১৪৯৭

পরিচ্ছেদঃ ৫২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত

(الاسْتِسْقَاء) শাব্দিক অর্থ হল নিজের জন্য অথবা অন্যের জন্য অপর কারও কাছে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি চাওয়া। আর শারী’আতের পরিভাষায় হাদীসসমূহের আলোকে সুস্পষ্ট পন্থায় অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর নিকট বৃষ্টি অমেবষণ করা। কুসতুলানী বলেন, ইসতিসক্বা তিনভাবে।

প্রথমতঃ সাধারণ দু’আ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ব্যতিরেকে একাকী অথবা একত্রিতভাবে।

দ্বিতীয়তঃ (প্রথম পদ্ধতির চেয়ে ভাল) সালাত শেষে দু’আ যদিও সে সালাত নফল সালাত হয় তবে ইমাম নাবাবী এটা ফরয সালাত ও জুমু’আর খুতবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

তৃতীয়তঃ এটা উত্তম ও পরিপূর্ণ আর তা হবে দু’ রাক্’আত সালাত ও দু’ খুতবার মাধ্যমে হবে। আর নাবাবী বলেন, বৃষ্টি প্রার্থনা সালাতের পূর্বে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা। সওম পালন করা, তওবা্ করা। কল্যাণসূচক কাজে অগ্রগামী হওয়া। খারাপ কাজ হতে বিরত হওয়া ও অনুরূপ কাজ করা আল্লাহর আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন তাঁর উম্মাতের জন্য বেশ কয়েকবার অসংখ্য প্রান্তে। আর তাঁর উম্মাতের জন্য এ পদ্ধতিতে চালু রেখেছেন যে, তিনি বের হতেন জনগণকে নিয়ে ঈদগাহের উদ্দেশে অত্যন্ত বিনয়ী, অনুনয়কারী ও কাতরভাবে। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতেন সশব্দে ক্বিরাআতে, অতঃপর খুতবাহ্ প্রদান করতেন এবং ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হয়ে দু’আ করতেন, দু’হাত তুলতেন এবং তাঁর চাদর উল্টাতেন। কেননা মুসলিমদের একই স্থানে একই উদ্দেশে আগ্রহী হয়ে একত্রিত হওয়া সর্বোচ্চ অভিপ্রায়, ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভাল কাজগুলো দু’আ কবূলে ভূমিকা রাখে। আর সালাতেই বান্দার জন্য আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম আর হাত উত্তোলন পরিপূর্ণ বিনয়ের চিত্র এবং সর্বোচ্চ কাকুতি ব্যক্তিকে ভয়ের সতর্ক করে আর চাদর উল্টানোর বিষয়টি তাদের অবস্থার পরিবর্তন ফুটে উঠে যেমন রাজাদের সামনে আবেদনকারী করে থাকে।


১৪৯৭-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বৃষ্টির জন্য লোকজন নিয়ে ঈদগাহতে গেলেন। তাদের নিয়ে তিনি দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। উচ্চস্বরে করে তিনি উভয় রাক্’আতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়লেন। এরপর তিনি ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন। ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হবার সময় তিনি তাঁর চাদর ঘুরিয়ে দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْاِسْتِسْقَاءِ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ إِلَى الْمُصَلَّى يَسْتَسْقِي فَصَلَّى بِهِمْ رَكْعَتَيْنِ جَهَرَ فِيهِمَا بِالْقِرَاءَةِ وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ يَدْعُو وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَحَوَّلَ رِدَاءَهُ حِينَ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ

عن عبد الله بن زيد قال: خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم بالناس الى المصلى يستسقي فصلى بهم ركعتين جهر فيهما بالقراءة واستقبل القبلة يدعو ورفع يديه وحول رداءه حين استقبل القبلة

ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করে বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত জামা‘আতগতভাবে প্রকাশ্য অবস্থায় করা সুন্নাহ। এ মতে মালিক শাফি‘ঈ আহমাদ বক্তব্য দিয়েছেন। আর ইমাম আবূ হানীফাহ্ সুন্নাহ মনে করেন না। ইস্তিসক্বা সালাতের হুকুমের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ-এর নিকট সুন্নাহ, মালিকী, শাফি‘ঈ, হাম্বালী মাযহাবে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। আর আবূ হানীফাহ্ জামা‘আতবদ্ধভাবে এ সালাত আদায় করা অস্বীকার করেছেন তবে ইস্তিসক্বার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শারী‘আত সম্মত ও জায়িয তা অস্বীকার করেননি।

(جَهَرَ فِيْهِمَا بِالْقِرَاءَةِ) ইমাম নাবাবী মুসলিমের শরাহতে বলেন, সকল ‘উলামাহ্ ঐকমত্য হয়েছেন ইস্তিসক্বার সালাত সশব্দে পড়া মুস্তাহাব।

(وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ) ‘কখন তিনি ক্বিবলামুখী হতেন’ এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে তবে আমাদের নিকট সর্বাধিক ও অধিক গ্রহণযোগ্য মত হল একটি খুতবাহ্ দিবে। খুতবাহ্ চলা অবস্থায় ক্বিবলামুখী হবে এবং ক্বিবলামুখী হয়ে দু‘আ করবে। কেননা হাদীসের ভাষ্য এটাই প্রামাণ করে।

(وَحَوَّلَ رِدَاءَه) ‘এর তাঁর চাদর উল্টে দিলেন’ উল্টানো এমন হবে চাদরের ডান দিকটা বাম দিকে এবং বাম দিকটা ডান দিকে আসবে আর ভিতরেরটা বাইরে আসবে এবং বাইরেরটা ভিতরে যাবে পদ্ধতিটা এভাবে হবে ডান হাত চাদরের বাম দিকের নিচের অংশ ধরবে এবং বাম হাত চাদরের ডান দিকের নিচের অংশ ধরবে এবং দু’হাতই পিঠের পিছনে দিয়ে পরিবর্তন করবে তাতে ডান হাতের ধরা অংশ ডান ঘাড়ের উপর হবে এবং বাম হাতে ধরা অংশ বাম ঘাড়ের উপর হবে। এভাবে করলে ডান বামে এবং বাম ডানে পরিবর্তন হয় আর উপরের অংশ নীচে এবং নীচের অংশ উপরে চলে আসে।

আর ওয়াক্বিদী উল্লেখ করেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাদরের দৈর্ঘ্য ছয় গজ প্রস্থ তিন গজ আর লুঙ্গির দৈর্ঘ্য চার গজ দুই গিরা প্রস্থ দু’গজ এক গিরা ছিল যা তিনি ঈদে ও জুমু‘আয় পরিধান করতে। আর হাদীসে প্রমাণিত হয়, সে এ ‘ইবাদাতে চাদর উল্টানো মুস্তাহাব।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)