১১২৯

পরিচ্ছেদঃ

১১২৯। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বাকর (রাঃ) গারে সাওর অভিমুখে রওয়ানা করলেন অতঃপর সেখানে পৌঁছে তার মধ্যে প্রবেশ করলেন। এরপর একটি মাকড়সা এসে গর্তের প্রবেশ পথে জাল বুনে দিল। এমতাবস্থায় কুরাইশরা এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুসন্ধান করতে লাগল, তারা যখন গর্তের প্রবেশ পথে মাকড়সার জাল বোনা রয়েছে দেখতে পেলো তখন তারা বললোঃ এতে কেউ প্রবেশ করেনি। অথচ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন আর আবু বাকর (রাঃ) পাহারা দিচ্ছিলেন। আবু বাকর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, ওরা আপনার সম্প্রদায়ের লোক আপনাকে সন্ধান করছে। আল্লাহর কসম করে বলছি আমি আমার নিজের জন্য কাঁদছিনা বরং এ ভয়ে কাঁদছি যে, আমি আপনার ব্যাপারে এমন কিছু দেখব যাকে আমি অপছন্দ করি। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি চিন্তিত হয়ো না অবশ্যই আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন।

হাদিসটি দুর্বল।

হাদীসটিকে হাফিয আবু বাকর কাযী "মুসনাদু আবী বাকর" গ্রন্থে (৯১/১-২) বাশশার আল-খাফফাফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ দুটি কারণে দুর্বলঃ

১। হাদীসটির সনদ মুরসাল। কারণ, হাসান বাসরী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেছেন, তিনি একজন তাবেঈ বহু মুরসাল হাদীস বর্ণনাকারী এবং তাদলীসকারী।

২। বর্ণনাকারী বাশশার আল-খাফফাফ, তিনি হচ্ছেন বাশশার ইবনে মূসা, তাকে হাফিয যাহাবী "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেনঃ আবু যুর’য়াহ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। ইবনু আদী বলেনঃ আমি আশা করি তার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী "আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি দুর্বল, বহু ভুলকারী, বহু হাদীস বর্ণনাকারী।

আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির শেষাংশ (নিচে দাগ দেয়া অংশ) সহীহ। কারণ, কুরআনে এর সমর্থনে আয়াত বর্ণিত হওয়ার কারণে। এছাড়া আবু বাকর (রাঃ) যে কথা বলেন তার সমর্থনে বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাফিয ইবনু কাসীর "আল-বিদায়াহ অন-নিহায়াহ" গ্রন্থে (৩/১৮১) বলেনঃ এটি হাসান বাসরী হতে মুরসাল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, শাহেদ থাকার কারণে এটি হাসান পর্যায়ভুক্ত। তিনি শাহেদ দ্বারা ইমাম আহমাদ কর্তৃক "আল-মুসনাদ" গ্রন্থে (৩২৫১), আব্দুর রাযযাক কর্তৃক "আল-মুসান্নাফ" গ্রন্থে (৫/৩৮৯) আর তার থেকে ইমাম ত্ববারানী কর্তৃক “আল-মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (১১/৪০৭/১২১৫৫) উসমান আল-জাযারী সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে বুঝিয়েছেন।

কিন্তু উক্ত উসমান আল-জাযারী দ্বারা যদি উসমান ইবনু আমর ইবনে সাজ আল-জাযারীকে বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে তার সম্পর্কে ইবনু আবী হাতীম "আল-জারহু অত-তা’দীল" গ্রন্থে (৩/১/১৬২) তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেনঃ তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। আর হাফিয যাহাবী তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত উল্লেখ করে বলেছেনঃ তার সমালোচনা করা হয়েছে। আর তার দ্বারা যদি উসমান ইবনু সাজ আল-জাযারীকে বুঝানো হয়ে থাকে, তাহলে এ ইবনু সাজ আর ইবনু আমর একই ব্যক্তি নয়। এ ইবনু সাজ সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাহযীব” গ্রন্থে বলেনঃ তার অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় না, অর্থাৎ ইবনু সাজ অপরিচিত, তারা দু’জন একজন নয়। আর তিনি “আত-তাকরীব” গ্রন্থে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য না করে বলেন তার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।

এ ইবনু আমরকে ইবনু হিব্বান ব্যতীত অন্য কেউ নির্ভরযোগ্য বলেননি। আর তিনি যে এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শনকারী তা জানা বিষয়। এ কারণে তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না যেমনটি আবু হাতিম বলেছেন।

হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৭/২৭) বলেনঃ হাদীসটি ইমাম আহমাদ ও ত্ববারানী বর্ণনা করেছেন, এর সনদের মধ্যে উসমান ইবনু আমর আল-জাযারী রয়েছেন, তাকে ইবনু হিব্বান নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন আর অন্য মুহাদ্দিসগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।

এ কারণে আহমাদ শাকের "আল-মুসনাদ" গ্রন্থের টীকায় বলেনঃ এ হাদীসের সনদের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে।

আল্লাহত (وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَمْ تَرَوْهَا) "এবং এমন এক বাহিনী দ্বারা তাকে শক্তি যোগালেন যাদের তোমরা দেখতে পাওনি” (সূরা তওবা : ৪০) এ বাণী হাদীসটির দুর্বল হওয়াকে আরো শক্তিশালী করছে। কারণ আয়াতটি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে সাহায্য এমন সব যোদ্ধা দ্বারা করা হয়েছে যাদেরকে দেখা যায়নি। অথচ হাদীসে বলা হচ্ছে সাহায্য করা হয়েছিল মাকড়সার দ্বারা যাকে দেখা যাচ্ছিল।

আয়াতে ’জুনুদ’ দ্বারা ফেরেশতাদেরকেই যে বুঝানো হয়েছে তাই বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ, মাকড়সা আর কবুতর নয়। এ কারণেই ইমাম বাগাবী তার তাফসীর গ্রন্থে (৪/১৭৪) বলেনঃ ফেরেশতারা অবতরণ করে কাফেরদের চেহারা ও চোখগুলোকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পাওয়া থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছিল। কোন কোন হাদীসের মধ্যে এ অর্থকেই স্পষ্ট করা হয়েছে। আবু নুয়াঈম আসমা বিনতু আবী বাকর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আবু বাকর (রাঃ) গর্তের মুখের দিকে এক ব্যক্তিকে দেখে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! সে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। এ সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কক্ষণও নয়, এ মুহুর্তেই ফেরেশতারা তাকে তাদের ডানা দিয়ে আড়াল করে রাখবে। এ সময় সে ব্যক্তি তাদের দু’জনকে সামনে করে পেশাব করতে বসে পড়ল। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে যদি তোমাকে দেখতে পেতো তাহলে এভাবে বসত না।

হাদীসটিকে ত্ববারানীও "আল-মুজামুল কাবীর" (২৪/১০৬/২৮৪) ও “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/২৯/১-৩০/১) বর্ণনা করেছেন।

এ হাদীসটি হাসান পর্যায়ভুক্ত। বিস্তারিত জানতে চাইলে মূল গ্রন্থ দেখার অনুরোধ করছি।

[কেউ যদি বলেনঃ কবুতরগুলোই ফেরেশতা ছিলো আর তাদের ডানা দিয়েই তারা আড়াল করেছিল। কথাটি সঠিক হবে না এ কারণে যে, যদি কবুতর দুটি ডানা দিয়ে আড়াল করতো তাহলে অবশ্যই তারা সন্দেহ করতো এবং বুঝেও ফেলতো যে এখানে অবশ্যই কিছু আছে। অতএব অদৃশ্য ডানা দিয়েই আড়াল করা হয়েছিল]।

انطلق النبي صلى الله عليه وسلم وأبو بكر إلى الغار، فدخلا فيه، فجاءت العنكبوت، فنسجت على باب الغار، وجاءت قريش يطلبون النبي صلى الله عليه وسلم، وكانوا إذا روأوا على باب الغار نسج العنكبوت، قالوا: لم يدخله أحد، وكان النبي صلى الله عليه وسلم قائما يصلي وأبو بكر يرتقب، فقال أبو بكر رضي الله عنه للنبي صلى الله عليه وسلم فداك أبي وأمي هؤلاء قومك يطلبونك! أما والله ما على نفسي أبكي، ولكن مخافة أن أرى فيك ما أكره، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم: لا تحزن إن الله معنا ضعيف - أخرجه الحافظ أبو بكر القاضي في " مسند أبي بكر " (ق 91/1 - 2) : حدثنا بشار الخفاف قال: حدثنا جعفر بن سليمان قال: حدثنا أبو عمران الجوني قال: حدثنا المعلى بن زياد عن الحسن قال: فذكره قلت: وهذا إسناد ضعيف، وله علتان الأولى: الإرسال، فإن الحسن هو البصري وهو تابعي كثير الإرسال والتدليس والأخرى: ضعف الخفاف، وهو بشار بن موسى أورده الذهبي في " الضعفاء " وقال ضعفه أبو زرعة، وقال البخاري: منكر الحديث، وقال ابن عدي: أرجو أنه لا بأس به وقال الحافظ في التقريب ضعيف كثير الغلط، كثير الحديث قلت: وإنما يصح من الحديث آخره لوروده في القرآن الكريم: " إلا تنصروه فقد نصره الله، إذ أخرجه الذين كفروا ثاني اثنين إذ هما في الغار إذ يقول لصاحبه لا تحزن إن الله معنا، فأنزل الله سكينته عليه، وأيده بجنود لم تروها وقول أبي بكر: " أما والله.. " في الصحيحين نحوه من حديث البراء وقال الحافظ ابن كثير في " البداية " (3/181) " وهذا مرسل عن الحسن، وهو حسن بما له من الشاهد " كذا قال! ويعني بالشاهد ما ساقه من طريق أحمد، وهذا في " المسند " (3251) من طريق عبد الرزاق في " المصنف " (5/389) ، وعنه الطبراني في " المعجم الكبير " (11/407/12155) من طريق عثمان الجزري أن مقسما مولى ابن عباس أخبره عن ابن عباس في قوله: " وإذ يمكر بك الذين كفروا ليثبتوك " قال: تشاورت قريش ليلة بمكة، فقال بعضهم: إذا أصبح فأثبتوه بالوثاق يريدون النبي صلى الله عليه وسلم، وقال بعضهم: اقتلوه، وقال بعضهم: بل أخرجوه، فأطلع الله عز وجل نبيه على ذلك، فبات علي على فراش النبي صلى الله عليه وسلم تلك الليلة، وخرج النبي صلى الله عليه وسلم حتى لحق بالغار، وبات المشركون يحرسون عليا، يحسبونه النبي صلى الله عليه وسلم فلما أصبحوا ثاروا إليه، فلما رأوا عليا رد الله مكرهم، فقالوا: أين صاحبك هذا؟ قال: لا أدري، فاقتصوا أثره، فلما بلغوا الجبل خلط عليهم، فصعدوا في الجبل، فمروا بالغار، فرأوا على بابه نسج العنكبوت، فقالوا: لودخل ههنا لم يكن نسج العنكبوت على بابه، فمكث فيه ثلاث ليال قال ابن كثير عقبه " وهذا إسناد حسن، وهو من أجود ما روي في قصة العنكبوت على فم الغار " كذا قال، وليس بحسن في نقدي، لأن عثمان الجزري إن كان هو عثمان بن عمرو بن ساج الجزري فقد قال ابن أبي حاتم في " الجروح والتعديل " (3/1/162) عن أبيه " لا يحتج به " وأورده الذهبي في " الضعفاء " وقال تكلم فيه وإن كان هو عثمان بن ساج الجزري ليس بينهما عمرو، فقد جنح الحافظ في " التهذيب " إلى أنه غير الأول، ولا يعرف حاله، ولم يفرق بينهما في " التقريب "، وقال " فيه ضعف وابن عمرو لم يوثقه أحد غير ابن حبان، ومن المعروف تساهله في التوثيق، ولذلك فهو ضعيف لا يحتج به كما قال أبو حاتم وقال الهيثمي في " المجمع " (7/27) " رواه أحمد والطبراني، وفيه عثمان بن عمرو الجزري، وثقه ابن حبان وضعفه غيره، وبقية رجاله رجال الصحيح ولذلك قال المحقق أحمد شاكر في تعليقه على " المسند في إسناده نظر ثم إن الآية المتقدمة " وأيده بجنود لم تروها " فيها ما يؤكد ضعف الحديث، لأنها صريحة بأن النصر والتأييد إنما كان بجنود لا ترى، والحديث يثبت أن نصره صلى الله عليه وسلم كان بالعنكبوت، وهو مما يرى، فتأمل والأشبه بالآية أن الجنود فيها إنما هم الملائكة، وليس العنكبوت ولا الحمامتين، ولذلك قال البغوي في " تفسيره " (4/174) للآية وهم الملائكة نزلوا يصرفون وجوه الكفار وأبصارهم عن رؤيته وقد جاء في بعض الحديث ما يشهد لهذا المعنى، وهو ما أخرج أبو نعيم عن أسماء بنت أبي بكر رضي الله عنها " أن أبا بكر رضي الله عنه رأى رجلا مواجه الغار، فقال: يا رسول الله إنه لرائينا، قال: كلا إن الملائكة تستره الآن بأجنحتها، فلم ينشب الرجل أن قعد يبول مستقبلهما، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا أبا بكر لوكان يراك ما فعل هذا وأخرجه الطبراني مطولا في قصة الهجرة، وقال الهيثمي (6/54) " رواه الطبراني وفيه يعقوب هذا أنه حسن الحديث، وقال الحافظ فيه " صدوق، ربما وهم فإذا لم يكن في الإسناد علة أخرى فهو حسن، ولكني لا أستطيع الجزم بذلك لأن الهيثمي رحمه الله قد عهدنا منه السكوت في كثير من الأحيان عن العلة في الحديث مثل الانقطاع والتدليس ونحوذلك، ولذلك نراه نادرا ما يقول: إسناد صحيح، أو: إسناد حسن، وإنما يقول: رجاله ثقات، أوموثقون. أو: فيه فلان وهو ضعيف، أو: مختلف فيه ونحوذلك. ولذلك فلا ينبغي للعارف بهذا العلم أن يصحح أويحسن بناء على مثل تلك العبارات منه. فإذا يسر الله لنا الوقوف على إسناد الطبراني أوأبي نعيم استطعنا الحكم على الحديث بما يستحقه من رتبة. والله الموفق ثم وقفت على إسناده في " المعجم الكبير " للطبراني (24/106/284) فتبين أنه حسن لولا أن شيخ الطبراني أحمد بن عمرو الخلال المكي لم أقف له على ترجمة، وقد أخرج له في " المعجم الأوسط " (1/29/1 - 30/1) نحو16 حديثا، مما يدل على أنه من شيوخه المشهورين، فإن عرف أو توبع فالحديث حسن، يصلح دليلا على نكارة ذكر العنكبوت والحمامتين. والله أعلم


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ