লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৫০-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে গেলেন। এক ব্যক্তি ’’হে আবুল কাসিম!’’ বলে ডাক দিলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। লোকটি বলল, আমি ঐ ব্যক্তিকে ডেকেছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখতে পার; কিন্তু আমার উপনামে উপনাম রেখ না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْأَسَامِىْ
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي السُّوقِ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا أَبَا الْقَاسِمِ فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّمَا دَعَوْتُ هَذَا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: «سموا باسمي وَلَا تكنوا بكنيتي» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ ত্ববারানীর বর্ণনায় রয়েছে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত (وَلَا تَكْنُوْا بِكُنِيَّتِىْ) অর্থাৎ আমার উপনামে নামকরণ করো না। কেননা উপনাম সম্মানার্থে হয়ে থাকে। শুধু নাম সম্মানের বিপরীত, অতঃপর তিনি তাদেরকে এটা হতে নিষেধ করেন। যাতে করে সন্দেহে পতিত না হয় যখন কতিপয় মানুষকে আহবান করা হয়। অতঃপর ঘোষণা দেয়া হয়, নিশ্চয় ‘আরবদের ‘আলিমগণ বলেন, নাম হয়ত প্রশংসার ঘোষণা দিবে অথবা বদনামের তার নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপনাম আবুল কাসিম ও তার لقب উপাধি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপনামে বা মূল নামে কখন রাখা যাবে বা যাবে না- এ প্রসঙ্গে নিম্নে ইমামদের মতভেদ উল্লেখ করা হলো।
১. ইমাম শাফি‘ঈ ও আহলে যাহির-এর অভিমত হলো : নিশ্চয় আবুল কাসিম নামে কারও নামকরণ করা কখনও বৈধ হবে না। চাই সেই নাম মুহাম্মাদ বা আহমাদ হোক বা না হোক। আনাস (রাঃ) বর্ণিত মুসলিমের বাহ্যিক হাদীস থেকে উপলব্ধি করা যায়- এ মতটি।
২. এই নিষেধ রহিত হয়ে গেছে। এ আদেশ প্রথম দিকে ছিল। এ অর্থই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর রহিত হয়েছে। জামহূর ‘উলামা বলেছেন, অতঃপর প্রত্যেকের জন্য আবুল কাসিম নামে নামকরণ করা বর্তমানে বৈধ। সেটা তার নাম মুহাম্মাদ এবং আহমাদ বা অন্য কিছু হোক এতে অসুবিধা নেই। এ মতটি ইমাম মালিক-এর। কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ মতটি অধিকাংশ সালাফ ও মিসরের ফকীহগণেরও অধিকাংশ ‘আলিমগণের এবং প্রসিদ্ধ রয়েছে এক জামা‘আত আবুল কাসিম উপনামে নাম রেখেছে। এর পরেও বর্তমান পর্যন্ত।
৩. ইবনু জারীর-এর মত নিশ্চয় এটা রহিত হয়নি। শুধু নিষেধ ছিল পবিত্রকরণে ও আদাবের (শিষ্টাচারিতার) জন্য, হারাম করার জন্য নয়।
৪. নিশ্চয় নিষেধ আবুল কাসিম উপনামে ডাকা থেকে। নির্দিষ্ট ঐ ব্যক্তির জন্য যার নাম মুহাম্মাদ অথবা আহমাদ এবং ক্ষতি নেই অসুবিধা নেই শুধু উপনামে ঐ ব্যক্তির জন্য যে এই দুই নামের মধ্যে থেকে কোন একটি নামে নাম রাখে না। এটা সালাফের এক জামা‘আতের উক্তি। এ প্রসঙ্গে মারফূ‘ হাদীস জাবির হতে বর্ণিত হয়েছে।
৫. নিশ্চয় সাধারণভাবে আবুল কাসিম উপনামে ডাকা থেকে নিষেধ করা হয় এবং কাসিম নাম রাখা থেকে নিষেধ করা হয়। যাতে উপনামে ডাকা হবে না তার আববাকে আবুল কাসিম নামে অথচ মারওয়ান ইবনু হাকাম তার ছেলের নাম পরিবর্তন করে ‘আবদুল মালিক রাখলেন। যখন তার কাছে পৌঁছল এ হাদীস তখন তার ছেলের নাম রাখলেন ‘আবদুল মালিক। তার ছেলের নাম প্রথমে রেখেছিলেন কাসিম এবং কতিপয় আনসার সাহাবীরা এরূপ করেছেন।
৬. সাধারণত মুহাম্মাদ নাম রাখা নিষেধ করা হয়। চাই তার উপনাম হোক বা আসল নাম হোক- এ প্রসঙ্গে হাদীস এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে تُسَمُّونَ أَوْلَادَكُمْ مُحَمَّدًا ثُمَّ تَلْعَنُونَهُمْ অর্থাৎ তোমরা তোমাদের সন্তানদের নাম রাখ মুহাম্মাদ, অতঃপর তোমরা তাদের প্রতি অভিসম্পাত কর লা‘নাত কর। ‘উমার চিঠি লিখেন কুফাবাসীর প্রতি, তোমরা নবীর নামে কারও নাম রাখিও না। মাদানীহ্-এর এক জামা‘আতকে আদেশ করেন তাদের সন্তানদের মুহাম্মাদ নাম পরিবর্তন করার জন্য। এক জামা‘আত উল্লেখ করেন তার জন্য নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন এ ব্যাপারে এবং এর মাধ্যমে তিনি নাম রাখেন, অতঃপর তিনি তাদেরকে ত্যাগ করেন। কাযী বলেনঃ অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নিশ্চয় ‘উমার এ কাজটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামের সম্মান করার জন্য করেন।
শিক্ষা : কুরআন ও সহীহ হাদীস বিরোধী কোন নাম হলে সেই নাম পরিবর্তন করা উচিত। যেরূপ সহাবা (রাঃ) করেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় কোন অবস্থায় ঠিক না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে বা উপনামে বা উপাধিতে নাম রাখা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৩১/১) [সম্পাদক]