২৩৭০

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ব্যাপকতা

২৩৭০-[৭] ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু যুদ্ধবন্দী এলো। তখন দেখা গেল, একটি মহিলার বুকের দুধ ঝরে পড়ছে, আর সে শিশু সন্তানের সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ বন্দীদের মধ্যে একটি শিশু দেখতে পেল। তাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে সে দুধ পান করাল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমাদের কি মনে হয় এ মহিলাটি স্বীয় সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে? উত্তরে আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রসূল! কক্ষনো না। যদি সে নিক্ষেপ না করার সামর্থ্য রাখে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, অবশ্যই এ মহিলার সন্তানের প্রতি মায়া-মমতার চেয়ে বান্দার ওপর আল্লাহ তা’আলার মায়া-মমতা অনেক বেশি। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ سَعْةِ رَحْمَةِ اللهِ

وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَدِمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْيٌ فَإِذَا امْرَأَةٌ مِنَ السَّبْيِ قَدْ تَحَلَّبَ ثديُها تسْعَى إِذا وَجَدَتْ صَبِيًّا فِي السَّبْيِ أَخَذَتْهُ فَأَلْصَقَتْهُ بِبَطْنِهَا وَأَرْضَعَتْهُ فَقَالَ لَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتُرَوْنَ هَذِهِ طَارِحَةً وَلَدَهَا فِي النَّارِ؟» فَقُلْنَا: لَا وَهِيَ تَقْدِرُ عَلَى أَنْ لَا تَطْرَحَهُ فَقَالَ: «لَلَّهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ هَذِهِ بِوَلَدِها»

ব্যাখ্যা: (فَإِذَا امْرَأَةٌ مِنَ السَّبِىِّ) ‘‘বন্দীদের মাঝে একজন মহিলা দেখা গেল’’। হাফেয মহিলাটির নাম উল্লেখ করেননি।

(قَدْ تَحَلَّبَ ثَدْيُهَا) অর্থাৎ- নিজ সন্তান সঙ্গে না থাকায় দুধের আধিক্যতার কারণে স্তনের দুধ বয়ে যাচ্ছিল। হাফেয বলেন, সন্তানকে দুধ পান করানোর জন্য প্রস্ত্তত।

(تسْعٰى) শব্দটি (السعى) থেকে, অর্থাৎ- মহিলাটি তার সন্তানের অনুসন্ধানে দৌড়ে যাচ্ছিল। এক বর্ণনাতে আছে যা ابتغاء থেকে এসেছে অর্থ, অনুসন্ধান করা। ‘ইয়ায বলেন, তা ধারণা মাত্র আর বুখারীর বর্ণনাতে السعى থেকে যে تسعى এসেছে তা সঠিক। তবে ইমাম নাবাবী (রহঃ) এভাবে পর্যালোচনা করেছেন যে, উভয় বর্ণনাই সঠিক, তাতে কোন সন্দেহ নেই, মোট কথা মহিলা দৌড়াচ্ছিল ও তার সন্তানকে অনুসন্ধান করছিল।

কুরতুবী বলেন, تسعى বর্ণনার উত্তমতা ও স্পষ্টতা কারো কাছে গোপন নয়। তবে تبتغى বর্ণনার একটি বিশেষ দিক আছে, তা হল মহিলাটি তার সন্তানকে অনুসন্ধান করছিল। এখানে কর্ম সম্পর্কে জানা থাকার কারণে তা বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনাকারী ভুল করছে না।

(أَخَذَتْهُ فَأَلْصَقَتْهُ بِبَطْنِهَا) ‘‘মহিলাটি শিশুকে স্বীয় পেটের সাথে মিলিয়ে নিন’’। হাফেয বলেন, এখান থেকে কোন কিছুকে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। ইসমা‘ঈলী-এর বর্ণনা যা প্রমাণ করছে। আর তার শব্দ হল, মহিলাটি যখন বাচ্চা পেল তখন তাকে নিয়ে দুধ পান করালো। অতঃপর আরেকটি বাচ্চা পেল তাকে ধরে নিজ পেটের সাথে মিলিয়ে নিল। হাদীসটির বাচনভঙ্গি থেকে বুঝা গেল, নিশ্চয়ই মহিলাটি তার শিশুকে হারিয়ে ফেলেছিল এবং স্তনে দুধ জমা হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অতঃপর যখন কোন শিশু পেয়েছিল হালকা হওয়ার জন্য তাকে দুধ পান করিয়েছিল, অতঃপর যখন নিজ সন্তান বাস্তবে পেয়েছিল তখন তাকে জড়িয়ে ধরেছিল এবং সন্তান পাওয়াতে আনন্দের কারণে এবং সন্তানের প্রতি চূড়ান্ত ভালোবাসার কারণে তাকে নিজ পেটের সাথে মিলিয়ে নিয়েছিল।

(وَهِىَ تَقْدِرُ عَلٰى اَنْ لَا تَطْرَحَه) অর্থাৎ- স্বেচ্ছায় কখনো তাকে নিক্ষেপ করবে না। কারী বলেন, এখানে واو বর্ণটি অবস্থা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর একে এখানে ব্যবহারের উপকারিতা হল, মহিলাটি যদি নিরুপায় হয়ে যায় তাহলে সে তার সন্তানকে নিক্ষেপ করবে। তবে আল্লাহ নিরুপায় থেকে পবিত্র, সুতরাং তিনি কখনো তার বান্দাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না।

(لله) এখানে শুরুতে যবর বিশিষ্ট লামটি তাকীদ তথা গুরুত্ব বুঝানের জন্য এসেছে, ইসমাঈলী বর্ণনাতে কসম দ্বারা আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাতে আছে, অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আল্লাহ আরো দয়ালু ..... শেষ পর্যন্ত। (بعباده من هذه بوالدها) অর্থাৎ- মু’মিনদের প্রতি অথবা মুত্বলাকভাবে সকলের প্রতি। হাফেয বলেন, এখানে العباد দ্বারা যেন ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য যে ইসলামের উপর মারা গেছে। ইমাম আহমাদ, হাকিম সহীহ সানাদে আনাস থেকে যা বর্ণনা করেছেন তা এই, আনাস  বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের একটি দল এবং পথে একটি শিশুর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। অতঃপর মা যখন সম্প্রদায়কে দেখলেন তখন তার সন্তানের ব্যাপারে তিনি আশংকা করলেন অথবা সম্প্রদায়ে মাড়ানোর ব্যাপারে তিনি আশংকা করে দৌড়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলেন এবং বলতে লাগলেন, হে আমার ছেলে! হে আমার ছেলে! এ বলে মহিলাটি দৌড়াল এবং সন্তানকে ধরল। এরপর সম্প্রদায় বলল, হে আমার রসূল! এ মা এমন নয় যে, সে তার ছেলেটিকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে। তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহও তার বন্ধুকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না। ‘বন্ধু’ শব্দ দ্বারা বিশ্লেষণ করাতে কাফির ব্যক্তি বেরিয়ে যাবে, এভাবে কাবীরাহ্ গুনাহে জড়িত হওয়ার পর তাওবাহ্ করেনি এমন ব্যক্তি থেকে যাদেরকে আল্লাহ জাহান্নামে প্রবেশ করানোর ইচ্ছা করেন। শায়খ আবূ মুহাম্মাদ আবূ হামযাহ্ বলেন, العباد শব্দটি ব্যাপক এবং এর অর্থ দ্বারা মু’মিনগণ নির্দিষ্ট। এর সমর্থনে আল্লাহর বাণীঃ অর্থাৎ- ‘‘আর আমার দয়া প্রতিটি জিনিসকে পরিব্যাপৃত করে নিয়েছে অচিরেই আমি সে দয়া ঐ সকল লোকদের জন্য লিখে রাখব যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১৫৬)

অতএব রহমাতটি কার্যকারিতার দিক থেকে ব্যাপক, কিন্তু যার জন্য লিখা হয়েছে তার জন্য নির্দিষ্ট। অতঃপর ইবনু আবূ হামযাহ্ উল্লেখ করেন এ বাণী, অর্থাৎ- রহমাতের ব্যাপকতার সম্ভাবনা প্রাণীকুলের মাঝেও বিরাজ করছে। এ মতটিকে ‘আয়নী প্রাধান্য দিয়েছেন যেমন তিনি বলেন, স্পষ্ট যে, রহমাত ঐ ব্যক্তির জন্য ব্যাপক যার হুকুম গত হয়ে গেছে। রহমাতের একটি অংশ যে কোন বান্দার জন্য এমনকি প্রাণীকুলের জন্য। আর তা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর এ হাদীস অনুযায়ী (وانزل فى الأرض جزءا واحدا الخ) অর্থাৎ- আর রহমাত থেকে একটি অংশ জমিনের মাঝে অবতীর্ণ করেছেন আর ঐ অংশের সৃষ্টিজীব একে অপরের প্রতি দয়া করে থাকে।

ইবনু আবূ হামযাহ্ বলেন, হাদীসটিতে এমন বিষয়ের মাধ্যমে উদাহরণ দেয়া হয়েছে, মূলত ঐ জিনিসের যথার্থ পরিচিতির জন্য ঐ উদাহরণ দ্বারা বুঝা যায় না। আর উদাহরণটি যার জন্য পেশ করা হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে আয়ত্ব করা যায় না। কেননা আল্লাহর রহমাত জ্ঞান দ্বারা অনুভব করা যায় না। এ সত্ত্বেও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত মহিলার অবস্থার মাধ্যমে শ্রোতা ব্যক্তিদের উপমাটি পেশ করেছেন।