লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বাগান ও জমিনের বর্গা (পরস্পর সেচকার্য করা ও ভাগে কৃষিকাজ, বর্গাচাষ করা)
২৯৭৪-[৩] হানযালাহ্ ইবনু কায়স (রহঃ) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার দুই চাচা আমাকে বলেছেন, তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জমিন বর্গা দিতেন এরূপে- খালের নিকটের জমিনে যা উৎপাদিত হবে, তা তাদের প্রাপ্য অথবা জমির মালিক অপর কোনো অংশ বাদ রাখতো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন। হান্যালাহ্ (রহঃ) বলেন, আমি রাফি’-কে জিজ্ঞেস করলাম, দিরহাম ও দীনারের বিনিময়ে ভাড়া দেয়া কেমন হয়? তিনি বললেন, এতে কোনো আপত্তি নেই। (রাফি’ অথবা কোনো রাবী অথবা ইমাম বুখারী বলেন) যা হতে নিষেধ করা হয়েছে, তা এরূপই। হালাল-হারামের বিষয়ে অভিজ্ঞ বিজ্ঞ ব্যক্তিরা যদি এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করেন, তবুও তার অনুমতি দেবেন না। যেহেতু তাতে বিপদসমূহের আশঙ্কা রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُسَاقَاةِ وَالْمُزَارَعَةِ
وَعَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ قَيْسٍ عَنْ رَافِعِ بْنِ خديج قَالَ: أَخْبَرَنِي عَمَّايَ أَنَّهُمْ كَانُوا يُكْرُونَ الْأَرْضَ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا يَنْبُتُ عَلَى الْأَرْبَعَاءِ أَوْ شَيْءٍ يَسْتَثْنِيهِ صَاحِبُ الْأَرْضِ فَنَهَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ فَقُلْتُ لِرَافِعٍ: فَكَيْفَ هِيَ بِالدَّرَاهِمِ وَالدَّنَانِيرِ؟ فَقَالَ: لَيْسَ بِهَا بَأْسٌ وَكَأَنَّ الَّذِي نُهِيَ عَنْ ذَلِكَ مَا لَوْ نَظَرَ فِيهِ ذَوُو الْفَهْمِ بِالْحَلَالِ وَالْحَرَامِ لَمْ يُجِيزُوهُ لِمَا فِيهِ مِنَ الْمُخَاطَرَةِ
ব্যাখ্যা: (يَسْتَثْنِيهِ) যাতে এটা অন্য বর্ণনার অনুকূল হতে পারে, এজন্য তিনি যেন এক-তৃতীয়াংশ এবং এক-চতুর্থাংশ পৃথককরণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
(فَقَالَ رَافِعٌ : لَيْسَ بِهَا بَأْسٌ بِالدِّينَارِ وَالدِّرْهَمِ) এ উক্তিটি রাফি‘-এর নিজ ইজতিহাদে হওয়ার সম্ভাবনা রাখছে এবং তা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে ঐ জ্ঞান ভাষ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে হওয়ার সম্ভাবনা রাখছে। অথবা জমি ভাড়া দেয়া সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা মুতালাক বা শর্তহীনভাবে ছিল না, বরং যখন অপরিচিত বস্তু এবং অনুরূপ বস্তু সম্পর্কে হবে। সুতরাং এ থেকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে জমি ভাড়া নেয়া বৈধ হওয়ার ব্যাপারে মাসআলাহ্ সাব্যস্ত হলো। হাদীসটির মারফূ‘ হওয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে যা আবূ দাঊদ এবং নাসায়ী বিশুদ্ধ সানাদে সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব হতে বর্ণনা করেন, তিনি রাফি‘ বিন খদীজ হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় তিনি বলেনঃ
نَهٰى رَسُولُ اللّٰهِ ﷺ عَنِ الْمُحَاقَلَةِ وَالْمُزَابَنَةِ وَقَالَ إِنَّمَا يَزْرَعُ ثَلَاثَةٌ رَجُلٌ لَه أَرْضٌ وَرَجُلٌ مَنَحَ أَرْضًا وَرَجُلٌ اكْتَرٰى أَرْضًا بِذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাকালাহ্ ও মুযাবানাহ্ নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেন, শস্য ফলাবে তিন ব্যক্তি- এমন ব্যক্তি যার জমি আছে, এমন ব্যক্তি যাকে কোনো বিনিময় ব্যতীত জমি চাষ করতে দেয়া হয়েছে, এমন ব্যক্তি যে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে জমি ভাড়া নিয়েছে।
তবে নাসায়ী অন্য সানাদে বর্ণনা করেন সে সানাদের মারফূ‘ অংশ হলো মুহাকালাহ্ ও মুযাবানাহ্ নিষেধ করা, এর অবশিষ্ট অংশ সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব-এর কথার অন্তর্ভুক্ত। মালিক একে তার মুয়াত্ত্বা গ্রন্থে বর্ণনা করেন। শাফি‘ঈ তার থেকে, তিনি ইবনু শিহাব থেকে, তিনি সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব হতে বর্ণনা করেন।
(الْمُخَاطَرَةِ) অর্থাৎ ধ্বংসের দিকে উঁকি দেয়া। লায়স-এর এ উক্তি জুমহূরের মতের অনুকূল, অর্থাৎ জমিন ভাড়া দেয়া সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞাতে এরূপ চাপিয়ে দেয়া যা ধোঁকা ও অজ্ঞতার দিকে বর্তায়। শর্তহীনভাবে জমি ভাড়া দেয়া সম্পর্কে না, এমনকি স্বর্ণ ও রৌপ্যের মাধ্যমে না। অতঃপর জুমহূর (অর্থাৎ অধিকাংশ ‘আলিম) জমি হতে উৎপাদিত অংশের মাধ্যমে জমি ভাড়া জায়িয হওয়া সম্পর্কে মতানৈক্য করেছেন। যারা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে মত পোষণ করেছেন তারা নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলোকে নাহিয়ে তানযিহীর উপর চাপিয়েছেন, এর উপর প্রমাণ বহন করছে ইবনু ‘আব্বাস-এর উক্তি, যেমন তিনি বলেন, (وَلٰكِنْ أَرَادَ أَنْ يَرْفُقَ بَعْضُهُمْ بِبَعْضٍ) অর্থাৎ- ‘‘তবে তাদের কতক কতকের উপর দয়া করার ইচ্ছা করবে।’’ আর যারা জমি হতে উৎপাদিত কোনো অংশের মাধ্যমে জমি ভাড়া দেয়া বৈধ বলেনি তারা বলেছে, জমি ভাড়া দেয়া সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞাকে ঐ কথার উপর চাপিয়ে দিতে হবে, যখন জমির মালিক জমির কোনো অংশকে শর্ত করবে অথবা নদীর পাশে যা উৎপন্ন হবে তা জমির মালিকের জন্য শর্ত করবে। এর প্রতিটিতে ধোঁকা ও অজানা থাকার কারণে।
মালিক বলেন, নিষেধাজ্ঞাকে ঐ অবস্থার উপর চাপিয়ে দিতে যখন জমি ভাড়া খাদ্য অথবা খেজুরের মাধ্যমে সংঘটিত হবে, যাতে খাদ্যের বিক্রয় খাদ্যের মাধ্যমে না হয়।
ইবনুল মুনযির বলেনঃ মালিক যা বলেছে তা ঐ কথার উপর চাপিয়ে দিতে হবে। যখন (الْمُكْرٰى بِه) ‘‘যার মাধ্যমে ভাড়া দেয়া হয়েছে’’ জমিন হতে উৎপন্ন দ্রব্যের অংশ স্বরূপ খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে, অতঃপর ব্যক্তি যখন নিজ যিম্মায় নির্দিষ্ট খাদ্যের মাধ্যমে অথবা উপস্থিত খাদ্যের মাধ্যমে ভাড়া নিবে এবং জমির মালিক তা নিয়ে নিবে তখন বৈধতা হতে কোনো বাধা দানকারী থাকবে না। আল্লাহ সর্বাধিক ভালো জানেন। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৩৪৬-২৩৪৭)