৩০১০

পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানসমূহ

৩০১০-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় ’উমরা বা জীবনস্বত্ব যাকে দেয়া হয়েছে, তার ওয়ারিসগণই তা উত্তরাধিকাররূপে পাবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْعَطَايَا

وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْعُمْرَى مِيرَاثٌ لِأَهْلِهَا» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি, ‘‘যে কোনো ব্যক্তি জীবনস্বত্ব দান করবে, তাহলে সে জীবনস্বত্ব দান তার জন্য এবং তার পরবর্তীর জন্য, কেননা জীবনস্বত্ব যাকে দান করা হয়েছে, তা যে দান করেছে তার কাছে আর ফিরে আসবে না, কেননা সে এমন এক দান করেছে যাতে উত্তরাধিকারী পতিত হয়েছে।’’ অন্য বর্ণনাতে আছে- ‘‘যে ব্যক্তি জীবনস্বত্ব দান করবে, সেক্ষেত্রে জীবনস্বত্ব দান তার জন্য এবং তার পরবর্তীর জন্য ..... শেষ পর্যন্ত। অন্য বর্ণনায় আছে- ‘‘জাবির বলেন, জীবনস্বত্ব দান কেবল আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আগত) কথাটি বলার মাধ্যমে বৈধ করেছেন; আর ত হলো, এটা তোমার জন্য ও তোমার পরবর্তীদের জন্য। আর যখন বলবে, এটা তোমার বেঁচে থাকা পর্যন্ত তোমার জন্য, তাহলে নিশ্চয় তা তার মালিকের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। জাবির হতে অন্য বর্ণনাতে এসেছে- ‘‘নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘জীবনস্বত্ব দান ঐ ব্যক্তির জন্য যাকে তা দান করা হয়েছে।’’ অন্য বর্ণনাতে এসেছে, ‘‘জীবনস্বত্ব দান ঐ ব্যক্তির জন্য বৈধ।’’ অন্য বর্ণনাতে আছে, ‘‘জীবনস্বত্ব দান উত্তবাধিকারীর।’’ আমাদের সাথীগণ এবং অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, জীবনস্বত্ব দানের উদাহরণ এরূপ: যেমন কোনো ব্যক্তি বলল, আমি তোমাকে এ বাড়ীটি জীবনস্বত্ব স্বরূপ দান করলাম। অথবা একে আমি তোমার বয়স পর্যন্ত, অথবা তোমার জীবন পর্যন্ত অথবা তোমার জীবন-যাপন করা পর্যন্ত অথবা তোমার জীবিত থাকা পর্যন্ত অথবা তোমার অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত তোমার জন্য নির্ধারণ করে দিলাম অথবা এমন আরো শব্দ বলা যা পূর্বের বর্ণিত শব্দের অর্থ প্রদান করে।

(العقب) এর দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষের সন্তান এবং তাদের বংশধর।

আমাদের সাথীবর্গ বলেন, (الْعُمْرٰى) এর তিন অবস্থা।

প্রথমতঃ ‘‘আমি তোমাকে এ বাড়িটি দান করলাম, অতঃপর তুমি যখন মারা যাবে তখন তা তোমার উত্তরাধিকারী, অথবা পরবর্তীদের জন্য সাব্যস্ত হবে।’’ এ কথা বলা বিনা মতানৈক্যে এটা বিশুদ্ধ হবে। এ শব্দের মাধ্যমে তাকে এ বাড়ীটির তদারকির মালিক বানিয়ে দেয়া হবে, আর তা হলো দান তবে দীর্ঘ ইবারতের মাধ্যমে। অতঃপর যাকে দেয়া হয়েছে সে যখন মারা যাবে তখন বাড়ীটি তার উত্তরাধিকারীদের বলে গণ্য হবে। আর মৃত ব্যক্তির যদি উত্তরাধিকারী না থাকে, তাহলে বায়তুল মালের জন্য। কোনো অবস্থাতেই তা দানকারীর দিকে ফিরে আসবে না, এটা ইমাম মালিক-এর মতের খেলাফ।

দ্বিতীয়তঃ ‘‘আমি একে তোমার বয়স পর্যন্ত তোমার জন্য করে দিলাম।’’ এ কথার উপর সীমাবদ্ধ থাকা। এ ছাড়া অন্য কথা না বলা। এটি বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে ইমাম শাফি‘ঈ-এর দু’টি মত আছে। সে দু’টি মতের মাঝে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হলো- নতুন মত, তা বিশুদ্ধ হওয়া। এর হুকুম প্রথম অবস্থার হুকুম। আর অপরটি হলো- প্রবীণ মত, নিঃসন্দেহে তা বাতিল।

আমাদের কতক সাথীবর্গ বলেন, প্রবীণ মত হলো- নিশ্চয় বাড়ীটি যাকে জীবনস্বত্ব স্বরূপ দান করা হয়েছে, তার জীবিত থাকা পর্যন্ত বাড়ীটি তার জন্য হবে। অতঃপর সে যখন মারা যাবে তখন বাড়ীটি দানকারীর কাছে অথবা দানকারীর উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরে আসবে। কেননা বাড়ীটির সাথে সে তার জীবিত থাকাকে নির্দিষ্ট করেছে। আবার কেউ বলেন, প্রবীণ মত হলো- বাড়ীটি এক প্রকারের ধারস্বরূপ। দাতা যখন ইচ্ছা করবে তখন তা ফিরিয়ে নিবে। অতঃপর দাতা যখন মারা যাবে, তখন বাড়ীটি দাতার উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরে আসবে।

তৃতীয়তঃ বাড়ীটি আমি তোমার বয়স পর্যন্ত নির্দিষ্ট করলাম, অতঃপর তুমি যখন মৃত্যুবরণ করবে তখন তা আমার কাছে ফিরে আসবে। আর আমি যদি মৃত্যুবরণ করি তাহলে তা আমার উত্তরাধিকাদের কাছে ফিরে আসবে। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাথীবর্গের কাছে মতানৈক্য রয়েছে, তাদের কেউ একে বাতিল সাব্যস্ত করেছে। তাদের কাছে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হলো, এ অবস্থার বিশুদ্ধ হওয়া এবং এর হুকুম প্রথম অবস্থার হুকুম। তারা সাধারণ বিশুদ্ধ হাদীসগুলোর উপর নির্ভর করেছে। যেমন- (الْعُمْرٰى جَائِزَةٌ) জীবনস্বত্ব দান বৈধ এবং এর মাধ্যমে তার বিশৃঙ্খল শর্তসমূহের ক্বিয়াস হতে সরে গেছে। (শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬২৫)