পরিচ্ছেদঃ ১৪/১২. যে ব্যক্তি লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হয়
১/২৫৬১। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কাউকে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত পেলে তাকে এবং যার সাথে তা করা হয় তাকে হত্যা করো।
بَاب مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ خَلاَّدٍ قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ أَبِي عَمْرٍو، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ " .
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুল আযীয বিন মুহাম্মাদ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সা'দ বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। মালিক বিন আনাস তাকে সিকাহ বলেছেন। আহমাদ বিন শু'আয়ব আন নাসায়ী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে নিজ কিতাব ছাড়া অন্যত্র থেকে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭০, ১৮/১৮৭ নং পৃষ্ঠা)
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। পুংমৈথুনের অর্থ হলো: সমকামিতা ও পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া। এই কুকর্ম ঘটে থাকে তাদের মধ্যে যাদের মধ্যে জ্ঞান বুদ্ধির অভাব রয়েছে এবং যাদের মধ্যে ধর্মের প্রভাব কম রয়েছে। পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার মধ্যে কুফলও খুব বেশি রয়েছে। তাই এই ঘৃণিত কুকর্মের কারণে সৃষ্টি হয় রোগ, ব্যাধি এবং মহামারী। এবং এর মাধ্যমে চারিত্রিক, সামাজিক এবং দৈহিক ক্ষতির প্রভাবও খুব কম নয়। তাই সর্বদিক দিয়ে এই অপকর্মটিকে নিকৃষ্ট, ঘৃণিত এবং স্বাভাবিক মানবতা বিরোধী অশ্লীল আচরণ বলেই প্রকৃত ইসলাম ধর্মে গণ্য করা হয়। তাই লূতের সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অশ্লীল যৌনসঙ্গম ছড়িয়ে পড়ার কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:
(فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ مَنْضُودٍ)، ( سورة هود، الآية ৮২ ).
ভাবার্থের অনুবাদ: “অতঃপর যখন পুংমৈথুনকারীদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আমার আদেশ এসেছিলো, তখন আমি তাদের জনপদের উপরকে নীচে উল্টে দিয়েছিলাম এবং ক্রমাগত তাদের উপরে পাথুরে মাটি বর্ষণ করেছিলাম”। (সূরা হূদ, আয়াত নং ৮২)।
২। পুংমৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত ব্যক্তি উভয়কেই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম একই প্রকারের পাপী বলে গণ্য করে। তাই উভয়েরই একই শাস্তি, আর তা হলো উভয়কে হত্যা করা। এই বিষয়ে সমস্ত সাহাবী এক মত, তাই এই বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। তবে কি পদ্ধতিতে তাদেরকে হত্যা করতে হবে, এই বিষয়ে মুসলিম শাসক বা তাঁর প্রতিনিধি যে পদ্ধতি অবলম্বন করবেন সেই পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য। সুতরাং তিনি উভয়কেই তরবারীর আঘাতে তাদের শিরচ্ছেদ করতে পারেন। অথবা তাদের উভয়ের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে তাদেরকে হত্যা করতে পারেন। কিংবা তাদেরকে উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দিয়েও তাদেরকে হত্যা করতে পারেন। অথবা তাদের উপরে দেয়াল ইত্যাদি ফেলে দিয়েও তাদেরকে হত্যা করতে পারেন।
তবে যে ব্যক্তিকে বলপূর্বক পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত করা হবে, সে ব্যক্তিকে কোনো প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে না। অনুরূপভাবে পাগল ও নাবালকদেরকেও পুংমৈথুন করার কারণে কোনো প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে না। কিন্তু পাগল ও নাবালকদেরকে পুংমৈথুন করার কারণে কঠোরভাবে সতর্ক করতে হবে এবং তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের আদবকায়দা শিক্ষা দিতে হবে।
৩। পুংমৈথুন করা হলো একটি ঘৃণিত কুকর্ম। তাই যে ব্যক্তি এই ঘৃণিত কুকর্মে লিপ্ত হয়েছে, সে যেন এই কুকর্মের কথা আল্লাহর গোপন করার সাথে সাথে সে নিজেও গোপনে রাখে এবং প্রকাশ না করে। আর নিজেকে অপমানিত না করে। এবং তাকে তার পুংমৈথুন করার শাস্তি প্রদান করার উদ্দেশ্যে সে যেন তার পুংমৈথুন করার কথা কোনো বিচারক কিংবা শাসক বা তাঁর প্রতিনিধির সামনে স্বীকার না করে। বরং সে তার মনের মধ্যে এই মহা পাপ থেকে অনুতপ্ত বা লজ্জিত হয়ে আন্তরিকভাবে তওবা করবে এবং সেই পাপের দিকে পুনরায় না যাওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্প স্থির করবে। আর পুংমৈথুনের বা পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার সমস্ত লোকজন ও উপকরণ থেকে দূরে থাকবে। এবং সঠিকভাবে সত্যতা বজায় রেখে তওবা করলে মহান আল্লাহ তওবা কবুল করবেন আর সমস্ত পাপ ক্ষমা করবেন।
It was narrated from Ibn`Abbas that the Messenger of Allah (ﷺ) said:
“Whoever you find doing the action of the people of Lut, kill the one who does it, and the one to whom it is done.”