৯৬৫

পরিচ্ছেদঃ ১৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের পর যিকর-আযকার

৯৬৫-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদশালী লোকজন সম্মানে ও স্থায়ী নি’আমাতের ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক অগ্রগামী। তিনি বললেন, এটা কিভাবে? তারা বললেন, আমরা যেমন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করি তারাও আমাদের মতই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের মতো সওম পালন করে। তবে তারা দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে। আমরা তা করতে পারি না। তারা গোলাম মুক্ত করে, আমরা গোলাম মুক্ত করতে পারি না। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন কিছু শিখাব না যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে এবং তোমাদের পশ্চাদ্গামীদের চেয়ে আগে যেতে পারবে, কেউ তোমাদের চেয়ে বেশী উত্তম হতে পারবে না, তারা ছাড়া যারা তোমাদের মতো ’আমল করবে? গরীব লোকেরা বললেন, বলুন হে আল্লাহর রসূল!

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা প্রতি সালাতের পর ’সুবহা-নাল্ল-হ’, আল্ল-হু আকবার’ আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার করে পড়বে। রাবী আবূ সালিহ বলেন, পরে সে গরীব মুহাজিরগণ রসূলের দরবারে ফিরে এসে বললেন, আমাদের ধনী লোকেরা আমাদের ’আমলের কথা শুনে তারাও তদ্রূপ ’আমল করছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা আল্লাহ তা’আলার করুণা, যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। (বুখারী, মুসলিম; আবূ সালিহ-এর কথা শুধু মুসলিমেই বর্ণিত। বুখারীর অন্য বর্ণনায় তেত্রিশবারের স্থানে প্রতি সালাতের পর দশবার করে ’সুবহা-নাল্ল-হ’, ’আলহামদু লিল্লা-হ’ ’আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করার কথা পাওয়া যায়।)[1]

بَابُ الذِّكْرِ بَعْدَ الصَّلَاةِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: (إِنَّ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: قَدْ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالدَّرَجَاتِ الْعُلَى وَالنَّعِيمِ الْمُقِيمِ فَقَالَ وَمَا ذَاكَ قَالُوا يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ وَلَا نَتَصَدَّقُ وَيُعْتِقُونَ وَلَا نُعْتِقُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفَلَا أُعَلِّمُكُمْ شَيْئًا تُدْرِكُونَ بِهِ مَنْ سَبَقَكُمْ وَتَسْبِقُونَ بِهِ مَنْ بَعْدَكُمْ وَلَا يَكُونُ أَحَدٌ أَفْضَلَ مِنْكُمْ إِلَّا مَنْ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُمْ» قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «تُسَبِّحُونَ وَتُكَبِّرُونَ وَتَحْمَدُونَ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ مَرَّةً» . قَالَ أَبُو صَالِحٍ: فَرَجَعَ فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا سَمِعَ إِخْوَانُنَا أَهْلُ الْأَمْوَالِ بِمَا فَعَلْنَا فَفَعَلُوا مِثْلَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَلِك فضل الله يؤته من يَشَاء» . وَلَيْسَ قَوْلُ أَبِي صَالِحٍ إِلَى آخِرِهِ إِلَّا عِنْدَ مُسْلِمٍ وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ: «تُسَبِّحُونَ فِي دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ عَشْرًا وَتَحْمَدُونَ عَشْرًا وَتُكَبِّرُونَ عشرا» . بدل ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ

وعن ابي هريرة قال: (ان فقراء المهاجرين اتوا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا: قد ذهب اهل الدثور بالدرجات العلى والنعيم المقيم فقال وما ذاك قالوا يصلون كما نصلي ويصومون كما نصوم ويتصدقون ولا نتصدق ويعتقون ولا نعتق فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «افلا اعلمكم شيىا تدركون به من سبقكم وتسبقون به من بعدكم ولا يكون احد افضل منكم الا من صنع مثل ما صنعتم» قالوا بلى يا رسول الله قال: «تسبحون وتكبرون وتحمدون دبر كل صلاة ثلاثا وثلاثين مرة» . قال ابو صالح: فرجع فقراء المهاجرين الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا سمع اخواننا اهل الاموال بما فعلنا ففعلوا مثله فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ذلك فضل الله يوته من يشاء» . وليس قول ابي صالح الى اخره الا عند مسلم وفي رواية للبخاري: «تسبحون في دبر كل صلاة عشرا وتحمدون عشرا وتكبرون عشرا» . بدل ثلاثا وثلاثين

ব্যাখ্যা: (وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ وَلَا نَتَصَدَّقُ وَيُعْتِقُونَ وَلَا نُعْتِقُ) তারা দান করে আমারা দান করতে পারি না, তারা গোলাম আযাদ করে কিন্তু আমারা গোলাম আযাদ করতে পারি না। কেননা এ দু’টি ‘ইবাদাত করতে মালের প্রয়োজন অথচ আমাদের মাল নেই। কাজেই মালী (আর্থিক) ‘ইবাদাতের কারণে তারা আমাদের চেয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারী।

(تَسْبِقُونَ بِه مَنْ بَعْدَكُمْ )তোমরা এর দ্বারা তোমাদের পরবর্তীদের অগ্রগামী হবে। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের মতো ঐ সকল লোকদের অগ্রগামী হবে যারা এই নির্দিষ্ট যিকর পাঠ করে না। অর্থাৎ তোমরা মর্যাদায় তাদের চেয়ে অগ্রগামী হবে।

(تُكَبِّرُونَ وَتَحْمَدُونَ) অত্র বর্ণনায় তাহমীদের পূর্বে তাকবীরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত বলা হয়েছে, تكبر، وتحمد، وتسبح আর ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণনাতে এরূপ আছে। তবে অধিকাংশ হাদীসে রয়েছে, تسبحون، وتحمدون، وتكبرون অর্থাৎ আগে তাসবীহ তারপর তাহমীদ সবশেষে তাকবীর। বর্ণনায় এ মতভেদ থেকে বুঝা যায় যে, এ যিকর পাঠের জন্য নির্দিষ্ট কোন ধারাবাহিকতা নেই। তবে অধিকাংশ হাদীসে যে ধারাবাহিকতা বর্ণিত হয়েছে তা অনুসরণ করা উত্তম।

বুখারীর বর্ণনাতে রয়েছে, (خلف كل صلاة) প্রত্যেক সালাতের পরে। এ থেকে জানা যায় যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হলেই উক্ত যিকর পাঠ করতে হবে কোন প্রকার বিলম্ব না করে। যদি সালাত শেষে এ যিকর পাঠ করতে বিলম্ব করে আর তা যদি এত অল্প হয় যে তা এ যিকর পাঠ হতে বিমুখ এরূপ বুঝায় না, অথবা ভুলে যাওয়ার কারণে অথবা হাদীসে বর্ণিত অন্য কোন যিকিরে ব্যাস্ত থাকার কারণে বিলম্ব হয় তাতে কোন ক্ষতি নেই। প্রত্যেক সালাতের পরে এ বাক্য দ্বারা ফরয নফল সকল সালাতই বুঝায়। তবে কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ বর্ণিত হাদীসে তা ফরয সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

বুখারীর এক বর্ণনায় উল্লিখিত যিকর তেত্রিশবার করে এর স্থলে দশবার করে পাঠ করার কথা উল্লেখ আছে। ইমাম বাগাভী শারহুস্ সুন্নাহ্ নামক গ্রন্থে এর সামঞ্জস্য করেছেন এভাবে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথাগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংখ্যায় বর্ণিত হয়েছে। প্রথমে তিনি দশবারের কথা বলেছেন, এরপর এগারবার, পরবর্তীতে তেত্রিশবারের কথা বলেছেন। অথবা এ বিষয়ে ইখতিয়ার রয়েছে যে কোন সংখ্যা গ্রহণ করার অথবা অবস্থাভদে তা কমবেশী পাঠ করার কথা বলা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)