৩৯৪

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - উযূর নিয়ম-কানুন

৩৯৪-[৪] সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ’আসিম (রাঃ)-কে বলা হলো, যেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন ঠিক সেভাবে আপনি আমাদের সামনে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করুন। তাই তিনি [’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)] পানি আনালেন। পাত্র কাত করে পানি নিয়ে দুই হাতের উপর পানি ঢেলে তিনবার হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর পাত্রের ভিতর হাত ঢুকিয়ে পানি এনে এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনি তিনবার করলেন। তারপর আবার নিজের হাত পাত্রে ঢুকিয়ে পানি এনে তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুইলেন। আবার পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি এনে নিজের মাথা মাসাহ এভাবে করলেন, প্রথমে নিজ হাত দু’টি সামনে থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন, তারপর নিজের দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন। অতঃপর বললেন, এরূপই ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ।[1]

সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, (মাসাহ করার জন্য) নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। অর্থাৎ মাথার সামনের অংশ হতে ’মাসাহ’ শুরু করে দুই হাত পিছন পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তারপর আবার পিছন থেকে শুরু করে হাত সেখানে নিয়ে এলেন যেখান থেকে শুরু করেছিলেন। অতঃপর দুই পা ধুইলেন।[2]

সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় এভাবে বলা হয়েছে, তিনি এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন, আর নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনবার করলেন।[3]

বুখারীর বর্ণনার শব্দ হলো, তারপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। আর এটা তিনি একবার করেছেন। অতঃপর টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধুইলেন।[4]

বুখারীরই এক বর্ণনার শব্দ হলো, অতঃপর তিনি কুলি করলেন ও নাক ঝাড়লেন তিনবার এক কোষ পানি দিয়ে।[5]

بَابُ سُنَنِ الْوُضُوْءِ

وَفِي الْمُتَّفَقِ عَلَيْهِ: قِيلَ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَاصِمٍ: تَوَضَّأْ لَنَا وُضُوءَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَعَا بِإِنَاءٍ فَأَكْفَأَ مِنْهُ عَلَى يَدَيْهِ فَغَسَلَهُمَا ثَلَاثًا ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَاسْتَخْرَجَهَا فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفٍّ وَاحِدَةٍ فَفَعَلَ ذَلِكَ ثَلَاثًا ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَاسْتَخْرَجَهَا فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلَاثًا ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَاسْتَخْرَجَهَا فَغَسَلَ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فَاسْتَخْرَجَهَا فَمَسَحَ بِرَأْسِهِ فَأَقْبَلَ بِيَدَيْهِ وَأَدْبَرَ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثُمَّ قَالَ هَكَذَا كَانَ وُضُوءُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَفِي رِوَايَةٍ: فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ ثُمَّ ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا حَتَّى رَجَعَ إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ ثُمَّ غَسَلَ رجلَيْهِ
وَفِي رِوَايَة: فَمَضْمض واستنشق واستنثر ثَلَاثًا بِثَلَاث غَرَفَاتٍ مِنْ مَاءٍ
وَفِي رِوَايَةٍ أُخْرَى: فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفَّةٍ وَاحِدَةٍ فَفَعَلَ ذَلِكَ ثَلَاثًا
وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ: فَمَسَحَ رَأْسَهُ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ مَرَّةً وَاحِدَةً ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
وَفِي أُخْرَى لَهُ: فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلَاثَ مَرَّات من غرفَة وَاحِدَة

وفي المتفق عليه: قيل لعبد الله بن زيد بن عاصم: توضا لنا وضوء رسول الله صلى الله عليه وسلم فدعا باناء فاكفا منه على يديه فغسلهما ثلاثا ثم ادخل يده فاستخرجها فمضمض واستنشق من كف واحدة ففعل ذلك ثلاثا ثم ادخل يده فاستخرجها فغسل وجهه ثلاثا ثم ادخل يده فاستخرجها فغسل يديه الى المرفقين مرتين مرتين ثم ادخل يده فاستخرجها فمسح براسه فاقبل بيديه وادبر ثم غسل رجليه الى الكعبين ثم قال هكذا كان وضوء رسول الله صلى الله عليه وسلم وفي رواية: فاقبل بهما وادبر بدا بمقدم راسه ثم ذهب بهما الى قفاه ثم ردهما حتى رجع الى المكان الذي بدا منه ثم غسل رجليه وفي رواية: فمضمض واستنشق واستنثر ثلاثا بثلاث غرفات من ماء وفي رواية اخرى: فمضمض واستنشق من كفة واحدة ففعل ذلك ثلاثا وفي رواية للبخاري: فمسح راسه فاقبل بهما وادبر مرة واحدة ثم غسل رجليه الى الكعبين وفي اخرى له: فمضمض واستنثر ثلاث مرات من غرفة واحدة

ব্যাখ্যা: আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে- ‘‘যখন তোমাদের মধ্য হতে কেউ উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে সে যেন তার নাকের মধ্যে পানি দেয়, অতঃপর নাক ঝাড়ে।’’

সালামাহ্ ইবনু ক্বায়স হতে বর্ণিত তিরমিযী, নাসায়ীতে রয়েছে- إِذَ تَوَضَّأتِ فَانْتَثِرْ অর্থ- যখন তুমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে নাক ঝাড়বে বা পরিষ্কার করবে।

لَقِيْطُ بْنُ صَبْرَةَ এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- সায়িম বা রোযাদার না হলে নাকে পানি দেয়ার ব্যাপারে مُبَالَغَةُ করবে, অর্থাৎ- পরিপূর্ণভাবে পানি ব্যবহার করবে।

আবূ দাঊদে রয়েছে- (اِذَا تَوَضَّأَتْ فَمَضْمَضَ) যখন উযূ (ওযু/ওজু/অজু)  করবে অতঃপর কুলি করবে।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে দারাকুত্বনীতে রয়েছে- (امرنا رسول الله صلي الله عليه وسلم بِالْمَضْمَضَةِ وَاِلْاٍسْتِنْشَاقَ) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুলি করতে ও নাকে পানি দিতে আদেশ করেছেন। ইবনু কুদামা আল-মুগনীতে এবং ইবনুল কাইয়্যুম আল-হাদীতে (اَلْمُغْنِىْ لِابْنُ قُدَامَةَ وَالْهَدْىُ لِاِبْنُ الْقَيُّمِ) উল্লেখ করেছেন তিন চুল্লু কুলি ও নাকে পানি দিতে একই সঙ্গে ব্যবহার করবে, অর্থাৎ- একচুল্লু নিয়ে একই সঙ্গে কিছু পানি মুখে কিছু পানি নাকে দিতে হবে এভাবে তিনবার। এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিমের হাদীস অধিক স্পষ্ট।

মির্‘আ-তুল মাফা-তীহ-এর লেখক বলেনঃ উল্লিখিত মতটি আমার নিকট বিশুদ্ধ ও পছন্দনীয় এবং একত্র বর্ণনাটা অধিক স্পষ্ট ও অধিক বিশুদ্ধ। আর চুল্লু পৃথক নেয়ার হাদীসটি জায়িযের দিক থেকে।

* এরপর আলোচনা মাথা মাসাহ প্রসঙ্গে। মাথা কতটুকু মাসাহ করা ফরয- এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।

* ইমাম মালিক-এর মত সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ্ করা ওয়াজিব। আর এটাই অগ্রাধিকারযোগ্য বা প্রাপ্ত। কেননা আয়াতের শব্দ মুজমাল (সার-সংক্ষেপ) এর উদ্দেশ্য পূর্ণ মাথা। আর باء অক্ষর অতিরিক্ত অথবা কিছু অংশ মাসাহ করা, কিন্তু মৌলিক কথা পূর্ণ মাথা মাসাহ্ করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমলের দ্বারা প্রতীয়মান হয়।

* ইমাম শাফি‘ঈ-এর মত মাথার এক তৃতীয়াংশ মাসাহ করা যা অধিকাংশের বিপরীত। মুগীরাহ্-এর হাদীসে মাথার কিছু অংশ মাসাহ করার কথা রয়েছে। (إِنَّه مَسَحَ عَلى نَاصِيَتِه عَمَامِتِه) তিনি মাথার সম্মুখ ভাগ এবং পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন এ প্রসঙ্গে প্রমাণ নেই যে, মাথার কিছু অংশের উপর মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে।

* টাখনুসহ উভয় পাকে ধৌত করা উযূ (ওযু/ওজু/অজু)  করার সময় এ অভিমত উল্লেখ রয়েছে বুখারীতে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة)