১১২৭

পরিচ্ছেদঃ ২৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা

১১২৭-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনায় প্রথম গমনকারী মুহাজিরগণ যখন আসলেন, আবূ হুযায়ফার আযাদ গোলাম সালিম তাদের সালাতের ইমামতি করতেন। মুকতাদীদের মাঝে ’উমার (রাঃ) আবূ সালামাহ্ ইবনু ’আবদুল আসাদও শামিল থাকতেন। (বুখারী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: لَمَّا قَدِمَ الْمُهَاجِرُونَ الْأَوَّلُونَ الْمَدِينَةَ كَانَ يَؤُمُّهُمْ سَالِمٌ مَوْلَى أَبِي حُذَيْفَةَ وَفِيهِمْ عُمَرُ وَأَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الْأسد. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عمر قال: لما قدم المهاجرون الاولون المدينة كان يومهم سالم مولى ابي حذيفة وفيهم عمر وابو سلمة بن عبد الاسد. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (لَمَّا قَدِمَ الْمُهَاجِرُونَ الْأَوَّلُونَ الْمَدِينَةَ) এভাবে মিশকাতের সকল কপিতে আছে। জাযারী জামি‘উল উসূল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খন্ডে ৩৭৮ পৃষ্ঠাতে এভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি একে ইমাম বুখারী ও আবূ দাঊদের দিকে সম্বন্ধ করেছেন এবং বুখারীতে যা আছে তা’ হল কিতাবুস্ সালাতে উল্লেখিত কুবা নগরির উসবাহ এলাকাতে দাসের ইমামতি করা সম্বন্ধে। আবূ দাঊদের এক বর্ণনাতে আছে প্রথম পর্যায়ের মুহাজিররা যখন আগমন করল তখন তারা উসবাহ অঞ্চলে অবস্থান নিল।

(كَانَ يَؤُمُّهُمْ سَالِمٌ مَوْلى أَبِي حُذَيْفَةَ) উল্লেখিত অংশের পরে বুখারীতে একটু বেশি আছে যা লেখক উল্লেখ করেনি আর তা হল (وكان أكثرهم قرآناً) এ অংশের মাঝে ইঙ্গিত রয়েছে সাহাবীদের মাঝে সালিম অপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা সালিমকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দিয়েছিল এবং ত্ববারানী এর বর্ণনাতে ঠিক ঐভাবে আছে যেভাবে মাজমাউয্ যাওয়ায়িদে দ্বিতীয় খন্ডে ৬৪ পৃষ্ঠাতে আছে আর তা’ হল তিনি তাদের মাঝে সর্বাধিক কুরআন সংরক্ষণকারী ছিলেন।

(وَفِيهِمْ عُمَرُ وَأَبُو سَلَمَةَ) এ অংশটুকু বুখারীর অংশ না, বরং আবূ দাঊদের।

ইমাম বুখারী একে কিতাবুল আহকামে (মুক্ত দাসদের বিচারক ও কর্মচারী বানানো) অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন। আর তা হল ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) বলেন, আবূ হুযায়ফাহর মুক্তদাস সালিম কুবা মসজিদে প্রথম পর্যায়ের মুহাজির ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের ইমামতি করতেন। তাদের মাঝে ছিল আবূ বাকর, ‘উমার (রাঃ), আবূ সালামাহ, যায়দ বিন হারিসাহ্ ও ‘আমর বিন রবী‘আহ্। এদের মাঝে আবূ বাকরের উল্লেখ ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। কেননা হাদীসে আছে, এ ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে আগমনের পূর্বে; অথচ আবূ বাকর হিজরতে রসূলের সঙ্গী ছিলেন। ইমাম বায়হাক্বী বিষয়টিকে ঐ দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে যে, সম্ভবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা হতে মদীনাতে হিজরতের পরও সালিম অবিরত তাদের ইমামতি করছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে মসজিদে নাবাবী নির্মাণের পূর্বে আবূ আইয়ূব-এর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিলেন।

তখন সম্ভবত আবূ বাকর মসজিদে কুবাতে আসলে তার পেছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং তিনি এ দলকে নিয়ে সালিম-এর ইমামতি করার মাধ্যমে দাসের ইমামতি করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন। আর এ কারণে লেখক ইমাম বুখারী ও মাজদ ইবনু তায়মিয়্যাহ্ এর অনুসরণার্থে এ হাদীসটিকে ইমামতির অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীস থেকে প্রমাণের দিক হল কুরায়শী বড় বড় সাহাবীগণ তাদের সামনে সালিমকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দেয়ার উপর তাদের ঐকমত্য হওয়া। এর উপর আরও প্রমাণ বহন করছে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) তাঁর মুসনাদে এবং ‘আবদুর রাযযাক্ব ইবনু আবী মুলায়কাহ্ (রহঃ) থেকে যা বর্ণনা করেছেন। আর তা’ হল ইবনু আবী মুলায়কাহ্ তিনি তার পিতা, ‘উবায়দ বিন ‘উমায়র, মিসওয়ার বিন মাখরামাহ্ এবং অনেক মানুষ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হত তখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর গোলাম আবূ ‘আমর তাদের ইমামতি করতো।

সে সময় আবূ ‘আমর বালক ছিলেন তখনও তাকে আযাদ করা হয়নি। বায়হাক্বী হিশাম বিন ‘উরওয়াহ্ থেকে এবং তিনি নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করেন নিশ্চয়ই আবূ ‘আমর যাক্ওয়ান ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এর গোলাম ছিল ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তাকে আযাদ করে দেন। আর সে সময় তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে নিয়ে রমাযানের ক্বিয়াম (কিয়াম) করতেন এমতাবস্থায় সে দাস ছিল। হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, জমহূর ‘উলামা দাসের ইমামতি বিশুদ্ধ হওয়ার দিকে গিয়েছেন তবে ইমাম মালিক তাদের বিরোধিতা করেছেন।

ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, দাস স্বাধীন ব্যক্তিদের ইমামতি করবে না তবে দাস ছাড়া যদি স্বাধীনদের থেকে কোন ক্বারী না থাকে তাহলে দাস তাদের ইমামতি করবে তথাপিও জুমু‘আর ক্ষেত্রে পারবে না, কেননা জুমু‘আহ্ দাসের ওপর আবশ্যক না। আশহুব তার বিরোধিতা করেছেন ও যুক্তি দিয়েছেন দাস যখন জুমু‘আতে উপস্থিত হবে তখন জুমু‘আহ্ দাসের একটি অংশে পরিণত হবে। ‘আয়নী (রহঃ) বলেছেন, আমাদের সাথীবর্গ বলেন, দাস তার মালিক-এর সেবায় ব্যস্ত থাকার কারণে দাসের ইমামতি মাকরূহ।

তবে আবূ যার, হুযায়ফাহ্ এবং ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ) তাবি‘ঈদের মধ্যে থেকে ইবনু সীরীন, হাসান, শুরাইহ, নাখ্‘ঈ, শা‘বী ও হাকাম (রহঃ) ফাক্বীহদের মধ্যে থেকে সাওরী, আবূ হানীফাহ্, শাফি‘ঈ, আহমাদ ও ইসহাক (রহঃ) দাসের ইমামতি বৈধ বলেছেন। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, জুমু‘আহ্ ছাড়া অন্য সালাতের ইমামতি করা দাসের জন্য বিশুদ্ধ হবে। অন্য এক বর্ণনাতে এসেছে, দাস যখন কুরআনের পাঠক হবে এবং তার পেছনে স্বাধীনদের মধ্যে থেকে যারা থাকবে তারা যদি কুরআন পড়তে না জানে তাহলে দাসই ইমামতি করবে তবে জুমু‘আহ্ ও ঈদের ক্ষেত্রে না।

মাবসূত গ্রন্থে আছে, দাসের ইমামতি বৈধ আর অন্যের ইমামতি অধিক পছন্দনীয়। যদি একজন ফাক্বীহ দাস ও গায়রে ফাক্বীহ স্বাধীন একত্র হয় তাহলে সেখানে তিনটি দিক। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ দিক হল এ ক্ষেত্রে উভয়ে সমান তবে যে ব্যক্তি বলেছে ফাক্বীহ দাস সর্বোত্তম তার কথাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ সালিম মসজিদে কুবাতে প্রথম পর্যায়ের মুহাজিরদের ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝে ‘উমার (রাঃ) ও অন্যান্য (বিশিষ্ট) ব্যক্তিবর্গও ছিলেন। এর মূল কারণ সালিম অন্যদের তুলনাতে কুরআন বেশি সংরক্ষণ করেছিলেন। ক্বারী (রহঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ)-এর উপস্থিতিতে সালিম-এর ইমামতি তাদের মাজহাবের ওপর একটি শক্তিশালী দলীল যারা সর্বাধিক ফাক্বীহ এর উপর সর্বাধিক কুরআনের ক্বারীকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)