৫৭১৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭১৫-[১৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: যে রাতে আমার মি’রাজ হয়েছে, সে রাত্রে আমি মূসা আলায়হিস সালাম -কে দেখেছি, তিনি শ্যামবর্ণ, লম্বাকার এবং কোঁকড়ানো চুলবিশিষ্ট লোক। দেখতে ’শানুয়াহ্’ গোত্রের লোকেদের একজন বলে মনে হয়। আর ’ঈসা আলায়হিস সালাম -কে দেখেছি মধ্যম গড়নের লাল-সাদা সংমিশ্রিত বর্ণের, মাথার চুলগুলো সোজা। অতঃপর আমি দেখতে পেয়েছি জাহান্নামের দারোগা মালিক এবং দাজ্জালকেও ঐ সকল নিদর্শনগুলোর মধ্যে, যেগুলো আল্লাহর তা’আলা আমাকে দেখিয়েছেন। অতএব তার সাথে তোমার যে সাক্ষাৎ ঘটবে, তাতে তুমি কোন সন্দেহ পোষণ করো না। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي مُوسَى رَجُلًا آدَمَ طُوَالًا جَعْدًا كَأَنَّهُ شنُوءَة وَرَأَيْت رَجُلًا مَرْبُوعَ الْخَلْقِ إِلَى الْحُمْرَةِ وَالْبَيَاضِ سَبْطَ الرَّأْسِ وَرَأَيْتُ مَالِكًا خَازِنَ النَّارِ وَالدَّجَّالَ فِي آيَاتٍ أَرَاهُنَّ اللَّهُ إِيَّاهُ فَلَا تَكُنْ فِي مرية من لِقَائِه» . مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (3239) و مسلم (267 / 165)، (419) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (مُوسَى رَجُلًا آدَمَ طُوَالًا جَعْدًا) উপরের হাদীসে মূসা আলায়হিস সালাম-কে শানূয়াহ্ গোত্রের মানুষদের সাথে সাদৃশ্য রূপ দেখানো হয়েছে। এ হাদীসে তা অনেকটা স্পষ্ট করে দেয়া হলো। অথাৎ মূসা আলায়হিস সালাম-এর গায়ের রং ছিল বাদামী এবং তার চুল ছিল কিছুটা কোকড়া এবং তিনি লম্বা ছিলেন।
(وَرَأَيْت رَجُلًا مَرْبُوعَ الْخَلْقِ) এখানে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর শারীরিক কাঠামোর কথা বলা হয়েছে। উপরের হাদীসে তাকে ‘উরওয়াহ্ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ)-এর সাথে উপমা দেয়া হয়েছে। এই হাদীসে সাদৃশ্যের দিকটি স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তিনি ছিলেন মধ্যম গঠনের লোক। না অধিক লম্বা ছিলেন, না খাটো। এ ধরনের মানুষকে ‘আরবীতে ‘মারবূ’ বা ‘রবাআহ' বলা হয়। হাদীসে উভয় শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে। আর শরীরের রংয়ের দিক থেকে তিনি ছিলেন সাদা ও লাল মিশ্রিত। যাকে ফর্সা ও সুন্দর বলতে পারি। অর্থাৎ তার রং ধবধবে ফ্যাকাসে সাদা ছিল না। বরং সাদার মাঝে লালিমার প্রতিভাত ছিল। আর তার চুল ছিল সোজা। অর্থাৎ মূসা আলায়হিস সালাম-এর মতো তাঁর চুল কোকড়া ছিল না।
(وَالدَّجَّالَ فِي آيَاتٍ) “আর দাজ্জালকে দেখেছেন কতিপয় নিদর্শনসহ।” অর্থাৎ দাজ্জালকে পাঠানো হয়েছে মানুষের ঈমান পরীক্ষার জন্য। আর এ কারণেই তাকে এমন কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যা অস্বাভাবিক। আর এই অস্বাভাবিক কর্মগুলোকেই হাদীসে আয়াত বা নিদর্শন বলা হয়েছে। দাজ্জালকে দেখার সময় রাসূল (সা.) তার কতিপয় নিদর্শনও দেখেছেন।
তবে বাক্যটির আরেকটি উদ্দেশ্য এই হতে পারে যে, রাসূল (সা.) মি'রাজের রাতে আল্লাহ তা'আলার কতিপয় নিদর্শন দেখেছেন। নিদর্শন দর্শনের সাথে সাথে দাজ্জালকেও দর্শন করেছেন। তখন ‘আয়াত’ বা নিদর্শন দ্বারা দাজ্জালের নিদর্শন বা অস্বাভাবিক কর্ম উদ্দেশ্য হবে না, বরং আল্লাহ তা'আলার অন্যান্য নিদর্শন উদ্দেশ্য হবে, যার কথা আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন -
(لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی) “নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।” (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ১৮)।
মি'রাজের রাত মূসা আলায়হিস সালাম-সহ অন্যান্য নিদর্শনের সাক্ষাতের ব্যাপারে রাসূল (সা.) এর মনে যেন কোন সন্দেহের প্রশ্রয় না পায় সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ করছেন
(وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ فَلَا تَکُنۡ فِیۡ مِرۡیَۃٍ مِّنۡ لِّقَآئِهٖ) “আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, অতএব আপনি তার সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে সন্দিহান হবেন না”- (সূরাহ্ আস্ সাজদাহ্ ৩২ : ২৩)। (ইমাম নবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ, অধ্যায়: ইসরা)