লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে
২৬৮২-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে ইহরাম অবস্থায় বিয়ে করেছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَ مَيْمُونَةَ وَهُوَ محرم
ব্যাখ্যা: (تَزَوَّجَ مَيْمُوْنَةَ) মায়মূনাহ্ (রাঃ) তিনি উম্মুল মু’মিনীন বিনতু হারিস আল হিলালিয়্যাহ্ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ স্ত্রী, যার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিলন ঘটেছে। তিনি তাকে সপ্তম হিজরীতে বিবাহ করেন। তিনি ‘‘সারিফ’’ নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন। ৫১ বছর বয়স পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে অবস্থান করেন।
‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীদের সূত্রে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই ইবনু ‘আব্বাস বলেছেন, (تزوج رسول الله ﷺ ميمونة وهو محرم) অর্থাৎ- নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন মুহরিম অবস্থায়। ইতিপূর্বে অতিবাহিত হয়েছে যে, এর দু’টি শক্তিশালী ‘‘শাহিদ’’ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তবে পরবর্তীতে বর্ণিত ইয়াযীদ বিন আসম মায়মূনাহ্ (রাঃ) থেকে যে হাদীসটি রয়েছে তা এ হাদীসের বিপরীত এবং তা আবূ রাফি‘ থেকেও বর্ণিত হয়েছে, হাদীসটি হলো, (تزوج رسول الله ﷺ ميمونة وهو حلال)
অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনাহ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন হালাল অবস্থায়। এ বর্ণনাটির স্বপক্ষে আরো একটি হাদীস রয়েছে ইবনু সা‘দ মায়মূনাহ্ বিন মিহরান থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সফিয়্যাহ্ বিনতু শায়বাহ্ যখন বৃদ্ধা তখন আমি তার নিকট গিয়ে প্রশ্ন করলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে মুহরিম অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন? তিনি উত্তরে বলেছিলেন না, আল্লাহর শপথ! তারা দু’জনে হালাল অবস্থায়ই বিবাহ করেছিলেন। (মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ খণ্ড ৪র্থ, পৃষ্ঠা ২৬৮)
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝা যায় মায়মূনাহ্ (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহ কি হালাল অবস্থায় ছিল না মুহরিম অবস্থায় ছিল? এ বিষয় নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে, ‘আল্লামা ইবনুল ক্বইয়্যিম (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে তিন রকমের কথা পাওয়া যায় প্রথম কথাটি যা মায়মূনাহ্ (রাঃ) এবং হাদীস বর্ণনাকারী আবূ রাফি'-এর ভাষ্য থেকে পাওয়া, তথ্যানুযায়ী সেটি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেছিলেন ‘উমরা থেকে হালাল হওয়ার পর। এটাই অধিকাংশ বর্ণনাকারীর মত।
দ্বিতীয় কথা, যা আহলে কূফা, ইবনু ‘আব্বাস ও একদল ‘আলিমের ভাষ্যমতে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেছিলেন ইহরাম বাঁধা অবস্থায়।
তৃতীয় কথা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেছিলেন ইহরাম বাঁধার পূর্বে।
ইতিপূর্বে আমাদের আলোচনা অতিবাহিত হয়ে গেছে যে, যে সমস্ত ‘আলিম ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করা বৈধ বলে ফাতাওয়া দেন তাদের অন্যতম দলীল হলো ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর এ হাদীস। এ মতের বিপরীত অবস্থানকারীগণ বিভিন্ন উত্তর প্রদান করে থাকেন। যেমনঃ তারা বলে থাকেন যা বর্ণিত হয়েছে তিরমিযীতে যে, (تزوجها حلالا وظهرا مر تزويجها وهو محرم وبنى بها وهو حلال بسرف فى طريق مكة) অর্থাৎ- বিবাহের ‘আক্বদ হয়েছিল হালাল অবস্থায় তবে বিবাহের খবর চারদিকে যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন তিনি মুহরিম অবস্থায় ছিলেন বাসর করেছেন মক্কার পথে সারিফ নামক স্থানে হালাল অবস্থায়।
দ্বিতীয় উত্তর হচ্ছে ইবনু ‘আব্বাস -এর কথা (تزوجها وهو محرم) এর অর্থ হলো, তিনি তাকে হারাম মাসে বিবাহ করেছেন। মুহরিম অবস্থায় নয়। আর সেটা যিলকদ মাস ‘উমরাতুল কাযা-এর মাস এমনটাই বলেছেন ইমাম বুখারী (রহঃ) তার কিতাবুল মাগাযীতে ‘উমরাতুল কাযা’ অধ্যায়ে।
এ বিশাল মতবিরোধপূর্ণ মাস্আলাতে মায়মূনাহ্ ও আবূ রাফি'-এর বর্ণনাটিই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত, কারণ তারা ঘটনার বাস্তবসাক্ষী আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ঐ সময় ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করার বয়সে উপনীত হননি, তাই তার হাদীসের উপর তাদের হাদীস বর্ণিত হাদীস স্বভাবতই প্রাধান্য পেতে পারে। (আল্লাহ অধিক অবগত আছেন)