পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮২৩। ’উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে ফজরের সালাত আদায় করছিলাম। সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিরাত পড়াকালে কিরাত তাঁর জন্য ভারী হয়ে গেল। সালাত শেষে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সম্ভবতঃ তোমরা তোমাদের ইমামের কিরাত করেছ। আমরা বললাম, হে আল্লাহ রসূল! হ্যাঁ। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমনটি কর না, তবে তোমাদের সূরাহ ফাতিহা পড়াটা স্বতন্ত্র। কেননা যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না, তার সালাত হয় না।[1]
দুর্বল।
[1] তিরমিযী (অধ্যায়ঃ সালাত, অনুঃ ইমামের পেছনে ক্বিরাআত পাঠ, হাঃ ৩১১), মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব সূত্রে ইমাম তিরমিযী বলেন, ‘উবাদাহর হাদীসটি হাসান। আহমাদ, তিরমিযী, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, দারাকুতনী, মুস্তাদরাক হাকিম, ত্বাবারানী, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু হিব্বান ও বায়হাক্বী। হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ইমাম আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারাকুতী, ইবনু হিব্বান, হাকিম ও বায়হাক্বী ইবনু ইসহাক্ব সূত্রেঃ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন মাকহুল, মাহমুদ ইবনু রবীঈ থেকে উবাদাহ সূত্রে। এবং তার অনুসরণ (তাবে’) করেছেন যায়িদ ইবনু ওয়াক্বিদ ও অন্যরা মাকহুল সূত্রে। শায়খ আহমাদ শাকির এটিকে সহীহ বলেছেন এর শাওয়াহিদ বর্ণনার দ্বারা যা তিনি তিরমিযীর তা‘লীক্বে এনেছেন।
হাদীসটির সনদকে শায়খ আলবানী যদিও দুর্বল বলেছেন তথাপি হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। কারণঃ
১। মুহাদ্দিসগণের এক জামা‘আত কর্তৃক একে সহীহ আখ্যায়িত করণঃ হাদীসটিকে যাঁরা সহীহ বলেছেন তাঁরা হলেনঃ ইমাম বুখারী, ইমাম আবূ দাঊদ, ইবনু খুযাইমাহম বায়হাক্বী এবং আরো অনেকে। আর যারা হাদীসটিকে হাসান বলেছেন তারা হলেনঃ ইমাম তিরমিযী, ইমাম দারাকুতনী, হাফিয ইবনু হাজার সহ আরো অনেকে। ইমাম খাত্তাবী ‘মাআলিমুস সুনান’ গ্রন্থে বলেনঃ এই হাদীসের সনদ অত্যন্ত মজবুত, এতে কোনো রকম ত্রুটি নেই। হাফিয ইবনু হাজার ‘দিরায়া তাখরীজে হিদায়া’ গ্রন্থে বলেনঃ ইমাম আবূ দাঊদ হাদীসটি এমন সনদে বর্ণনা করেছেন যে, এর সমস্ত বর্ণনাকারীই মজবুত। ইমাম হাকিম বলেন, এর সনদ ‘মুস্তাকিম।’ আল্লামা ‘আব্দুল হাই লাখনৌবী হানাফী ‘সায়্যইয়াহ’ নাম গ্রন্থে বলেনঃ এই হাদীসটি সহীহ এবং এর সনদ মজবুত। সাইয়্যিদ আহমাদ হাসান দেহলবী ‘আহসানুত তাফসীর’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘উবাদাহর এই হাদীস বিলকুল সহীহ। কারো শক্তি নেই যে, এর সনদের মধ্যে কোনো কথা বলে।
২) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্বের বর্ণনা থেকে তাদলীসের ধারণা খন্ডনঃ মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব তাদলীস করতেন বিধায় তাদলীসকারী হিসেবে তার কর্তৃক عن শব্দে বর্ণিত হাদীসকে দুর্বল বলে সন্দেহ করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তার হাদীস শ্রবণের বিষয়টি সাব্যস্ত না হয়। কিন্তু তার থেকে হাদীসটি উক্ত সনদে عن শব্দ দ্বারা বর্ণিত হলেও অন্যান্য কিতাবে ইমাম মাকহুল থেকে তার শ্রবণের বিষয়টি স্পষ্ট ও সাব্যস্ত হয়েছে। যেখানে তিনি হাদীসটি حدثنا শব্দে বর্ণনা করেছেন। সনদটি এরূপঃ وعن محمد ابن اسحاق حدثنا محمود ربيع عن عبادة। এটিকে ইমাম আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারাকুতনী, ইবনু হিব্বান, হাকিম ও বায়হাক্বী সহীহ বলেছেন। এর মুতাবাআত বর্ণনাও আছে। হাদীসটি বর্ণনায় তার তাবে‘ করেছেন যায়িদ ইবনু ওয়াক্বিদ ও অন্যান্যরা মাকহুল সূত্রে। আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির এটিকে সহীহ বলেছেন এর শাওয়াহিদ বর্ণনার দ্বারা, সেগুলো তিনি তিরমিযীর উপর তার তা‘লীক্ব গ্রন্থে এনেছেন। ‘আব্দুল হাই লাখনৌবী হানাফী ইমামুল কালাম গ্রন্থে বলেনঃ ‘তাদলীসের আক্রমণ দূরীভূত হয় পোষকতার কারণে, আর এখানে তা অবশ্যই মওজুদ আছে।’ অতএব ইবনু ইসহাক্বের বর্ণনাটি তাদলীসের ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
* মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্বের গ্রহণযোগ্যতাঃ ইমাম নাসায়ী বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, তিনি সত্যবাদী, তিনি তাসলীস করেন এবং তিনি ক্বাদরিয়া মতবাদে বিশ্বাসী বলে অভিযুক্ত (তাকরিবুত তাহযীব ২/৫৪)। তাজকিরাতহল হুফফায গ্রন্থে রয়েছেঃ হাদীসটির মাত্র একজন বর্ণনাকারী ইবনু ইসহাক্ব সম্পর্কে ইমাম মালিক ও ইবনু জাওযী কিছু ত্রুটি বের করেছেন কিন্তু সেটা ছিলো ব্যক্তিগত আক্রশে- (দেখুন, তাজকিরাতুল হুফফায)। অথচ জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকট মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী (দেখুন, তাজকিরাতুল হুফফায)।
ইমাম শাওকানী বলেনঃ ইমাম বুখারীসহ অধিকাংশ বিদ্বান ইবনু ইসহাক্বকে বিশ্বস্ত বলেছেন। (নাসবুর রায়াহ ৪/১৭)।
আল্লামা বাদরুদ্দী আইনী হানাফী বলেনঃ ইবনু জাওযী ইবনু ইসহাক্বের আপত্তি করায় কোনো কিছু আসে যায় না। কারণ ইবনু ইসহাক্ব তো জমহুর মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট বড় বিশ্বস্ত লোক। (দেখুন, উমদাতুল ক্বারী, ৭/২৭)।
হানাফী ফিক্বাহ ফাতহুল ক্বাদিরে রয়েছেঃ হাক্ব কথা এটাই যে, ইবনু ইসহাক্ব বিশ্বস্ত। উক্ত গ্রন্থে আরো রয়েছেঃ ইবনু ইসহাক্ব বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য। এ ব্যাপারে আমাদের (হানাফীদের) এবং মুহাক্কিক্ব মুহাদ্দিসীনে কিরামের মধ্যে কোনই সন্দেহ নেই। (দেখুন, ফাতহুল ক্বাদীর ১/৪১১, ৪২৪)।
আল্লামা ‘আব্দুল হাই লাখনৌবী হানাফী বলেনঃ প্রাধান্যযোগ্য ও মজবুত কথা এই যে, মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব মজবুত বর্ণনাকারী। দেখুন, ইমামুল কালাম, পৃঃ ৯২)।
এছাড়া হানাফী মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ কাশমিরী, জাফর আহমাদ উসমানী এবং জাকারিয়াসহ বহু দেওবন্দী হানাফী আলিম ইবনু ইসহাক্বকে নিজ নিজ গ্রন্থে বিশ্বস্ত বলেছেন। অতএব মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকট বিশ্বস্ত।
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ النُّفَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ مَحْمُودِ بْنِ الرَّبِيعِ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ: كُنَّا خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم، فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ، فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ:لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ قُلْنَا: نَعَمْ هَذًّا يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ:لَا تَفْعَلُوا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا
-ضعيف