১২২০

পরিচ্ছেদঃ ৩৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - ক্বিয়ামুল লায়ল-এর প্রতি উৎসাহ দান

১২২০-[২] মুগীরাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাত্রে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পড়তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, আপনি কেন এত কষ্ট করছেন। অথচ আপনার পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, আমি কী কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী বান্দা হবো না? (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ التَّحْرِيْضِ عَلى قِيَامِ اللَّيْلِ

وَعَنِ الْمُغِيرَةِ قَالَ: قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى تَوَرَّمَتْ قَدَمَاهُ فَقِيلَ لَهُ: لِمَ تَصْنَعُ هَذَا وَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكِ وَمَا تَأَخَّرَ؟ قَالَ: «أَفَلَا أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا»

وعن المغيرة قال: قام النبي صلى الله عليه وسلم حتى تورمت قدماه فقيل له: لم تصنع هذا وقد غفر لك ما تقدم من ذنبك وما تاخر؟ قال: «افلا اكون عبدا شكورا»

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়িয়ে থাকতে তার পা ফুলে যেত। এ সালাত ছিল রাতের তাহাজ্জুদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, তিনি রাতে দীর্ঘসূত্রী সালাত আদায় করতেন। বলা হয়েছে সালাত যেমন ছিল দীর্ঘ তেমনি ছিল দায়েমী। এ হাদীসসহ আরো অনেক হাদীসে দেখা যায় পা ফুলে যাওয়ার কথা এসেছে। আবার সহীহুল বুখারীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনা সুনানে, নাসায়ীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনাসহ আরো কতিপয় রিওয়ায়াতে দেখা যায় পা ফেটে যাওয়ার কথা এসেছে।

শায়খুল হাদীস আল্লামা ‘উবায়দুল্লা মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, এগুলো পরস্পর বিরোধী কোন বর্ণনা নয়। পা যখন ফুলে যায় তখন ফেটেও যায়, (অথবা কখনো কখনো ফেটেও যেত।) অথবা ফুলে ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যেত। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি এরূপ (কষ্ট) করছেন কেন? এ জিজ্ঞাসাকারী স্বয়ং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নিজেই ছিলেন। এ হাদীসের প্রশ্নের বাক্যের সাথে অন্যান্য হাদীসের বাক্যের শব্দগত কিছু পার্থক্য থাকলেও অর্থ একই। ‘আপনার পূর্বাপর অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে’ এ বাক্যটি কোন কোন হাদীসে কর্তৃবাচ্য হিসেবে ‘আল্লাহ আপনার পূর্বাপর গুনাহ বা অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন’ ব্যবহার হয়েছে।

প্রশ্ন হলো নাবীগণ তো ছিলেন নিষ্পাপ তাদের অপরাধ বা গুনাহ কিসের? উত্তর তাদের কোন অপরাধ বা গুনাহ ছিল না, তবে অনুত্তম কাজ বুঝানো আর তার মহান মর্যাদার কারণে ঐ কাজকেই অপরাধ বা গুনাহ বলে বুঝানো হয়েছে। যেমন (প্রবাদে) বলা হয় হাসানাতুল আবরার সাইয়্যিআতুল মুকাররিবীন। অথবা এর অর্থ হলোঃ যদি আপনার দ্বারা কোন গুনাহ হতো তাহলে তা অবশ্য হতো ক্ষমাযোগ্য। সর্বোপরি এ কথার দ্বারা তার গুনাহ নিশ্চিত হয়েছিল এটা আবশ্যক হয় না।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাঃ ‘আমি কি তাহলে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?’ এর অর্থ হলো আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে আমি তার ‘ইবাদাত বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব? আল্লাহর এই ক্ষমা এবং অন্যন্য অসংখ্য নি‘আমাতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে না? বরং আমার উপর তো আরো বেশী আবশ্যক যে, আমি আমার মাওলার এ সকল নি‘আমাতের আরো বেশি বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমি আরো অধিক রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (عبد) বান্দা বা গোলাম শব্দ ব্যবহার করা আল্লাহর নিকট বিনয়ী হওয়া এবং তাকে সম্মান প্রদর্শনের চূড়ান্ত ভাষা। এজন্য ইসরার আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাও এ শব্দ ব্যবহার করেছেন। এটা সম্পর্ক গভীর হওয়ারই প্রমাণ বাহক। আর এই সম্পর্কে ‘ইবাদাত ছাড়া সম্ভব হয় না, তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক রাত জেগে আল্লাহর ‘‘ইবাদাত (সালাত আদায়) করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)