১৯৩৪

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - উত্তম সদাক্বার বর্ণনা

১৯৩৪-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে রমণীগণ! তোমরা দান খয়রাত করো। তা তোমাদের অলংকারাদি হতে। যায়নাব বলেন, (এ কথা শুনে) আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ-এর কাছে এলাম। তাঁকে বললাম, আপনি রিক্তহস্ত মানুষ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে বলেছেন। তাই আপনি তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জেনে আসুন (আমি যদি আপনাকে ও আপনার সন্তানদের জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে খরচ করি তাহলে তা আদায় হবে কিনা?) যদি হয়, তাহলে আমি আপনাকেই সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিয়ে দেব। আর না হলে আপনি ছাড়া অন্য কাউকে দেব। যায়নাব বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) (এ কথা শুনে) আমাকে বললেন, ’’তুমিই যাও’’। তাই আমি নিজেই তাঁর কাছে গেলাম। আমি গিয়ে দেখলাম, তাঁর ঘরের দরজায় আনসারের এক মহিলাও দাঁড়িয়ে আছে। আমার ও তার প্রয়োজন একই।

যায়নাব বলেন, যেহেতু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যক্তিত্বের কারণে (তাঁর নিকট যাবার সাহস আমাদের হলো না), তাই বিলাল (রাঃ)আমাদের কাছে এলে আমরা তাঁকে বললাম, আপনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে খবর দিন যে, দু’জন মহিলা দরজায় আপনার কাছ থেকে জানতে চায়, তারা যদি তাদের (গরীব) স্বামী, অথবা তাদের পোষ্য ইয়াতীম সন্তানদেরকে দান-খয়রাত করে তাতে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) আদায় হবে কিনা? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমাদের পরিচয় দেবেন না। সে মতে বিলাল (রাঃ)রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন।

(এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা কারা? বিলাল (রাঃ)বললেন, একজন আনসার মহিলা, অপরজন যায়নাব। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ যায়নাব? বিলাল বললেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদের স্ত্রী। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদের জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। এক গুণ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার হক আদায়ের জন্য, আর এক গুণ দান-খয়রাতের জন্য। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ أَفْضَلِ الصَّدَقَةِ

وَعَنْ زَيْنَبَ امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَصَدَّقْنَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ» قَالَتْ فَرَجَعْتُ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ فَقُلْتُ إِنَّكَ رَجُلٌ خَفِيفُ ذَاتِ الْيَدِ وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَمَرَنَا بِالصَّدَقَةِ فَأْتِهِ فَاسْأَلْهُ فَإِنْ كَانَ ذَلِك يَجْزِي عني وَإِلَّا صرفتها إِلَى غَيْركُمْ قَالَت فَقَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بَلِ ائْتِيهِ أَنْتِ قَالَتْ فَانْطَلَقْتُ فَإِذَا امْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ بِبَابِ رَسُولِ الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم حَاجَتي حَاجَتهَا قَالَتْ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قد ألقيت عَلَيْهِ المهابة. فَقَالَت فَخَرَجَ عَلَيْنَا بِلَالٌ فَقُلْنَا لَهُ ائْتِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ أَنَّ امْرَأتَيْنِ بِالْبَابِ تسألانك أتجزئ الصَّدَقَة عَنْهُمَا على أَزْوَاجِهِمَا وَعَلَى أَيْتَامٍ فِي حُجُورِهِمَا وَلَا تُخْبِرْهُ مَنْ نَحْنُ. قَالَتْ فَدَخَلَ بِلَالٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَهُ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ هما» . فَقَالَ امْرَأَة من الْأَنْصَار وَزَيْنَب فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّ الزَّيَانِبِ» . قَالَ امْرَأَةُ عَبْدِ اللَّهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَهما أَجْرَانِ أجر الْقَرَابَة وَأجر الصَّدَقَة» . وَاللَّفْظ لمُسلم

وعن زينب امراة عبد الله بن مسعود قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «تصدقن يا معشر النساء ولو من حليكن» قالت فرجعت الى عبد الله فقلت انك رجل خفيف ذات اليد وان رسول الله صلى الله عليه وسلم قد امرنا بالصدقة فاته فاساله فان كان ذلك يجزي عني والا صرفتها الى غيركم قالت فقال لي عبد الله بل اىتيه انت قالت فانطلقت فاذا امراة من الانصار بباب رسول الله صلى الله عليه وسلم حاجتي حاجتها قالت وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم قد القيت عليه المهابة. فقالت فخرج علينا بلال فقلنا له اىت رسول الله صلى الله عليه وسلم فاخبره ان امراتين بالباب تسالانك اتجزى الصدقة عنهما على ازواجهما وعلى ايتام في حجورهما ولا تخبره من نحن. قالت فدخل بلال على رسول الله صلى الله عليه وسلم فساله فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من هما» . فقال امراة من الانصار وزينب فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اي الزيانب» . قال امراة عبد الله فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لهما اجران اجر القرابة واجر الصدقة» . واللفظ لمسلم

ব্যাখ্যা: আল্ মাহা-বাহ্ (المهابة) অর্থ হলো ভয়, ভীতি, সম্মান, ভক্তি, শ্রদ্ধা ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন ভয়ের বা শ্রদ্ধার চেহারা বা অবস্থা দিয়েছিলেন যার কারণে মানুষেরা তাকে ভয় করত এবং শ্রদ্ধা করত। এ কারণেই তার নিকট (অনুমতি ছাড়া বা সহসা) প্রবেশের সাহস সাধারণত কেউ দেখাত না। ত্বীবী বলেন, এ কারণেই সাহাবীগণ যখন তাঁর মাজলিসে বসতেন তখন এতটাই নীরব ও সুশৃঙ্খল থাকতেন যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসা আছে। নড়াচড়া করলেই উড়ে যাবে। এটা ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আল্লাহর সম্মানের নিদর্শন।

হাদীসের এক পর্যায়ে ঐ মহিলা দু’জনের সাথে বিলাল (রাঃ)-এর দেখা হলে তারা তাকে বলেছিল যে, সে যেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তাদের ব্যাপারটি বলার সময় তারা কারা তা না বলে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিলাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তাদের পরিচয় বলেছেন। এর কারণ হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট ঐ দু’ মহিলার পরিচয় জানতে চাইলে বিলাল (রাঃ) তাদের পরিচয় দেন, বিশেষ করে একজনের নাম উল্লেখ করেছেন। ঐ মহিলার নিষেধ করা সত্ত্বেও বিলাল (রাঃ) এ জন্যই বললেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কিছু জানতে চান তা তাকে জানানো আবশ্যক। তাই বিলাল (রাঃ) মহিলাদের অনুরোধ রাখতে পারেননি।

ইমাম শাফি‘ঈ, সাওরী, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদ এবং মালিক ও আহমাদ (রহঃ)-এর একটি মত অনুযায়ী এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিজ স্বামীকে যাকাত দেয়া স্ত্রীর জন্য বৈধ। ইমাম আবূ হানীফাহ্, মালিক ও আহমাদের এক মত অনুযায়ী এরূপ করা বৈধ নয়। (লেখক বলেন,) আমার মত হচ্ছে স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারে, এটা বৈধ। কারণ যে সকল মুসলিমদের যাকাত দেয়া যায় স্বামীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। স্বামীকে যাকাত দিতে নিষেধাজ্ঞাপক কোন আয়াত বা হাদীস নেই। এমনকি কোন ইজমা বা বিশুদ্ধ ক্বিয়াসও নেই। ইমাম আশ্ শাওকানী বলেন, কেউ যদি স্বামীকে যাকাত দেয়া অবৈধ বলে তাহলে তাকে নিষেধাজ্ঞার দলীল পেশ করতে হবে। ‘আলিমগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, স্বামী তার স্ত্রীকে যাকাত দিতে পারবে না। এটা অবৈধ। কেননা স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর ন্যস্ত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة)