পরিচ্ছেদঃ ২৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামের দায়িত্ব
১১৩৪-[৬] ’উসমান ইবনু আবিল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে শেষ ওয়াসিয়্যাত করেছেন তা ছিল, যখন তোমরা মানুষের (সালাতের) ইমামতি করবে তখন সংক্ষিপ্ত করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়াবে। (মুসলিম)
সহীহ মুসলিমের আর এক সূত্রে পাওয়া যায়, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’উসমান (রাঃ) কে বলেছেনঃ নিজ জাতির ইমামতি করো। ’উসমান (রাঃ) বললেন, আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার মনে খটকা লাগে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার নিকট আসো। আমি তার নিকট আসলে তিনি আমাকে তাঁর সামনে বসালেন। আমার সিনার উপর দু’ছাতির মাঝে তাঁর নিজের হাত রেখে বললেন। এদিকে পিঠ ফিরাও। আমি তাঁর দিকে আমার পিঠ ফিরালাম। তিনি আমার পিঠে দু’কাঁধের উপর হাত রাখলেন এবং বললেনঃ যাও, নিজের জাতির সালাতে ইমামতি করো। (মনে রাখবে) যখন কোন লোক কোন জাতির ইমামতি করবে তার উচিত ছোট করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করানো। কারণ সালাতে বৃদ্ধ লোক থাকে। অসুস্থ মানুষ থাকে। দুর্বল ও প্রয়োজনের তাড়া থাকে এমন লোক উপস্থিত হয়। যখন কেউ একা একা সালাত আদায় করবে সে যেভাবে যত দীর্ঘ চায় সালাত আদায় করবে)।[1]
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ قَالَ: آخِرُ مَا عَهِدَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَمَمْتَ قَوْمًا فَأَخِفَّ بِهِمُ الصَّلَاةَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «أُمَّ قَوْمَكَ» . قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَجِدُ فِي نَفْسِي شَيْئًا. قَالَ: «ادْنُهْ» . فَأَجْلَسَنِي بَيْنَ يَدَيْهِ ثُمَّ وَضَعَ كَفَّهُ فِي صَدْرِي بَيْنَ ثَدْيَيَّ ثُمَّ قَالَ: «تَحَوَّلْ» . فَوَضَعَهَا فِي ظَهْرِي بَيْنَ كَتِفَيَّ ثُمَّ قَالَ: «أُمَّ قَوْمَكَ فَمَنْ أَمَّ قَوْمًا فَلْيُخَفِّفْ فَإِنَّ فيهم الْكَبِير وَإِن فيهم الْمَرِيض وَإِن فيهم الضَّعِيف وَإِن فهيم ذاالحاجة فَإِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ وَحْدَهُ فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاءَ»
[বিঃ দ্রঃ এ অধ্যায়টিতে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ নেই। (وَهذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ اَلْفَصْلِ الثَّانِيْ) ]
ব্যাখ্যা: (إِنِّي أَجِدُ فِي نَفْسِي شَيْئًا) ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ আমি আমার অন্তরের কুমন্ত্রণা এবং কুরআন ও ফিকাহ’র ধারণ ক্ষমতার কমতির কারণে ইমামতির শর্তসমূহ ও তার অধিকার আদায়ের সক্ষম না। সুতরাং ‘উসমান বিন আবিল ‘আস এর পিঠ ও বক্ষের উপর রসূলের হাত স্থাপন মূলত যে সমস্যা ‘উসমান (রাঃ) কে ইমামতি থেকে বাঁধা দিচ্ছিল তা দূর করার জন্য এবং কুরআন ও ফিকাহ থেকে যে পরিমাণ অবলম্বন ইমামতির জন্য যথাযথ হবে সে ব্যাপারে তাকে দৃঢ় করার জন্য। নাবাবী বলেন, একমতে বলা হয়েছে সম্ভবত ‘উসমান (রাঃ) অহংকার ও লোক দেখানো ‘আমলের আশংকা করেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তার রসূলের হাত ও দু‘আর বারাকাতে তা দূর করেন অথবা হয়ত তিনি সালাতে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হওয়াকে উদ্দেশ্য করেছেন, কেননা তিনি কুমন্ত্রণাগ্রস্ত ছিলেন আর কুমন্ত্রণাগ্রস্ত ব্যক্তির সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ঠিক হবে না।
ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে এ ‘উসমান বিন আবিল ‘আস কর্তৃক উল্লেখ করেছেন। ‘উসমান (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! নিশ্চয় শায়ত্বন (শয়তান) আমার, আমার সালাত ও ক্বিরাআতের মাঝে আড়াল সৃষ্টি করে এবং আমার ক্বিরাআতকে আমার কাছে সংশয়পূর্ণ করে দেয়। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐটা এমন এক শায়ত্বন (শয়তান) যাকে খিনযিব বলা হয়। সুতরাং তুমি যখন ঐরূপ অনুভব করবে তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাবে এবং তোমার বামদিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে।
এরপর আমি তা করলে আল্লাহ আমার সে সমস্যা দূর করেন।
(فَأَجْلَسَنِي) মুসলিমের কতক কপিতে বাবে ইফ্‘আল-এর পরিবর্তে বাবে তাফ্‘ঈল থেকে (فَجَلَّسَنِي) আছে। (وَإِن فيهم الضَّعِيف) যেমন শিশু, মহিলা, নারী পুরষদের মাঝে যারা দুর্বল দেহের অধিকারী যদিও অসুস্থ ও বৃদ্ধ না হয়। (وَإِن فهيم ذاالحاجة) অর্থাৎ যা দ্রুততাকে দাবি করে। এ বর্ণনাটি ইমাম আহমাদ ৪র্থ খন্ডে ২১৬ ও ২১৮ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেছেন। ইবনু মাজাহ বক্ষে ও পিঠে হাত স্থাপনের ঘটনা উল্লেখ ছাড়া বর্ণনা করেছেন। ইমাম বায়হাক্বী তার কিতাবের ৩য় খন্ডে ১১৮ পৃষ্ঠাতে ঘটনা সহ সংকলন করেছেন।
আবূ দাঊদ ও নাসায়ীও একে সংকলন করেছেন। আহমাদ তার কিতাবের চতুর্থ খন্ডে ২১৭ পৃষ্ঠাতে (তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আমার সম্প্রদায়ের ইমাম বানিয়ে দিন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের ইমাম, তাদের মাঝে দুর্বলদের প্রতি দৃষ্টি রাখবে।)