লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক ও ‘উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৫৬-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: একদিন এক লোক একটি গাভী হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। যখন লোকটি ক্লান্ত হয়ে পড়ল, তখন সে তার উপর আরোহণ করল। তখন গাভীটি বলল, এ কাজের জন্য আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়নি; বরং আমাদেরকে জমিনে কৃষি কাজের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তখন লোকজন (বিস্ময়ে) বলে উঠল, সুবহা-নাল্ল-হ! গাভীও কথা বলছে? এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি এ বিষয়ে বিশ্বাস রাখি আর আবূ বকর এবং ’উমারও এ বিষয়ে বিশ্বাস রাখেন। অথচ তাঁরা দুজন কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন: একদিন এক রাখাল তার বকরির পালের কাছে ছিল। হঠাৎ এক নেকড়ে বাঘ থাবা মেরে পাল হতে একটি বকরি নিয়ে গেল। কিছু পরেই রাখাল বাঘটির কবল হতে বকরিটিকে উদ্ধার করে ফেলল। তখন বাঘটি রাখালকে বলল, হিংস্র জন্তুর রাজ্যের দিন এ বকরির রক্ষাকারী কে থাকবে? যেদিন আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ তার রাখাল থাকবে না। তখন লোকজন (বিস্ময়ে) বলে উঠল, সুবহা-নাল্ল-হ! নেকড়ে বাঘও কথা বলতে পারে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি তার উপর বিশ্বাস রাখি আর আবূ বকর এবং ’উমারও বিশ্বাস রাখেন। অথচ তারা দু’জন কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। (বুখারী ও মুসলিম)।
الفصل الاول (بَابِ مَنَاقِبِ أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: بَينا رجل يَسُوق بقرة إِذْ أعيي فَرَكِبَهَا فَقَالَتْ: إِنَّا لَمْ نُخْلَقْ لِهَذَا إِنَّمَا خُلِقْنَا لِحِرَاثَةِ الْأَرْضِ. فَقَالَ النَّاسُ: سُبْحَانَ اللَّهِ بَقَرَةٌ تَكَلَّمُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَإِنِّي أومن بِهَذَا أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ» . وَمَا هُمَا ثَمَّ وَقَالَ: بَيْنَمَا رَجُلٌ فِي غَنَمٍ لَهُ إِذْ عدا الذِّئْب فَذهب عَلَى شَاةٍ مِنْهَا فَأَخَذَهَا فَأَدْرَكَهَا صَاحِبُهَا فَاسْتَنْقَذَهَا فَقَالَ لَهُ الذِّئْبُ: فَمَنْ لَهَا يَوْمَ السَّبْعِ يَوْمَ لَا رَاعِيَ لَهَا غَيْرِي؟ فَقَالَ النَّاسُ: سُبْحَانَ الله ذِئْب يتَكَلَّم؟ . قَالَ: أُومِنُ بِهِ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَمَا هما ثمَّ. مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (3471) و مسلم (13 / 2388)، (6183) ۔ (مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (فَقَالَتْ: إِنَّا لَمْ نُخْلَقْ لِهَذَا) হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকে বুঝা যায় চতুষ্পদ জন্তু সাধারণত যে কাজে ব্যবহার করা হয় সে কাজ ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করা ঠিক না। এটাও সম্ভব হতে পারে যে, আমরা সৃষ্ট হয়েছি কৃষিকাজের জন্য এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য তাকে যে মহান কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেদিকে ইঙ্গিত করা। শুধু কৃষিকাজের জন্য সীমাবদ্ধ উদ্দেশ্য নয়, কেননা সকলের ঐকমত্য যে তাকে অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন: যাবাহ করা ও ভক্ষণ করা।
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَإِنِّي أومن بِهَذَا أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ» এখানে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে, ১) হতে পারে তিনি তাদের সংবাদ দিয়েছেন তারা সাথে সাথে বিশ্বাস করে নিয়েছে। ২) অথবা তারা যখন উক্ত ঘটনা শুনবে সাথে সাথে বিশ্বাস করে নিবে কোন বাধা ছাড়াই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আওয়ামী ৯/৩৬৮৬)
ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনি উক্ত ঘটনা সত্যায়নের ব্যাপারে আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)-কে খাস করেছেন, কেননা তাদের নবী (সা.)-এর নিশ্চিত জ্ঞান রয়েছে যে, তারা বলার সাথে সাথে বিশ্বাস করে নিবে।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি বিশ্বাস করি গরুর কথা বলার ব্যাপারে আমাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে এবং আবূ বাকর ও ‘উমার তারাও বিশ্বাস করে, কেননা আমি তাদের যে সংবাদ দেই না কেন। তারা তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে থাকে। কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (يَوْمَ السَّبْعِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেদিন মানুষ মৃত্যুবরণ করবে এবং চতুষ্পদ জন্তুগুলো অবশিষ্ট থাকবে। কেউ কেউ বলেন, জাহিলীদের একটা ঈদের দিন হিসেবে যেদিন তারা একটি স্থানে একত্রিত হয়ে খেল-তামাশায় মত্ত থাকত, আর পশুগুলো বাড়ী রেখে আসত এবং হিংস্র প্রাণী তা খেয়ে নিত। কেউ কেউ বলেন, এমন স্থান যেখানে সকলে উপস্থিত হবে এটা দ্বারা কিয়ামতের দিন উদ্দেশ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ) কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বাক্যের অর্থ হলো তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন কোন প্রকার হিসাব ছাড়া এবং খারাপ ‘আমলের কোন যাচাই বাছাই ছাড়া, কেননা শুধু ঈমানের দাবী হলো আল্লাহর অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করা। ১. ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মানুষ বাঘের ও গরুর কথা বলার ঘটনা শুনে আশ্চর্য হবে কিন্তু আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) তার বিপরীত তারা শুনার সাথে সাথে বিশ্বাস করে নিবে। নবী (সা.) তাদের ব্যাপারে এ কথা বলেছেন তাদের নির্ভরযোগ্য দৃঢ় ও শক্তিশালী বিশ্বাস থাকার কারণে এবং আল্লাহর মহান রাজত্ব ও ক্ষমতার ব্যাপারে তাদের জ্ঞান থাকার কারণে।
ইমাম দাউদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (يَوْمَ السَّبْعِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেদিন হিংস্র প্রাণী তোমাকে তাড়া করবে আর তোমার পলায়নের কারণে আর কোন রাখাল অবশিষ্ট থাকবে না। হে রাখাল! তখন আমি যা ইচ্ছা তাই করব তোমার পশুর সাথে। ইবনুল আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কিয়ামতের দিন অথবা আতঙ্কের দিন। (শারহুন নাবাবী হা. ১৫/২৩৮৮)