৫৮৬৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬৫-[৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ভ্রমণ করানো হয়, তাঁকে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছানো হয়েছে। আর তা ষষ্ঠ আকাশে অবস্থিত। (সিদরাতুল মুনতাহা হলো) ভূপৃষ্ঠ হতে যা সেখান হতে কোন মাধ্যম ছাড়া তা উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর উর্ধ্বজগত হতে যা কিছু অবতরণ করা হয়, তা সে স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং তথা হতে গ্রহণ করা হয় (অর্থাৎ ফেরেশতাগণ নিয়ে যান)। এরপর ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি পাঠ করলেন- (اِذۡ یَغۡشَی السِّدۡرَۃَ مَا یَغۡشٰی) “যখন বৃক্ষটি যা দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার ছিল তা দ্বারা আচ্ছাদিত হয়”- (সূরাহ আন্ নাজম ৫৩ : ১৬)। (এর ব্যাখ্যায়) তিনি বললেন, এগুলো ছিল স্বর্ণের পতঙ্গ। অতঃপর ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মিরাজের রাত্রে তিনটি জিনিস প্রদান করা হয়েছে।
১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। ২. সূরাহ আল বাক্বারার শেষ কয়েকটি আয়াত এবং ৩. নবী (সা.) -এর উম্মতের মধ্য হতে যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি, তাদের ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

وَعَن عبدِ الله قَالَ: لَمَّا أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْتُهِيَ بِهِ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَهِيَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ إِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا يُعْرَجُ بِهِ مِنَ الْأَرْضِ فَيُقْبَضُ مِنْهَا وَإِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا يُهْبَطُ بِهِ مِنْ فَوْقِهَا فَيُقْبَضُ مِنْهَا قَالَ: [إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى] . قَالَ: فِرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ: فَأُعْطِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثًا: أُعْطِيَ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ وَأُعْطِيَ خَوَاتِيمَ سُورَةِ الْبَقَرَةِ وَغُفِرَ لمن لَا يشرِكُ باللَّهِ من أمته شَيْئا الْمُقْحمَات. رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (279 / 173)، (431) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (وَهِيَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ) অর্থাৎ তা (সিদরাতুল মুনতাহা ছিল) ষষ্ঠ আকাশে অন্যান্য হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিদরাতুল মুনতাহা আছে সপ্তম আকাশে। এক্ষেত্রে হাদীসের মাঝে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, অধিকাংশ রাবীদের মতে সঠিক কথা হলো, সিদরাতুল মুনতাহা সপ্তম আকাশে আছে।
তাছাড়াও আরো একটি বিষয় হলো যে, (سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى) অর্থ শেষ সীমানার বড়ই গাছ। যেহেতু এটি একটি শেষ জায়গা এবং সেখানে এসেই থেমে যায়, যা কিছু উপর থেকে নাযিল হয় ও নিচু থেকে উপরে উঠে। তাই শেষ জায়গা হিসেবে তার অবস্থান সপ্তম আকাশে হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-ও জামিউল উসূলে এই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, উভয় হাদীসের মাঝে এভাবেও সমন্বয় করা যায় যে, সিদরাতুল মুনতাহার মূল শিকড়টি হলো ষষ্ঠ আকাশে আর তার বেশিরভাগ অংশই হলো সপ্তম আকাশে।
খলীল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা রয়েছে সপ্তম আকাশে যা আসমানসমূহ ও জান্নাতকে ছায়াদান করেছে। কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দুনিয়ার বাহ্যিক দুটি নহর তথা নীল ও ফুরাত, এই দুটি বের হয়েছে সিদরাতুল মুনতাহা থেকে। যেহেতু এই নহর (নদী) দুটি পৃথিবীতে রয়েছে। তাই এখান থেকে বুঝা যায় যে, সিদরাতুল মুনতাহাও পৃথিবীতে রয়েছে। অতএব এই অর্থ যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে সিদরাতুল মুনতাহার সপ্তম আকাশে থাকার পাশাপাশি আরো অন্যান্য আকাশেও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
(يَنْتَهِي مَا يُعْرَجُ بِهِ مِنَ الْأَرْضِ) অর্থাৎ জমিন থেকে যা উপরে উঠে তা সেখানে গিয়েই থেমে যায়। যা উপরে উঠে এর ব্যাখ্যায় মিরকাত প্রণেতা বলেন, যে সকল 'আমল ও আত্মাগুলো জমিন থেকে উপরে উঠে সেগুলোই এখানে উদ্দেশ্য।
(وَإِلَيْهَا يَنْتَهِي مَا يُهْبَطُ بِهِ مِنْ فَوْقِهَا) অর্থাৎ সেখানেই থেমে যায় যা কিছু উপর থেকে নেমে আসে। যা কিছু উপর থেকে নেমে আসে এর ব্যাখ্যায় মিরক্বাত প্রণেতা বলেন যে, ওয়াহী এবং আসমানী বিধান উপর থেকে নিচে নেমে আসে সেগুলোই এখানে উদ্দেশ্য।
(وَغُفِرَ لمن لَا يشرِكُ باللَّهِ من أمته شَيْئا الْمُقْحمَات) অর্থাৎ ঐ ব্যক্তিকে মাফ করে দেয়া হবে যে, তাঁর উম্মাতের মধ্য হতে আল্লাহর সাথে কোন বড় ধরনের শিরক করবে না। এর ব্যাখ্যায় মিরকাত প্রণেতা বলেন, যে ব্যক্তি এমন বড় গুনাহ করবে না, যা তাকে একেবারে জাহান্নামে নিয়ে গিয়েই ছাড়বে। যদি না আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দেন।
ইবনু হাজার আল আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। যেমন, মুশরিকরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
এখানে এটি উদ্দেশ্য নয় যে, তাঁর উম্মতকে একেবারেই শাস্তি দেয়া হবে না। কেননা শারী'আতের বিভিন্ন দলীল থেকে এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের ইজমা’র মাধ্যমে জানা যায় যে, একত্বতায় বিশ্বাসী অনেক নাফরমানকে শাস্তি দেয়া হবে। অতএব তারা যদি একত্বতায় বিশ্বাস করার পরেও নাফরমানী করে তাহলে তাদেরকেও জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু তারা মুশরিকদের মতো চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)