২৬৮০

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮০-[৩] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জি’রানাহ্ নামক স্থানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তখন তাঁর নিকট একজন বেদুঈন আসলো। তার পরনে ছিল জুব্বা আর শরীরে ছিল সুগন্ধি ছিটানো। সে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি ’উমরা করার জন্য ইহরাম বেঁধেছি আর আমার গায়ে এসব আছে। তার কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার শরীরে যে সুগন্ধি রয়েছে তা তিনবার করে ধুয়ে ফেলো, আর জুব্বা খুলে ফেলো। অতঃপর হজে যা কর ’উমরাতেও তাই কর। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَنْ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بالجعرانة إِذْ جَاءَ رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ عَلَيْهِ جُبَّةٌ وَهُوَ مُتَضَمِّخٌ بِالْخَلُوقِ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَحْرَمْتُ بِالْعُمْرَةِ وَهَذِهِ عَلَيَّ. فَقَالَ: «أَمَا الطِّيبُ الَّذِي بِكَ فَاغْسِلْهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ وَأَمَّا الْجُبَّةُ فَانْزِعْهَا ثُمَّ اصْنَعْ فِي عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِي حَجِّكَ»

ব্যাখ্যা: (يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ) তার পূর্ণ নাম ইয়া‘লা বিন উমাইয়্যাহ্ বিন আবী ‘উবায়দুল্লাহ বিন হাম্মাম আত্ তামীমী, তিনি ছিলেন কুরায়শ মিত্র ইয়া‘লা বিন মুনাইয়্যাহ্ নামে পরিচিত। মুনাইয়্যাহ্ তার মাতা আবার কেউ কেউ বলেছেন তার পিতার মাতা- দাদী। তার উপনাম আবূ খালফ, আবার কেউ কেউ বলেছেন আবূ খালিদ, আবার কেউ বলেছেন আবূ সাফওয়ান। মক্কা বিজয়কালে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি একাধারে ত্বয়িফ হুনায়ন, তাবূক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘উমার  থেকে হাদীস বর্ণনা করেন আবার তার নিকট থেকে তার ছেলেরা সফ্ওয়ান মুহাম্মাদ ‘উসমান ও অন্যান্যরা হাদীস বর্ণনা করেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাকে রিদ্দার সময় কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন, অতঃপর ‘উমার (রাঃ)-এর সময় তিনি ইয়ামানের কিছু অংশে নিয়োগ পান এবং নিজের জন্য একটি ভূখণ্ড দখল করে নিলে তাকে বরখাস্ত করা হয়। অতঃপর ‘উসমান (রাঃ)-এর সময় ইয়ামানের সান্‘আতে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ‘উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতের বছর হজ্জ/হজ করেন। উষ্ট্রের যুদ্ধে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর পক্ষে যুদ্ধ করেন, অতঃপর সিফফীনের যুদ্ধে ‘আলী (রাঃ)-এর পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন দানশীল। তার বর্ণিত হাদীস সংখ্যা ১৯টি, হিজরী ৪৩ সনে তিনি মারা যান।

(كُنَّا عِنْدَ النَّبِىِّ ﷺ بِالْجِعِرَّانَةِ) অর্থাৎ- ‘উমরা করার মুহূর্তে ৮ম জিরীতে মক্কা বিজয়ের পরে যুলকাদা মাসে এ ‘উমরার নাম হলো ‘উমরাতুল জি‘রানাহ্। আর জি‘রানাহ্ ত্বায়িফ ও মক্কার মাঝে অবস্থিত একটি স্থানের নাম, এটা মক্কার বেশ নিকটে অবস্থিত। এ শব্দটি উচ্চারণের ক্ষেত্রে দু’টি প্রসিদ্ধ উচ্চারণ লক্ষ্য করা যায় প্রথমটি ‘আয়ন-কে সাকিন দিয়ে جعرانة আর দ্বিতীয়টি হলো ‘‘আয়ন’’-কে যের এবং ‘‘রা’’-কে তাশদীদ দিয়ে جعرانة পড়া। তবে প্রথম কিরাআতটিই বেশি প্রচলিত এবং বেশি শুদ্ধ।

ইমাম শাফি‘ঈসহ অধিকাংশ ভাষাবিদ দু’ভাবেই উচ্চারণ করেন। ইবনুল আসীর (রহঃ) বলেন, এ স্থানটি মক্কার নিকটবর্তী এবং হিল্ল-এ অবস্থিত এবং ইহরামের মিকাতের স্থান। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছেন। ইহরাম বাঁধার স্থান হিসেবে ‘‘তান্‘ঈম’’ নামক স্থানের চেয়ে এ স্থানটি বেশি ভাল- এ কথাই বলেছেন ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেছেন, ‘‘তান্‘ঈম’’ই ইহরাম বাঁধার জন্য উত্তম। কারণ তান্‘ঈম থেকে ইহরাম বাঁধার বিষয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্যমূলক হাদীস রয়েছে আর নিয়ম হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বক্তব্যমূলক হাদীস এবং কর্মমূলক হাদীস যখন বিরোধপূর্ণ হবে তখন বক্তব্যমূলক হাদীস প্রাধান্য পাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তান্‘ঈম থেকে ইহরাম বাঁধতে বলেছেন।

(إِذْ جَاءَ رَجُلٌ أَعْرَابِىٌّ) শব্দটিকে اعراب-এর দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এরা হলো যারা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে। এদেরকে বেদুঈন বলা হয়।

হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, আমি এ লোকটির নাম সম্পর্কে অবগত হতে পারিনি। তবে ফাতহুল বারীর মুক্বদ্দামাতে বলা হয়েছে বস্ত্ততঃ এ লোকটি স্বয়ং এ হাদীসের বর্ণনাকারী ইয়া‘লা বিন উমাইয়্যাহ্ নিজেই। যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তাহাবী শু‘বাহ্ থেকে, শু‘বাহ্ কাতাদা থেকে, কাতাদা ‘আত্বা থেকে, বর্ণনাটি হলো- নিশ্চয়ই একজন লোক যার নাম ইয়া‘লা বিন উমাইয়্যাহ্ ইহরাম বাঁধলেন জুব্বা গায়ে দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জুব্বা খুলে ফেলতে বললেন। তবে তিনি যে কেন তার নাম অস্পষ্ট রেখেছেন সে ব্যাপারে আল্লাই ভাল জানেন।

(كَمَا تَصْنَعُ فِىْ حَجِّكَ) ‘আল্লামা বাজী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা প্রমাণ করে যে, তিনি জানতেন প্রশ্নকারী হজ্জের কৃতকলাপ সম্পর্কে অবহিত। কেননা যদি তিনি না জেনে থাকেন তাহলে এ ধরনের কথা বলা সঠিক হতো না।

‘আল্লামা বাজী (রহঃ) আরো বলেন, ‘উলামাগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা নিয়ে মতবিরোধ করেছেন, ইবনুল ‘আরাবী (রহঃ) বলেন, জাহিলী যুগে তারা হজ্জের ইহরামের সময় কাপড় খুলে রাখতো এবং সুগন্ধি বর্জন করতো ঠিক তবে হজ্জের ক্ষেত্রে এ কাজে শিথিলতা প্রদর্শন করতো। তাই এ হাদীসের মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝিয়ে দিলেন হজ্জ/হজ ও ‘উমরার মধ্যে পার্থক্য করা ঠিক নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ