পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৬২-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (একবার) এক জানাযায় গেলেন। সেখানে তারা মৃতের প্রশংসা করতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। (ঠিক) এভাবে তারা আর এক জানাযায় গেলেন সেখানে তারা তার বদনাম করতে লাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুনে বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। এ কথা শুনে ’উমার (রাঃ) জানতে চাইলেন। কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? (হে আল্লাহর রসূল!) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা যে ব্যক্তির প্রশংসা করেছ, তার জন্য জান্নাতপ্রাপ্তি ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর যার বদনাম করেছ, তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা জমিনে আল্লাহর সাক্ষী। (বুখারী, মুসলিম; অন্য আর এক বর্ণনার ভাষা হলো তিনি বলেছেন, মু’মিন আল্লাহ তা’আলার সাক্ষী।)[1]
الْمَشْيُ بِالْجَنَازَةِ وَالصَّلَاةُ عَلَيْهَا
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: مَرُّوا بِجَنَازَةٍ فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَجَبَتْ» ثُمَّ مَرُّوا بِأُخْرَى فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا شَرًّا. فَقَالَ: «وَجَبَتْ» فَقَالَ عُمَرُ: مَا وَجَبَتْ؟ فَقَالَ: «هَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْرًا فَوَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَهَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرًّا فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ أَنْتُم شُهَدَاء الله فِي الأَرْض» . وَفِي رِوَايَةٍ: «الْمُؤْمِنُونَ شُهَدَاءُ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ»
ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, اَلْوُجُوْبُ (উজূব) দ্বারা উদ্দেশ্য الثبوت সাব্যস্ত হওয়া। ওয়াজিব হওয়া কোন বস্ত্তর ক্ষেত্রেই কেবল প্রযোজ্য। আল্লাহর ওপর কোন কিছু ওয়াজিব হয় না। আল্লাহ যে সাওয়াব দেন এটা তার অনুগ্রহ, আর তিনি যদি কোন শাস্তি দেন তবে সেটা তার ন্যায় বিচার। তিনি যা করেন সে ব্যাপারে কেউ তার উপর কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না। সহীহুল বুখারীতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘তোমরা যার উপর ভাল প্রশংসামূলক সাক্ষ্যদান করেছ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে’’। এটি অন্যান্য বর্ণনার তুলনায় অধিক স্পষ্ট।
এটা সাহাবীগণের জন্যই খাস নয়, বরং ঈমান ইয়াকীনে যে কেউই ঐ গুণাবলী অর্জনে সক্ষম হবে সে এ মর্যাদা পাবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘তোমরা (জমিনে) আল্লাহর সাক্ষী’’। আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ এর অর্থ এই নয় যে, সাহাবীগণ বা মু’মিনগণ কারো ব্যাপারে যা বলল তাই হলো। কারণ যে জান্নাতের হকদার সে কখনো তাদের কথায় জাহান্নামী হতে পারে না অনুরূপ তার বিপরীতও হতে পারে না। বরং এর অর্থ হলো লোকেরা যার জীবনে কল্যাণকর কাজ দেখবে তার-ই প্রশংসা করবে। আর কল্যাণকর কাজ-ই তো জান্নাতে যাওয়ার কারণ ও আলামত। সুতরাং নেক ‘আমল দেখে তার ব্যাপারে বলা যায় সে জান্নাতী। (এটাই হলো মু’মিনদের সাক্ষী)।
আল্লামা নাবাবী বলেন, আহলে ফাযল এবং দীনদারগণ যাদের প্রশংসা করে তাদের জন্যই এ কথা খাস। এ প্রশংসা যদি বাস্তবতার অনুকূলে হয় তাহলে সে জান্নাতী আর যদি বাস্তব ‘আমলের বিপরীত হয় তাহলে সে জান্নাতী হবে না। কিন্তু সত্য কথা হলো এ হুকুম ‘আম এবং মুত্বলাক্ব। মু’মিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে আল্লাহ তখন মানুষের অন্তরে ইলহাম করে দেন ফলে সে তার বড় বড় প্রশংসা করে। এটাও তার জান্নাতী হওয়ার দলীল, ‘আমল তার যাই হোক। আর শাস্তি দেয়া যেহেতু আল্লাহর জন্য আবশ্যক নয়, বরং তার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এর দ্বারা আমরা প্রমাণ (ও আশা) করতে পারি যে, এ প্রশংসার খাতিরে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। সুতরাং প্রশংসার উপকারিতা অবশ্যই সাব্যস্ত। তা না হলে শুধু কর্মই যদি জান্নাতের জন্য যথেষ্ঠ হত তাহলে প্রশংসা বেকার হত, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশংসার কথা বলতেন না। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণিত।