পরিচ্ছেদঃ ৩৭০ : দাজ্জাল ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে
৫২/১৮৬৮। আওফ ইবনে মালিক ইবনে তুফাইল হতে বর্ণিত, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সামনে ব্যক্ত করা হল যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে [নিজ বাড়ি] বিক্রয় বা দান করেছেন, সে সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন যে, ’হয় [খালাজান] আয়েশা [অবাধে দান-খয়রাত করা হতে] অবশ্যই বিরত থাকুন, নচেৎ তাঁর উপর [আর্থিক] অবরোধ প্রয়োগ করবই।’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এই বক্তব্য শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, ’সত্যিই কি সে এ কথা বলেছে?’ লোকেরা বলল, ’হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ’তাহলে আমি আল্লাহর নামে মানত করলাম যে, এখন থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সাথে কখনোও কথা বলব না।’ তারপর যখন বাক্যালাপ ত্যাগ দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর আয়েশার নিকট [এ ব্যাপারে] সুপারিশ করালেন।
আয়েশা বললেন, ’আল্লাহর কসম! আমি ইবনে যুবাইরের সম্পর্কে কোন সুপারিশ গ্রহণ করব না, আর আপন মানত ভঙ্গও করব না।’ বস্তুতঃ যখন ব্যাপারটা ইবনে যুবাইরের উপর অতীব দীর্ঘ হয়ে পড়ল, তখন তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামাহ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আসওয়াদ ইবনে আব্দে ইয়াগুস সাহাবীদের সঙ্গে আলোচনা করলেন এবং তাঁদেরকে বললেন, ’আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি যে, তোমরা [আমার স্নেহময়ী খালা] আয়েশার কাছে আমাকে নিয়ে চল। কেননা, আমার সাথে বাক্যালাপ বন্ধ রাখার মানতে অটল থাকা তাঁর জন্য আদৌ বৈধ নয়।’
সুতরাং মিসওয়ার ও আব্দুর রহমান উভয়ে ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত ভিতরে প্রবেশ করার জন্য আয়েশার নিকট অনুমতিও চাইলেন এবং বললেন, ’আসসালামু আলাইকি অরাহমাতুল্লাহি অবারাকা-তুহ! আমরা কি ভিতরে আসতে পারি?’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ’হ্যাঁ এসো।’ বললেন, ’আমরা সকলেই কি?’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ’হ্যাঁ, সকলেই প্রবেশ কর।’ কিন্তু তিনি জানতেন না যে, ওই দু’জনের সঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উপস্থিত আছেন।
সুতরাং এঁরা যখন ভিতরে ঢুকলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর পর্দার ভিতরে চলে গেলেন এবং [খালা] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর শপথ দিতে লাগলেন। এ দিকে পর্দার বাইরে থেকে মিসওয়ার ও আব্দুর রহমান উভয়েই আয়েশাকে কসম দিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে ও তাঁর ওজর গ্রহণ করতে অনুরোধ করলেন এবং বললেন, ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যালাপ বন্ধ রাখতে নিষেধ করেছেন---যে সম্বন্ধে আপনি অবহিত। আর কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী কথাবার্তা বন্ধ রাখে।’
সুতরাং যখন তাঁরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সামনে উপদেশ ও সম্পর্ক ছিন্ন করা যে গুনাহ---তা বারবার বলতে লাগলেন, তখন তিনিও উপদেশ আরম্ভ করলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। তিনি বলতে লাগলেন, ’আমি তো মানত মেনেছি। আর মানতের ব্যাপারটা বড় শক্ত।’ কিন্তু তাঁরা তাঁকে অব্যাহত-ভাবে বুঝাতে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি রাদিয়াল্লাহু আনহা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সাথে কথা বললেন এবং স্বীয় মানত ভঙ্গ করার কাফফারা স্বরূপ চল্লিশটি গোলাম মুক্ত করলেন। তারপর থেকে তিনি যখনই উক্ত মানতের কথা স্মরণ করতেন, তখনই এত বেশী কাঁদতেন যে, চোখের পানিতে তাঁর ওড়না ভিজে যেত। (বুখারী) [1]
[প্রকাশ থাকে যে, নযর বা মানত ভঙ্গের কাফফারা কসম ভঙ্গের কাফফারার ন্যায় অর্থাৎ একটি দাসমুক্ত করা অথবা দশ মিসকীনকে খাদ্য বা বস্ত্র দান করা। যদি এ সবের শক্তি না রাখে তাহলে তিনটি রোযা রাখা। আর বেশী সাদকাহ করার কথা স্বতন্ত্র।]
(370) بَابُ اَحَادِيْثِ الدَّجَّالِ وَاَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَغَىْرِهَا
وَعَنْ عَوفِ بنِ مَالِكِ بنِ الطُّفَيْلِ رضي الله عنه : أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، حُدِّثَتْ أَنَّ عَبدَ اللهِ بنَ الزُّبَيرِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ فِي بَيْعٍ أَوْ عَطَاءٍ أَعْطَتْهُ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنهَا: وَاللهِ لَتَنْتَهِيَنَّ عَائِشَةُ أَوْ لأَحْجُرَنَّ عَلَيْهَا، قَالَتْ : أََهُوَ قَالَ هَذَا ! قَالُوا : نَعَمْ . قَالَتْ : هُوَ للهِ عَلَيَّ نَذْرٌ أَنْ لاَ أُكَلِّمَ ابْنَ الزُّبَيْرِ أَبَداً، فَاسْتَشْفَعَ ابْنُ الزُّبَيْرِ إِلَيْهَا حِيْنَ طَالَتِ الهِجْرَةُ . فَقَالَتْ : لاَ، وَاللهِ لاَ أُشَفِّعُ فِيهِ أَبداً، وَلاَ أَتَحَنَّثُ إِلَى نَذْرِي . فَلَمَّا طَالَ ذَلِكَ عَلَى ابْنِ الزُّبَيرِ كَلَّمَ المِسْوَرَ بْنَ مَخْرَمَةَ، وَعبدَ الرحْمَانِ ابْنَ الأسْوَدِ بْنِ عَبْدِ يَغُوثَ وقَالَ لَهُمَا : أَنْشُدُكُمَا اللهَ لَمَا أَدْخَلْتُمَانِي عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، فَإِنَّهَا لاَ يَحِلُّ لَهَا أَنْ تَنْذِرَ قَطِيعَتِي، فَأَقْبَلَ بِهِ المِسْوَرُ، وَعَبدُ الرَّحْمَانِ حَتَّى اسْتَأذَنَا عَلَى عَائِشَةَ فَقَالاَ : السَّلاَمُ عَلَيْكِ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، أَنَدْخُلُ ؟ قَالَتْ عَائِشَةُ : ادْخُلُوا . قَالُوا : كُلُّنَا ؟ قَالَتْ: نَعَمْ ادْخُلُوا كُلُّكُمْ، وَلاَ تَعْلَمُ أَنَّ معَهُمَا ابْنَ الزُّبَيرِ، فَلَمَّا دَخَلُوا دَخَلَ ابْنُ الزُّبَيرِ الحِجَابَ فَاعْتَنَقَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، وَطَفِقَ يُنَاشِدُهَا وَيَبْكِي، وَطَفِقَ المِسْوَرُ، وَعَبدُ الرَّحْمَانِ يُنَاشِدَانِهَا إِلاَّ كَلَّمَتْهُ وَقَبِلَتْ مِنْهُ، وَيَقُولاَنِ : إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَمَّا قَدْ عَلِمْتِ مِنَ الهِجْرَةِ ؛ وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ، فَلَمَّا أَكْثَرُوا عَلَى عَائِشَةَ مِنَ التَّذْكِرَةِ وَالتَّحْرِيجِ، طَفِقَتْ تُذَكِّرُهُمَا وَتَبْكِي، وَتَقُولُ : إنِّي نَذَرْتُ وَالنَّذْرُ شَدِيدٌ، فَلَمْ يَزَالاَ بِهَا حَتَّى كَلَّمَتِ ابْنَ الزُّبَيرِ، وَأَعْتَقَتْ فِي نَذْرِهَا ذَلِكَ أَرْبَعِينَ رَقَبَةً، وَكَانَتْ تَذْكُرُ نَذْرَهَا بَعدَ ذَلِكَ فَتَبْكِي حَتَّى تَبِلَّ دُمُوعُهَا خِمَارَهَا . رواه البخاري
(370) Chapter: Ahadith about Dajjal and Portents of the Hour
'Auf bin Malik (May Allah be pleased with him) said:
'Aishah (May Allah be pleased with her) as told that 'Abdullah bin Az-Zubair (May Allah be pleased with them) had said in respect of selling of a gift which was presented to her: "By Allah! If 'Aishah does not stop this kind of thing, I will declare her incompetent to administer her property." 'Aishah (May Allah be pleased with her) asked: "Did He ('Abdullah bin Az-Zubair) say so?" The people said: "Yes." 'Aishah (May Allah be pleased with her) said: "I vow it before Allah that I will never speak to Ibn Az-Zubair." When this desertion lasted long, 'Abdullah bin Az-Zubair sought intercession with her, but she said: "By Allah I will not accept the intercession of anyone for him, and I will not commit a sin of breaking my vow." When this state of affairs was prolonged, Ibn Az-Zubair felt it hard on him. He said to Al-Miswar bin Makhramah and 'Abdur-Rahman bin Al-Aswad bin Yaghut: "I beseech you in the Name of Allah that you should take me to 'Aishah because it is unlawful for her to vow to sever relations with me." So Al-Miswar and 'Abdur-Rahman took him with them. They sought her permission, saying: "As-salamu 'alaika wa rahmatullahi wa barakatuhu! Shall we come in?" 'Aishah (May Allah be pleased with her) said: "Come in," They asked: "All of us?" She said: "All of you," not knowing that Ibn Az-Zubair was also with them. So, when they entered, Ibn Az-Zubair entered the screened place and got hold of 'Aishah (May Allah be pleased with her), his aunt. He was requesting her to forgive him and wept. Al-Miswar and 'Abdur-Rahman also pleaded on his behalf and requested her to speak to him and to accept his repentance. They said to her: "The Prophet (ﷺ) forbade to cut off relationship because it is unlawful for any Muslim not to talk to his (Muslim) brother (or sister, for that matter) for more than three (days)." So when they persisted in urging and reminding her of the superiority of having good relation with kith and kin, she began to weep, saying: "I have made a vow which is a matter of very serious nature." They persisted in their appeal till she spoke with 'Abdullah bin Az-Zubair, and she freed forty slaves as an expiation for breaking her vow. Later on, whenever she remembered her vow, she would weep so much that her veil would become wet with tears.
[Al- Bukhari].
Commentary: `Abdullah bin Az-Zubair (May Allah be pleased with him) was the real nephew of `Aishah (May Allah be pleased with her). She had made a vow that she would not talk to her nephew. She thought that such an oath was permissible as her nephew (the then governor of Makkah) had shown his intention to put a ban on the spending of `Aishah (May Allah be pleased with her). In his opinion, she was spending very lavishly in charity.
Later `Abdullah bin Az-Zubair (May Allah be pleased with him) realized his mistake and went to his aunt to seek forgiveness along with two persons as recommenders. After this, it was proper for her to break her oath and resume her relations with him. The expiation for breaking a vow is the same as that of breaking an oath, i.e., to feed ten indigent people on a scale of the average for the food of one's family, or cloth them, or give a slave his freedom. If one cannot afford any of these things, then he should fast for three days. (See Qur'an, 5:89) But `Aishah (May Allah be pleased with her), in her generosity, bought forty slaves and freed them.