পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব জিনিসের যাকাত দিতে হয়
১৭৯৪-[১] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াসাকের কম খেজুর যাকাত থাকলে ওয়াজিব হয় না। পাঁচ উকিয়ার কম রূপায় যাকাত বাধ্যতামূলক নয়। কিংবা পাঁচটির কম উট থাকলেও যাকাত ওয়াজিব হয় না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يَجِبُ فِيْهِ الزَّكَاةُ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنَ التَّمْرِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنَ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ من الْإِبِل صَدَقَة»
ব্যাখ্যা: পাঁচ ওয়াসাক্বের কম খেজুরে যাকাত ফরয হয় না। পুরা পাঁচ ওয়াসাক্ব বা বেশী হলে উক্ত খেজুরে যাকাত ফরয হয়। ষাট সা'-এ এক ওয়াসাক্ব হয়। আর পাঁচ ওয়াসাকে তিনশত সা' হয়। আর সা'-এর পরিমাণ আড়াই কেজি। পাঁচ ওয়াসাকে ২০ মণ হয়।
আর পাঁচ উটের কমে যাকাত নেই। চার মুদে এক সা' হয়। মুদ এক রিতিল ও এক তৃতীয়াংশ রিতিলে হয়। সুতরাং এক পাঁচ রিতিল ও এক তৃতীয় রিতিলে হয়। আধা সেরে এক রিতিল হয়। যার পরিমাণ একশত ২৮ দিরহাম, আর প্রত্যেক দশক সাত মিসকাল।
নিশ্চয়ই হাদীসটি যে সব সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয় সেগুলোর নিসাব বর্ণনার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক হাদীস। যেসব সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয় এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, তিন প্রকার সম্পদে যাকাত দিতে হবে।
১. শস্যাদি, ২. নগদ অর্থ বা মুদ্রা, ও ৩. চতুষ্পদ জন্তু।
আর ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার প্রকার সম্পদে যাকাত নির্ধারণ করেছেন। যথাঃ
১. শস্যাদি, ২. চতুষ্পদ জন্তু, তথা উট, গরু, ছাগল, ৩. স্বর্ণ- রৌপ্য ও ৪. ব্যবসায় সম্পদ।
অত্র হাদীসে তিন প্রকার সম্পদের যাকাতের নিসাব বিবৃত হয়েছে।
প্রথম প্রকারঃ শস্যাদি ও ফলমূল। এর যাকাতে নিসাব হল তা পাঁচ ওয়াসাক্ব পরিমাণ হতে হবে। আর পাঁচ ওয়াসাক্বের সমান প্রায় ঊনিশ মণের মতো।
এটিই সকল ‘উলামাদের অভিমত। শুধুমাত্র ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ব্যতীত। তার মতে জমিন থেকে উদগত ফসলের ক্ষেত্রে নিসাব শর্তটি প্রযোজ্য নয়। বরং এক্ষেত্রে উশর তথা এক-দশমাংশ এবং নিসফে উশর প্রযোজ্য যেমনটি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে যে, যে সকল ফসল আসমানের বৃষ্টি, ঝরণা বা নহরের বৃষ্টি দ্বারা এবং নালার পাশের ভূমিতে যাতে সেচ প্রয়োজন হয় না উৎপন্ন হয় তাতে এক দশমাংশ। আর যে সকল ফসল সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাতে নিসফে উশর আবশ্যক। এ হাদীসের আলোকে তিনি তার মতটি ব্যক্ত করেছেন। তবে সঠিক অভিমত হল অধিকাংশ উলামাগণ যেটি পোষণ করেছেন তথা যে কোন ধরনের জমিন থেকে উৎপাদিত ফসল, শস্যাদি এবং ফলমূলের যাকাতের ক্ষেত্রে নেসাব অবশ্যই শর্ত। আর তা হল পাঁচ ওয়াসাক্ব। এক্ষেত্রে নিসাবের হাদীস এবং উশরের হাদীসের মাঝে সমন্নয় হল নিসাব বা নিসাবের অধিক পরিমাণ ফসল উশর বা নিসফে উশর প্রযোজ্য হবে। কিন্তু নিসাবের কম ফসলে কোন প্রকার যাকাত আবশ্যক হবে না। আর শাক সবজি এবং কিছু ফলমূলের ক্ষেত্রে যাকাত ওয়াজিব নয়।
দ্বিতীয় প্রকারঃ নগদ অর্থ বা মুদ্রা তথা রৌপ্য ও স্বর্ণ। রৌপ্যের যাকাতে নিসাব হল পাঁচ উকিয়্যাহ্। এক উক্বিয়্যাহ্ সমান চল্লিশ দিরহাম। আর পাঁচ উক্বিয়্যাহ্ সমান দুইশত দিরহাম। অর্থাৎ কারো অধিকারে দুইশত দিরহাম বা তার অধিক দিরহাম থাকেল তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। উপমহাদেশে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে বায়ান্ন তোলা। (বর্তমান মুদ্রার ক্ষেত্রে দিরহামের মূল্যের অনুপাতে যাকাতের নিসাব নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ দুইশত দিরহামের যে বাজার মূল্য হয় তার উপর নির্ভর করে কাগজী মুদ্রার নিসাব নির্ধারিত হবে। আর স্বর্ণের যাকাতের নিসাবের ক্ষেত্রে যতগুলো হাদীস এসেছে তার সবগুলোই দুর্বল শুধুমাত্র আবু দাঊদে বর্ণিত ‘আলী (রাঃ)-এর হাদীসটি ব্যতীত, সেটিকে ইমাম নাবাবী, হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী সহ কেউ কেউ হাসান বলেছেন। আবার কেউ কেউ তা দুর্বলও বলেছেন।
হাদীসটি হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি দুইশত দিরহামের মালিক হবে এবং তাতে একবছর অতিবাহিত হবে তখন তাতে পাচ দিরহাম ওয়াজিব হবে। আর যখন তুমি বিশ মিসক্বাল স্বর্ণ মুদ্রার মালিক হবে তখন তাতে তুমি বিশ দিনার আবশ্যক হবে। এ হাদীসটি যদিও দুর্বল হয় তারপরেও উম্মাতের উলামাগণ একমত পোষণ করেছেন যে, স্বর্ণ মুদ্রার যাকাতে নিসাব হল কুড়ি মিসক্বাল যা উপমহাদেশের হিসেবে প্রায় সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ।
তৃতীয় প্রকারঃ উট। উটের যাকাতের নিসাব হল পাঁচটি উট। অর্থাৎ কারো যদি পাঁচটির কম উট থাকে তাহলে তাকে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। আর পাঁচটি উট থাকলে একটি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
বিঃদ্রঃ জাহিলিয়্যাতের যুগে কতগুলো পরিমাপ ছিল। অতঃপর ইসলামের আগমন ঘটলে সেগুলোকে আগের অবস্থায় স্থির রাখা হয়। ওজনগুলো হল :
১. أُوْقِيَّةُ (উক্বিয়্যাহ্) : যার পরিমাণ চল্লিশ দিরহাম।
২. رِطْلٌ (রিতল) : যার সমান কারো উক্বিয়্যাহ্ তথা চারশত আশি দিরহাম।
৩. نَشُّ (নাশ) : যার পরিমাণ বিশ দিরহাম।
৪. نَوَاةٌ (নাওয়া-ত) : যার পরিমাণ পাঁচ দিরহাম।
৫. مِثْقَالُ (মিসক্বা-ল) : যার পরিমাণ এক হাররা ব্যতীত বাইশ ক্বিরাত।
৬. دِرْهَمُ (দিরহাম) : যার পরিমাণ পনের ক্বিরাত।