম, জাহিদ, জুমু‘আহ্, জামা‘আত, জানাযা, রোগীর সেবায়, যিকিরের (জিকিরের) বৈঠকে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে জনগণের সাথে মেলামেশায় উপকারিতা লাভ করেছেন।