১০৫৮

পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে

১০৫৮-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হলে তখন ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ব্যতীত অন্য কোন সালাত নেই। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا اقيمت الصلاة فلا صلاة الا المكتوبة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (إِذَا أُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ) ‘‘যখন সালাতের জন্য মুয়ায্যিন ইক্বামাত বলে’’ অর্থাৎ মুয়াযযিন ইক্বামাত বলতে শুরু করে। যাতে মুক্তাদীগণ ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমাতে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্ত্তত হয়।

(فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَة) ‘‘তখন ফরয সালাত ব্যতীত সালাত নেই’’। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নেই অর্থাৎ সালাত বিশুদ্ধ হয় না অথবা এখানে (নফি) নেতিবাচক শব্দ দ্বারা নিষেধ উদ্দেশ্য। তাহলে হাদীসের অর্থ দাঁড়াল সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা শুরু হলে তখন ঐ ফরয সালাত ব্যতীত কোন নফল সালাত শুরু করা নিষেধ। এ অর্থকে শক্তিশালী করে ইমাম বুখারী কর্তৃক তার তারীখ গ্রন্থে এবং ইমাম বাযযার-এর বাযযার গ্রন্থে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ যখন সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা হলো তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং লোকদেরকে ফজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত সালাত আদায় করতে দেখে বললেনঃ দু’ সালাত একত্রে আদায় করা হচ্ছে। আর ইক্বামাত হয়ে গেলে তিনি ঐ দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতে নিষেধ করলেন। আর নিষেধ দ্বারা হারাম উদ্দেশ্য। কেননা নিষেধের আসল অর্থ হলো হারাম। উল্লেখ্য যে, যে সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা হয় কোন ব্যক্তি আগেই এ সালাত আদায় করে থাকলে তার জন্য ইমামের পিছনে নফল সালাতের নিয়্যাতে ইমামের ইকতিদা করা বৈধ অন্য দলীলের ভিত্তিতে।

হাদীসের শিক্ষা: ইক্বামাত বলাকালীন সময়ে অথবা ইক্বামাত বলার পরে ইমাম সালাত শুরু করার পরে নিয়মিত সুন্নাত বা অন্য কোন নফল সালাতে ব্যস্ত থাকা নিষিদ্ধ। চাই তা ফাজরের (ফজরের) নিয়মিত সুন্নাত হোক বা অন্য কোন ওয়াক্তের নিয়মিত সুন্নাত হোক। চাই মসজিদের ভিতরে হোক বা মসজিদের কোন সাইটে বা খাম্বার পিছনে, অথবা কাতারের মাঝে বা কাতারের পিছনে অথবা মসজিদের বাইরে দরজার নিকটে, সর্বাবস্থায় ইক্বামাত বলার পর নফল সালাত আদায় নিষিদ্ধ। যে ব্যক্তি ফাজরের (ফজরের) নিয়মিত দু’ রাক্‘আত সুন্নাত সালাত আদায় করেনি, সে ব্যক্তি কি ফাজরের (ফজরের) সালাতে ইক্বামাতের সময় ঐ দু’ রাক্‘আত আদায় করবে? এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

(১) আহলে যাহিরদের মতে ইক্বামাত শ্রবণ করার পর ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত বা অন্য কোন নফল সালাত শুরু করা বৈধ নয়। আর হাদীসের প্রকাশমান অর্থ এ মতটিকেই প্রাধান্য দেয়।

(২) ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ-এর মতে এ সময়ে ঐ দু’ রাক্‘আত সালাত বা কোন নফল সালাত আদায় করা মাকরূহ। তবে ইবনু কুদামাহ্ আল মুগনী গ্রন্থে বলেনঃ যখন সালাতের ইক্বামাত বলা হবে তখন নফল সালাত নিয়ে ব্যস্ত থাকবে না রাক্‘আত ছুটে যাবার আশংকা থাক বা না থাক। ইমাম শাফি‘ঈর অভিমতও এটাই। এতে বুঝা যায় যে, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ আহলুয্ যাহিরদের মতের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন।

(৩) ইমাম মালিক-এর মতে যদি কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি ইক্বামাত বলা হয় তাহলে ইমামের সাথে সালাতে শরীক হবে এবং তখন আর ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত আদায় করবে না। আর যদি মসজিদে প্রবেশ না করে থাকে এবং রাক্‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকা না থাকে তাহলে মসজিদের বাইরে সুন্নাত আদায় করে নিবে। আর যদি প্রথম রাক্‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে ইমামের সাথে সালাতে শরীক হবে।

(৪) ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ যদি উভয় রাক্‘আত ছুটে যাওয়ার আশংকা করে এবং ইমাম ২য় রাক্‘আতের রুকূ' থেকে মাথা উঠানোর পূর্বে তার সাথে শামিল না হতে পারে তাহলে ইমামের সাথে শরীক হবে।

আর যদি দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করার পরও ইমামের সাথে ২য় রাক্‘আতের রুকূ‘তেও শামিল হতে পারে তাহলে মসজিদের বাইরে দু’ রাক্‘আত আদায় করে ইমামের সাথে জামা‘আতে শামিল হবে।

যারা ইক্বামাত হয়ে যাওয়ার পরও ফাজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করে ইমামের সাথে শামিল হওয়ার পক্ষে তারা বলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ, আবুদ্ দারদা, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং তাবি‘ঈদের মধ্যে মাসরূক, আবূ ‘উসমান আন্ নাহদী ও হাসান বসরী (রহঃ) প্রভৃতি মনিষীগণ এরূপ করতেন। এর প্রতি উত্তরে আল্লামা ‘আযীম আবাদী ‘‘ই‘লাম আহলিল আসর’’ নামক গ্রন্থে বলেনঃ সাহাবীদের মধ্যে ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ), আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), আবূ মূসা আল আশ্‘আরী ও হুযায়ফাহ্ (রাঃ) এরূপ করা বৈধ মনে করতেন না। ‘‘উমার (রাঃ) কাউকে এরূপ করতে দেখলে তাকে প্রহার করতেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার প্রতি কঙ্কর ছুঁড়ে মারতেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এরূপ করাকে অস্বীকার করতেন। আর আবূ মূসা এবং হুযায়ফাহ্ (রাঃ) সুন্নাত না আদায় করে সালাতের কাতারে প্রবেশ করতেন। আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে তার বক্তব্য ও কর্মের মধ্যে অমিল পরিলক্ষিত হয়। এরূপ অবস্থার বক্তব্যকেই দলীল হিসেবে ধরা হয়, কর্ম নয়।

আর তাবি‘ঈদের মধ্যে সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র ইবনু সীরীন, ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র ইব্রা-হীম নাখ্‘ঈ এবং ‘আত্বা, ইমামদের মাঝে শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইবনুল মুবারাক, ইসহাক্ব এবং জমহূর মুহাদ্দিসীন এরূপ করা বৈধ মনে করেন না। ইবনু ‘আবদুল বার বলেনঃ মতভেদ দেখা দিলে সুন্নাত তথা হাদীসই দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। যে ব্যক্তি সুন্নাতের আশ্রয় নিলো সে সফল হলো। ইক্বামাত হলে নফল সালাত পরিত্যাগ করে জামা‘আতের পর তা আদায় করা সুন্নাতের অনুসরণের নিকটবর্তী। অতএব সে সৌভাগ্যবান যে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সুন্নাতের অনুসরণ করে। সুন্নাত শুরু করার পর ইক্বামাত হলে কি করবে?

কিছু আহলে যাহির এবং শাফি‘ঈদের মাঝে আবূ হামিদ এবং অন্যরা বলেনঃ সুন্নাত পরিত্যাগ করবে। তাদের দলীল (فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَةَ) ইক্বামাত হয়ে গেলে ফরয সালাত ব্যতীত কোন সালাত নেই।

অন্যান্য ‘আলিমগণ হাদীসের এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘‘তোমাদের ‘আমল বিনষ্ট করো না’’ আল্লাহর এ বাণী দ্বারা খাস করেছেন। আবূ হামিদ শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, সুন্নাত পূর্ণ করতে গিয়ে যদি ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা ছুটে যায় তাহলে সুন্নাত ছেড়ে দেয়াই উত্তম। আমি (মুবারাকপূরী) বলছিঃ যদি ইক্বামাত হওয়ার পরও তার এক রাক্‘আত সুন্নাত বাকী থাকে তাহলে সালাত ছেড়ে দিবে। আর যদি সাজদাতে অথবা তাশাহুদে থাকে তাহলে সালাত ছেড়ে না দিয়ে তা পূর্ণ করলে কোন ক্ষতি নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)