১৬৬৫

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা

১৬৬৫-[২০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শাহীদদের দু’ দু’জনকে এক কাপড়ে জমা করেন। তারপর বলেন, কুরআন মাজীদ এদের কারো বেশী মুখস্থ ছিল? এরপর দু’জনের যার বেশী কুরআন মুখস্থ আছে বলে ইশারা করা হয়েছে, তাকে আগে কবরে রাখেন এবং বলেন, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমি এদের জন্য সাক্ষ্য দিব। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে দাফন করার নির্দেশ দেন। তাদের জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)ও আদায় করেননি গোসলও দেয়া হয়নি। (বুখারী)[1]

الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يجمع بَين الرجلَيْن فِي قَتْلَى أُحُدٍ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ ثُمَّ يَقُولُ: «أَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِلْقُرْآنِ؟» فَإِذَا أُشِيرَ لَهُ إِلَى أَحَدِهِمَا قَدَّمَهُ فِي اللَّحْدِ وَقَالَ: «أَنَا شَهِيدٌ عَلَى هَؤُلَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . وَأَمَرَ بِدَفْنِهِمْ بِدِمَائِهِمْ وَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُغَسَّلُوا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يجمع بين الرجلين في قتلى احد في ثوب واحد ثم يقول: «ايهم اكثر اخذا للقران؟» فاذا اشير له الى احدهما قدمه في اللحد وقال: «انا شهيد على هولاء يوم القيامة» . وامر بدفنهم بدماىهم ولم يصل عليهم ولم يغسلوا. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: উহুদের শাহীদানদের দু’জনকে এক কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। এটা অনিবার্য কারণেই করা হয়েছিল। প্রশ্ন হলো দু’জনকে পর্দাহীনভাবে এক কাপড়ে কাফন দেয়া ঠিক নয় এতে দু’জনের শরীর লাগালাগি হয়ে যায়। কিন্তু হাদীসের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিলে এ প্রশ্ন রদ হয়ে যায়। কেননা এক কাপড় দেয়ার অর্থ এই নয় যে, পর্দাবিহীন দু’জনের শরীর একত্রে লাগালাগি হয়ে গিয়েছিল, কারণ শাহীদদের তো পরনের রক্তমাখা কাপড় খোলা হয় না, বরং পরনের কাপড়সহই কাফন দিতে হয়, সুতরাং পরস্পর শরীর লাগালাগির প্রশ্নই আসে না।

হতে পারে শাহীদের পরনের কাপড়ের উপর দিয়ে প্রতি দু’জনকে একটি করে চাদর বহিরাবরণী দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল, অথবা একটি লম্বা চাদর দু’ টুকরা করে প্রতি দু’জনকে ঢেকে দেয়া হয়েছিল সেটাই বর্ণনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে দু’জনকে এক চাদরে কাফন দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি অনিবার্য প্রয়োজনে এটা জায়িয। প্রয়োজনে এক কাপড়ে দু’জনকে কাফন দেয়ার মতই এক ক্ববরেও দু’জনকে রাখা জায়িয। এ ক্ষেত্রে দু’জনের মধ্যে যার কুরআনের জ্ঞান বেশী হবে তাকেই আগে ক্ববরে রাখতে হবে এবং ক্বিবলার দিকে রাখতে হবে। এটাই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মর্যাদার কারণে।

ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য সাক্ষ্য দিবেন, এটাও শাহীদদের সম্মান ও মর্যাদার কারণে।

এখানে জানা গেল যে, কাফিরদের সাথে যুদ্ধে নিহত শাহীদদের গোসল এবং জানাযাহ্ কোনটিই দিতে হবে না। এর প্রমাণে অনেক হাদীস রয়েছে। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক্ব প্রমুখ ইমামগণ এ মতই অবলম্বন করেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) এবং অন্য কতিপয় ‘আলিম সাধারণ মৃত্যুদের মতই শাহীদদেরও গোসল-জানাযার কথা বলেছেন। তিনি ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির বলেনঃ

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শাহীদদের জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। শাফি‘ঈদের পক্ষ থেকে এর প্রতিউত্তরে বলা হয়েছেঃ এ সালাতের অর্থ (প্রচলিত) সালাত নয় বরং দু‘আ ইস্তিগফার। ইমাম নাবাবীও বলেন, সালাতের অর্থ এখানে দু‘আ। মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে দু‘আর অর্থই উপযুক্ত। ‘আমির ইয়ামানী বলেনঃ সালাত যে এখানে দু‘আর অর্থে এসেছে তার প্রমাণ হলো এ সালাতের জন্য তিনি সকলকে ডেকে জামা‘আতবদ্ধ করেননি যেমনটি তিনি নাজাশী বাদশাহর জানাযার ক্ষেত্রে করেছিলেন। অথচ জামা‘আতের সাথে জানাযার নামায আদায় করা অকাট্যভাবেই উত্তম। আর উহুদের শাহীদগণ তো শ্রেষ্ঠ মানুষই ছিলেন, কিভাবে এ শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোর জানাযাহ্ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী আদায় করলেন? আরো কথা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ক্ববরের উপর একাকী জানাযাহ্ পড়ার কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।

শাহীদদের গোসল না দেয়ার হিকমাত হলো এই যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন ঐ ক্ষত ও রক্ত থেকে মেশক আম্বারের ন্যায় ঘ্রাণ বের হতে থাকবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز)