পরিচ্ছেদঃ ৭২. উটের গোশত খেলে অযু করা প্রসঙ্গে
১৮৪। আল-বারা’আ ইবনু ’আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উটের মাংস খেলে অযু করতে হবে কিনা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ তা খেলে তোমরা অযু করবে। আর তাঁকে বকরীর মাংস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ তার জন্য অযু করতে হবে না। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, উটশালায় সালাত আদায় করা যাবে কিনা? তিনি বলেনঃ তোমরা উটশালায় সালাত আদায় করো না। কারণ, সেখানে শয়তান বসবাস করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বকরীর আবাসস্থলে সালাত আদায় করা যাবে কি না তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, সেখানে সালাত আদায় কর। কারণ, ওটা বরকতময় স্থান।[1]
সহীহ।
[1] তিরমিযী (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ উটের গোশত খেলে উযু করা, হাঃ ৮১), ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ উটের গোশত খেলে উযু করা, হাঃ ৪৯৪) আহমাদ (৪/২৮৮, ৩০৩), ইবনু খুযাইমাহ (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, হাঃ ৩২), সকলেই আ‘মাশ সূত্রে।
-
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
১। উটের গোশত খেলে উযু করতে হবে, কিন্তু বকরীর গোশত খেলে উযু করতে হবে না।
২। উটের খোয়াড়ে সালাত আদায় নিষেধ, কিন্তু বকরীর খোয়াড়ে জায়িয।
মাসআলাহঃ উটের গোশত খেলে উযু করা প্রসঙ্গ
এ সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীসঃ
(১) জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, বকরীর গোশত খাওয়ার পর আমি উযু করবো কি? জবাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইচ্ছা হলে উযু করতে পারো আবার ইচ্ছা হলে নাও করতে পারো। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো, উটের গোশত খাওয়ার পর আমি উযু করবো কি? জবাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ উটের গোশত খাওয়ার পর উযু করবে। লোকটি বললো, আমি বকরীর খোয়াড়ে সালাত আদায় করবো কি? জবাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না। (সহীহ মুসলিম, আহমাদ, হাদীস সহীহ)
(২) আল-বারা‘আ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উটের গোশত খেলে উযু করতে হবে কি না এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ উটের গোশত খেলে তোমরা উযু করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বকরীর গোশত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ তার জন্য উযু করতে হবে না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো, উটশালায় সালাত আদায় করা যাবে কি না? তিনি বলেনঃ তোমরা উটশালায় সালাত আদায় করো না। কারণ, সেখানে শয়তান বসবাস করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বকরীর আবাসস্থলে সালাত আদায় করা যাবে কি না তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, সেখানে সালাত আদায় করো। কারণ, ওটা হচ্ছে বরকতময় প্রাণী (বা বরকতময় স্থান)। (আবূ দাঊদ হা/১৮৪, তিরমিযী হা/৮১, ইবনু মাজাহ হা/৪৮৪, আহমাদ ৪/২৮৮ ও ৩০৩, ইবনু খুযাইমাহ হা/৩২, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।
ইমাম ইবনু খুযাইমাহ বলেনঃ এ হাদীসটি যে সহীহ, এব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কিরামের মধ্যে কোনো মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই। কেননা এ হাদীসের সমস্ত বর্ণনাকারী বিশস্ত ও ন্যায়পরায়ণ। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ এ অধ্যায়ে দু’টি সহীহ হাদীস রয়েছে। একটি হলো, বারা‘আ (রাঃ)-এর হাদীস। অপরটি হলো, জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ)-এর হাদীস। এ কথাটি ইমাম ইবনু হাম্বাল এবং ইসহাক ইবনু রাহওয়াহ (রহঃ)-ও বলেছেন। বিভিন্ন সূত্রে এর শাহিদ হাদীসাবলীও বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার বর্ণিত হাদীস।
(৩) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা উটের গোশত খেলে উযু করবে। তবে বকরীর গোশত খেলে উযু করবে না। আর তোমরা বকরীর খোয়াড়ে সালাত আদায় করবে কিন্তু উটের খোয়াড়ে সালাত আদায় করবে না। (ইবনু মাজাহ, হাদীসটি ভিন্ন সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে)
*কতিপয় লোকের উক্তিঃ উটের গোশত খেলে উযু করার বিধান মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে জাবির (রাঃ) বর্ণিত এ উক্তি দ্বারাঃ ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ কাজটি ছিলো আগুনে রান্না করা বন্তু খেয়ে উযু না করা।’’ এতে উট ও বকরীর গোশতের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি। যেহেতু আগুনে পাকানোর দিক দিয়ে উভয়টি সমান।
এর জবাবঃ
একঃ ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেনঃ কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উভয়টির মধ্যে পার্থক্য করলেন তখন উটের গোশত খেলে উযুর নির্দেশ দিলেন এবং বকরীর গোশতের জন্য অবকাশ দিলেন। অতএব জানা গেলো, এরূপ তা‘লীল বাতিল। তিনি আরো বলেনঃ যখন ‘আগুনে পাকানো’ কারণ হিসেবে অবশিষ্ট থাকলো না তখন এ জন্য উযু রহিত হওয়া অন্য কারণে উযু রহিত হওয়াকে ওয়াজিব করে না। বরং বলা যায় যে, প্রথমদিকে উটের গোশত খেলেও উযু করতে হতো, যেমন উযু করতে হতো বকরী ও অন্যান্য গোশত খেলে। অতঃপর এ সবগুলোর বিধান রহিত করা হলো। কিন্তু যে সমস্ত হাদীসে উটের গোশত খেলে উযু করা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেগুলো যদি রহিত করার পূর্বেরও হতো তথাপি তা রহিত (মানসূখ) হতো না।অতএব উটের গোশত খেলে উযু করার নির্দেশ সম্বলিত হাদীসগুলো রহিত করণের পূর্বের না পরের এটাই যখন জানা যায়নি সেখানে কিভাবে একে মানসূখ বলা যায়?
একে আরো দৃঢ় করবে জবাবের দ্বিতীয় দিক। তা নিম্নরূপঃ
দুই. হাদীসটি রান্না করা খাদ্য খেলে উযু রহিত হওয়ার পরবর্তী সময়ের। কেননা হাদীসের বকরীর গোশত খেলে উযু ওয়াজিব নয় উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে উক্ত হাদীসেই উটের গোশত খেলে উযুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতএবন জানা গেলো, এ সম্পর্কিত নির্দেশ মানসুখ হওয়ার পরবর্তী সময়ের।
তিন. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরী ও উটের মধ্যে পার্থক্য করেছেন উযুর বিষয়ে এবং উভয়ের খোয়াড়ে সালাত আদায়ের বিষয়েও। এ পার্থক্য সুস্পষ্ট প্রমাণিত। উযু এবং সালাতের বিষয়ে বকরী ও উটকে সমপর্যায় গণ্য করা সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো দলীল বর্ণিত হয়নি। সুতরাং মানসূখ হওয়ার দাবী বাতিল। বরং সালাতের ব্যাপারে এ হাদীসের উপর মুসলিমগণের আমল ওয়াজিব করে দিচ্ছে হাদীসে বর্ণিত উযুর নির্দেশের উপর আমল করাকে। যেহেতু উভয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।
চার. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের গোশত খেলে উযু করার আদেশ দিয়েছেন। যা উটের কাঁচা গোশত এবং রান্না করা গোশত দু’টোর জন্যই উযুর বিধান দেয়। এ দিকটি হাদীস মানসূখ হওয়াকে নিষেধ করে।
পাঁচ. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যদি এমন কোনো ‘আম (ব্যাপক অর্থবোধক) দলীলও বর্ণিত হতো যে, ‘‘আগুনে পাকানো বস্ত্ত খেলে উযু করতে হবে না।’’ তথাপি একে উটের গোশত খাওয়ার পর উযুর নির্দেশ সম্বলিত হাদীসের রহিতকারী (নাসিখ) গণ্য করা জায়িয হতো না দু’টি কারণঃ (১) এটি পূর্বের হাদীস কি না তা জানা যায়নি। যখন আম এবং খাস এর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং তারীখ অজানা থাকে তাহলে আলিমগণের একজনও এ কথা বলেননি যে, এটি তার রহিতকারী হবে। বরং বলা হবে যে, এতে খাস অগ্রাধিকার পাবে। যেমন তা ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদের প্রসিদ্ধ অভিমত। অথবা বিষয়টি স্থগিত থাকবে। বরং যদি জানা যায়, আম হাদীসটি খাস হাদীসের পরবর্তী সময়ের তবুও খাস অগ্রগণ্য হবে। (২) ইতিপূর্বে আমরা বর্ণনা করেছি যে, খাস হাদীসটি আম হাদীসের পরবর্তী সময়ের। অতএব রহিত করতে হলে খাসই হবে রহিতকারী (নাসিখ)। আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে, পরবর্তী খাস পূর্ববর্তী আম এর উপর অগ্রাধিকারযোগ্য। সুতরাং মুসলিমগণের ঐকমত্যে জানা গেলো যে, এ ধরণের আম হাদীসকে খাস হাদীসের উপর প্রাধান্য দেয়া জায়িয নয়। যদি এখানে আম (ব্যাপক অর্থবোধক) শব্দে থাকতো। কিন্তু কিভাবে সম্ভব, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তো এ ধরণের কোনো আম হাদিসই বর্ণিত হয়নি যে, আগুন স্পর্শ করেছে এমন প্রত্যেক বস্ত্ত খাওয়ার পর উযু করার বিধান রহিত! বরং সহীহভাবে যা প্রমাণিত আছে তা এই যে, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর গোশত খেলেন, অতঃপর সালাত আদায় করলেন কিন্তু উযু করলেন না। অনুরূপভাবে তাঁর নিকট ছাতু আনা হলো, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে খেলেন, অতঃপর উযু করলেন না। এ হচ্ছে কর্ম, যার কোনো ‘উমূম (ব্যাপকতা) নেই। কেননা অনুসরণযোগ্য ইমামগণের ঐকমত্যে বকরীর গোশত খেলে উযু করা ওয়াজিব নয়।
আর জাবির (রাঃ), তিনি তো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নাক্বল করেছেন যে, তাঁর সর্বশেষ কাজটি ছিলো রান্না করা বস্ত্ত খেয়ে উযু না করা।’ এ উদ্ধৃতি কর্মমূলক, উক্তিমূলক নয়। তাঁরা যদি দেখতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর গোশত খাওয়ার পর সালাত আদায় করেছেন কিন্তু উযু করেননি, অথচ ইতিপূর্বে তিনি বকরীর গোশত খেলে উযু করতেন তবেই এ কথা বলা সহীহ হতো যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ কাজটি ছিলৈা রান্না করা বস্ত্ত খেয়ে উযু না করা।’ তাঁরা এতে একটি নিদিষ্ট ঘটনার বর্ণনা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর র্বাবস্থার ‘আমল এতে উল্লেখ নেই।
* এর চাইতে অধিক দুর্বল কতিপয় লোকের উক্তিঃ হাদীসে বর্ণিত উযু দ্বারা উযুর আর্ভিধানিক অর্থ উদ্দেশ্য। তা হচ্ছে, হাত ধোয়া থবা হাত ও মুখ ধোয়া। এরূপ উক্তি বাতিল। তা কয়েকটি কারণেঃ
একঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীতে উযু বলতে কেবল সালাতের উযুই বর্ণিত হয়েছে, অন্য কিছু নয়। উযুর আভিধানিক অর্থ বর্ণিত হয়েছে ইয়াহূদীদের ভাষায়। যেমন, সালমান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাওরাতে রয়েছেঃ ‘‘খাদ্য খাওয়ার পূর্বে উযু করলে (অর্থাৎ হাত ধুলে) খাদ্যে বরকত হয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খাদ্যের বরকত হচ্ছে খাওয়ার পূর্বে এবং খাওয়ার পরে হাত ধোয়া।’’ হাদীসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে মতভেদ আছে। হাদীসটি সহীহ ধরে নিলে বলতে হয়, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমানকে ঐ ভাষায় জবাব দিয়েছেন যে ভাষা সালমান উদ্দেশ্য করেছেন। তা হচ্ছে আহলি তাওরাতের ভাষা। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহলি কুরআনের জন্য যে ভাষা উদ্দেশ্য করেছেন তাতে উযু বলতে সেই উযুর কথাই বর্ণিত হয়েছে যাকে মুসলিমগণ উযু বলে জানেন। অর্থাৎ সালাতের উযু।
দুইঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরী ও উটের গোশতের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করেছেন। জ্ঞাতব্য যে, চর্বি এবং খাদ্যের ময়লা বা তৈলাক্ততার কারণে হাত ও মুখ ধোয়া সাধারণভাবেই শারী‘আত সম্মত। বরং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে যে, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ পান করে কুলি করেছেন এবং বলেছেনঃ ‘‘এতে চর্বি আছে।’’ (সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস সহীহ)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার হাতে (গোশত ইত্যাদি) খাদ্যের ময়লা নিয়ে রাত কাটায় এবং তাতে তার কোনো ক্ষতি হলে সে যেন নিজেকেই তিরষ্কার করে।’’ (তিরমিযী, আহমাদ, ইবনু মাজাহ)। যখন দুধ এবং খাদ্যের ময়লার কারণে হাত ধোয়া এবং কুলি করা শারী‘আত সম্মত, তাহলে বকরীর গোশত খাওয়ার পর হাত ও মুখ ধোয়া কিভাবে শারী‘আত সম্মত নয়? (কারণ বকরীর গোশত খেলেও হাত তৈলাক্ত হবে, ময়লা লাগবে)।
তিনঃ উটের গোশত খেলে উযু করার নির্দেশ যদি ওয়াজিবমূলক হয় তাহলে তা হাত ও মুখ ধোয়ার অর্থ গ্রহণকে নিষেধ করে। আর যদি এ নির্দেশ মুস্তাহাবমূলক হয়ে থাকে তাহলে তা বকরীর গোশতের জন্য মুস্তাহাব হওয়ার বিধান উঠিয়ে নেয়াকে নিষেধ করে। হাদীসে বকরীর গোশত খেলে উযুর বিধান উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে উটের গোশতের জন্য উযুর বিধান প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আর এটাই হাত ধোয়ার অর্থ গ্রহণকে বাতিল করে দিচ্ছে। চাই হাদীসের হুকুম ওয়াজিবমূলক হোক বা মুস্তাহাবমূলক।
চারঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরী ও উটের মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে উভয়ের খোয়াড়ে সালাত আদায়ের বিষয়টিও যুক্ত করেছেন। যা অকাট্যবাবেই সালাতের উযু বুঝায়। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। (দেখুন, মাজু‘আহ ফাতাওয়াহ লিইমান ইবনু তাইমিয়্যাহ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা)।
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ‘আলিম আল্লামা যাফর আহমাদ ‘উসমানী (রহঃ) ‘ই‘লাউস সুনান’ গ্রন্থে বলেনঃ উযু শব্দটি দ্বারা হাত ও মুখ ধোয়ার অর্থ গ্রহণ করাতে আপত্তি আছে। কেননা উযু বললে মানুষের মত সাধারণতঃ এদিকে যায় না। পক্ষান্তরে এটি জাবির (রাঃ)-এর বক্তব্যঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ কাজটি ছিলো আগুনে পাকানো খাদ্য খেলে উযু না করা’’- এরও পরিপন্থি। কেননা এখানে উযু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা দ্বারা আর্ভিধানিক অর্থে উযু বুঝানো সুদুর পরাহত কথা। বা পরিভাষা সম্পর্কে যাদের সামান্যতম জ্ঞানও আছে তাদের কাছে এ কথাটি অস্পষ্ট নয়। (দেখুন, ই‘লাউস সুনান)
উল্লেখ্য, জামে আত-তিরমিযী গ্রন্থে আত‘ইমা অধ্যায়ে ‘খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা’ অনুচ্ছেদে ইকরাশ সূত্রে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষে বর্ণিত আছে যে, ‘‘অতঃপর আমি পানি নিয়ে আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দিয়ে উভয় হাত ধুলেন এবং ভিজা হাত দিয়ে নিজের চেহারা, উভয় বাহু এবং মাথা মাসাহ্ করলেন। তারপর বললেন, হে ইকরাশ! আগুনে রান্নাকৃত বস্ত্ত খাওয়ার পর এটাই হলো উযু।’’ হাদীসটি দুর্বল। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ ‘এ হাদীসটি গরীব। আমরা কেবল ‘আলা ইবনু ফাদলের সূত্রে এ হাদীস সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তিনি এককভাবে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস ছাড়া ইকরাশ সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আর কোনো হাদীস বর্ণিত আছে কি না তা আমাদের জানা নেই।’ আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন যঈফ তিরমিযী, যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৬৪৪ এবং সিলসিলাহ যঈফাহ গ্রন্থে হা/৫০৯৮।
باب الْوُضُوءِ مِنْ لُحُومِ الإِبِلِ
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الرَّازِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْوُضُوءِ مِنْ لُحُومِ الإِبِلِ فَقَالَ " تَوَضَّئُوا مِنْهَا " . وَسُئِلَ عَنْ لُحُومِ الْغَنَمِ فَقَالَ " لَا تَتَوَضَّئُوا مِنْهَا " . وَسُئِلَ عَنِ الصَّلَاةِ فِي مَبَارِكِ الإِبِلِ فَقَالَ " لَا تُصَلُّوا فِي مَبَارِكِ الإِبِلِ فَإِنَّهَا مِنَ الشَّيَاطِينِ " . وَسُئِلَ عَنِ الصَّلَاةِ فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ فَقَالَ " صَلُّوا فِيهَا فَإِنَّهَا بَرَكَةٌ " .
- صحيح