পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮২০। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেন যে, আমি যেন ঘোষণা করি, সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অন্য (সূরাহ বা আয়াত) না মিলালে সালাতই হবে না।[1]
সহীহ।
[1] আহমাদ (২/২৪২৮), হাকিম (১/২৩৯) ইয়াহইয়া সূত্রে। ইমাম হাকিম একে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। এর সনদ সহীহ।
‘লা সালাতা’ এর মধ্যে ‘লা’ কালেমার সঠিক অর্থঃ কতিপয় লোক বলে থাকেন, ‘হাদীসে’ ‘লা সালাতা ইল্লা বি ফাতিহাতিল কিতাব’ বা ‘‘সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না’’ অর্থ পূর্ণভাবে হয় না। যেমন অন্য হাদীসে রয়েছে, লা ঈমা-না লিমান লা আমা-নাতা লাহু, ওয়ালা দীনা লিমান লা ‘আহদা লাহু’ অর্থঃ ঐ ব্যক্তির ঈমান নেই যার আমানাত নেই এবং ঐ ব্যক্তির দ্বীন নেই যার ওয়াদা ঠিক নেই।’’ এর অর্থ ঐ ব্যক্তির ঈমান পূর্ণ নয় বরং ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ হাদীসে বর্ণিত ‘লা’ শব্দটি নাফিয়ে কামালের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
এর জবাব কয়েকভাবে দেয়া যায়ঃ
১। হাফিয সাইয়্যিদ আহমাদ হাসান দেহলবী (রহঃ) তাঁর ‘আহসানুত তাফসীর’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘লা সালাত’ এর মধ্যে ‘লা’ কালেমা লায়েনাফি জিন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর এর গঠনকারী একে জিনস ও যাতের জন্যই গঠন করেছে, নাফি কামালের জন্য নয়। যেমন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর মধ্যে লা কালেমাটি লায়ে নাফি জিন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এটাই হলো এর প্রকৃত অর্থ। সুতরাং হাক্বীক্বী (প্রকৃত) অর্থ বাদ দিয়ে কামালের (মাজাযী তথা রূপক) অর্থ গ্রহণ করা কখনোই বৈধ হবে না। কারণ মাজাযী অর্থ ঐ স্থানে গ্রহণ করা হয়, যেখানে হাক্বীক্বী অর্থ নেয়া সম্ভব হয় না। আর সিফাতের নাফি ঐ স্থানে গ্রহণ করা হয় যেখানে যাতকে অস্বীকার করা অসম্ভব হয়। সুতরাং লা সালাত’ এর মধ্যে ‘লা’ যাতে সালাতে দিকে রুজু হবে। কারণ এখানে যাতে সালাতকে অস্বীকার করা সম্ভব হয়েছে। আর যদিও কিছুক্ষণের জন্য মেনে নেয়া যায় যে, যাতের অস্বীকার সম্ভব নয়, তবুও নাফিটা বিশুদ্ধতার দিকে রুজু হবে, কামালের দিক হবে না। কারণ বিশুদ্ধতার নাফি ও কামালের নাফি যদিও দু’টিই মাজাযীর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু বিশুদ্ধতার নাফিটা হাক্বীক্বীর নিকটতম। আর হাক্বীক্বী অর্থ অসম্ভব হলে দু’টি মাজাযী থেকে নিকটতম অর্থটি গ্রহণ করা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব হয়ে যায়। আল্লামা আলুসী বাগদাদী হানাফী ‘রুহুল মাআনী’ (৯/৩১০) গ্রন্থে লিখেছেনঃ হাক্বীক্বী অর্থ গ্রহণ করা অসম্ভব হলে নিকটতম মাজায়ী অর্থ গ্রহণ করা ওয়াজিব।
ইমাম শাওকানী নায়লুল আওত্বার গ্রন্থে লিখেছেনঃ উক্ত হাদীস এই কথার পরিস্কার দলীল যে, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না। এটাই ইমাম মালিক, শাফিঈ, সমস্ত সাহাবায়ি কিরাম, তাবেঈনে এজামগণের এবং তাদের পরবর্তী ‘আলিমগণের অভিমত কারণ এই যে, লা সালাতার মধ্যে ‘লা’ নাফি যাত ও জিন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর যদি নাফি যাতে অর্থ করা সম্ভব নাও হয়, তবে যে বস্তু যাতের নিকটতম হয়, সেটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। আর ওটা সিহ্হাতের (বিশুদ্ধতার) নাফি, কামালের (পরিপূর্ণতার) নাফি নয়। কারণ ‘সিহ্হাত’ শব্দটি মাজাযী থেকে অতি নিকটতম, আর কামাল দু’টো থেকেই দূরে। আর নাফির দু’ মাজাযীর নিকটতমকে গ্রহণ করা ওয়াজিব। আর উক্ত হাদীসে যাতের নাফি অবশ্যম্ভাবী এবং দৃঢ়।
হাফিয ইবনু হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ সালাত শব্দে শারঈ অর্থ বুঝানো হয়েছে, আভির্ধানিক অর্থ নয়। অতঃপর তিনি ‘লা’ নাফিয়ে কামালের বিরোধীতা করেন এবং নাফিয়ে ‘আজযা’কে দু’ মাজাযীর নিকটতম বলে সাব্যস্ত করেন এবং এর অনুকরণে কয়েকটি রিওয়ায়াত বর্ণনা করেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী, ৩/৪১৪)।
ইমাম নাববী (রহঃ) বলেনঃ হানাঢী ভাইদের উক্ত হাদীসের ভিতরে কামালের তা'বিল (ব্যাখ্যা) করা প্রকাশ্য হাদীসের বিপরীত। কারণ আবূ হুরাইরাহ সূত্রে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদীসে পরিস্কার শব্দ রয়েছে যে, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সমস্ত সালাতই অকর্মণ্য ও বরবাদ হয়ে যায়। (দেখুন, শারাহ সহীহ মুসলিম)।
২। কুতুবে সিত্তাহ সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে উপরোক্ত প্রসিদ্ধ হাদীসটি একই বর্ণনাকারী ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) সূত্রে দারাকুতনীতে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে এভাবেঃ
لا تجزىء صلاة لا يقرأ الرجل فيها بفاتحة الكتاب
‘‘ঐ সালাত যথেষ্ট নয়, যার মধ্যে মুসল্লী সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না।’’
হাদীসটিকে মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী, ‘আব্দুল হাই লাখনৌভী হানাফী ও ইমাম নাববী (রহঃ) সহ বহু বিদ্বান সহীহ আখ্যায়িত করেছেন। এতে প্রমাণিত হলো উক্ত হাদীসে ‘সালাত হবে না’ অর্থ ‘সালাত সিদ্ধ হবে না।’
অনুরূপভাবে মুসনাদ আহমাদে (হাঃ ২০৬১৯) বর্ণিত হয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لا تقبل صلاة لا يقرأ فيها بأم الكتاب
‘‘যে সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা হয় না ঐ সালাত ক্ববূল হয় না।’’
আহমাদ শাকির বলেনঃ ‘এর সনদ সহীহ। সনদের ব্যক্তিগণ বিশ্বস্ত, প্রসিদ্ধ এবং হাদীসটিও খুবই প্রসিদ্ধ।
এক্ষণে ‘লা সালাত’ বা ‘সালাত হয় না’ এর অর্থ যখন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সালাতে যথেষ্ট হবে না’ ও ‘সালাত ক্ববূল হবে না’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তখন সেখানে কারো নিজস্ব ব্যাখ্যার কোনো অবকাশ নেই। তাই কারোর পক্ষ থেকে ‘সালাত তো হয়ে যায়, তবে পূর্ণ হয় না’ এরূপ উক্তি করা হটকারীতা, চরম অন্যানয় ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রকাশ্য হাদীসকে বিকৃত করার নামান্তর।
৩। অপূর্ণাঙ্গ ও ত্রুটিপূর্ণ সালাত প্রকৃত অর্থে কোনো সালাত নয়। তাই সূরাহ ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ ইবাদাত সালাতকে পরিপূর্ণ করে নেয়ার মধ্যেই কল্যাণ নিহীত আছে। যা সবার কাছেই স্পষ্ট। সুতরাং কোনো তর্ক যুক্তি পরিহার করে সূরাহ ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত সালাত আদায়ে অসুবিধা কোথায়?
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا ابْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، حَدَّثَنَا جَعْفَرٌ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم أَنْ أُنَادِيَ:أَنَّهُ لَا صَلَاةَ إِلَّا بِقِرَاءَةِ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَمَا زَادَ
- صحيح