লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্
২৩২৬-[৪] আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার নাম করে যেসব হাদীস বর্ণনা করেছেন তার একটি হলো তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, আল্লাহ তাবারক ওয়াতা’আলা বলেনঃ হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার ওপর যুলম করাকে হারাম করে দিয়েছি। (যুলম করা আমার জন্য যা, তোমাদের জন্যও তা) তাই আমি তোমাদের জন্যও যুলম করা হারাম করে দিয়েছি। অতঃপর (পরস্পরের প্রতি) যুলম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট। কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই (সে-ই পথের সন্ধান পায়)। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পথের সন্ধান কামনা কর, তাহলে আমি তোমাদেরকে পথের সন্ধান দেবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত। কিন্তু আমি যাকে খাবার দেই (সে খাবার পায়)। তাই তোমরা আমার কাছে খাবার চাও। আমি তোমাদেরকে খাবার দেবো। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই উলঙ্গ। কিন্তু আমি যাকে পোশাক পরাই (সে পোশাক পরে)। তাই তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও। আমি তোমাদেরকে (পোশাক) পরাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গুনাহ (অপরাধ) করে থাকো। আর আমি তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবো।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা ক্ষতিসাধন করার সাধ্য রাখো না যে, আমার ক্ষতি করবে। এভাবে তোমরা আমার কোন উপকার করারও শক্তি রাখো না যে, আমার কোন উপকার করবে। তাই হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন্ তোমাদের মধ্যে হতে সর্বাপেক্ষা পরহেযগার ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর নিয়ে পরহেযগার হয়ে যায়। তাও আমার সাম্রাজ্যের কিছুমাত্র বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন্ তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অত্যাচারী-অনাচারী ব্যক্তির অন্তরের মতো অন্তর নিয়েও অত্যাচার-অনাচার করে তাদের এ কাজও আমার সাম্রাজ্যের কিছুমাত্র ক্ষতি বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন্ একই মাঠে দাঁড়িয়ে একসাথে আমার কাছে প্রার্থনা করে। আর আমি তোমাদের প্রত্যেককে তাদের চাওয়া জিনিস দান করি তাহলে আমার কাছে যা আছে, তার কিছুই কমাতে পারবে না। শুধু এতখানি ছাড়া যতটি একটি সূঁই যখন সমুদ্রে ডুবিয়ে আবার উঠিয়ে নেয়া হলে যতটুকু সমুদ্রের পানি কমায়। হে আমার বান্দাগণ! এখন বাকী রইল তোমাদের (কৃতকর্মের) ’আমল, যা আমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করব। অতঃপর এর প্রতিদান আমি পরিপূর্ণভাবে দেবো। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন ভাল (ফল) লাভ করে, সে যেন আল্লাহর শুকর আদায় করে। আর যে মন্দ (ফল) লাভ করে, সে যেন নিজেকে ছাড়া অন্যকে দোষারোপ না করে (কেননা তা তারই কৃতকর্মের ফল)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْاِسْتِغْفَارِ وَالتَّوْبَةِ
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا يَرْوِي عَنِ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ: «يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلَا تَظَالَمُوا يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ عَارٍ إِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّي فَتَضُرُّونِي وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي فَتَنْفَعُونِي يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وإنسكم وجنكم كَانُوا أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أفجر قلب وَاحِد مِنْكُم مَا نقص مِنْ مُلْكِي شَيْئًا يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِي فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ مَسْأَلَتَهُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلَّا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَ أَعمالكُم أحصها عَلَيْكُمْ ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ وَمِنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلَا يَلُومن إِلَّا نَفسه» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (قَالَ: يَا عِبَادِىْ) ইমাম ত্বীবী বলেন, জিন্ এবং মানব উভয়কে সম্বোধন করা হয়েছে, তাদের মাঝে পাপ-পুণ্য পর্যায়ক্রম হওয়ার কারণে। অত্র সম্বোধনে মালায়িকাহ্ও (ফেরেশতারাও) সম্বোধিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং গোপনীয়তা লাভের দিক থেকে মালায়িকার আলোচনা জীনদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করে করা সম্ভব। আর এ সম্বোধন প্রয়োগ হওয়ার ক্ষেত্রে তা পাপ প্রকাশ এবং তার সম্ভাব্যতার উপর অবস্থান করবে না। গ্রন্থকার বলেন, আমাদের শায়খ (ইমাম ত্বীবী) বলেন, তবে প্রথম সম্ভাবনাটি প্রকাশমান।
(حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلٰى نَفْسِىْ) অর্থাৎ- যুলম বা অবিচার আমার জন্য হারাম করেছি।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ বলেন, (حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلٰى نَفْسِىْ) এর অর্থ হল আমি অন্যায় থেকে পবিত্র। আর আল্লাহর ক্ষেত্রে যুুলম অসম্ভব। আর আল্লাহ কিভাবে সীমালঙ্ঘন করবেন অথচ তার ওপর এমন কেউ নেই যার আনুগত্য তাকে করতে হবে, আর কিভাবে তিনি অন্যের মালিকানাতে হস্তক্ষেপ করবেন অথচ সমগ্র বিশ্ব তার মালিকানাতে। আভিধানিক অর্থে তাহরীমের মূল হল বিরত থাকা। কোন কিছু থেকে বিরত থাকার সাথে হারামের সাদৃশ্য থাকার কারণে অবিচার থেকে আল্লাহর পবিত্র হওয়াকে হারাম বলা হয়েছে।
(فَلَا تَظَالَمُوا) অর্থাৎ- আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর অবিচারকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা পরস্পর একে অপরের প্রতি অবিচার করবে- এ থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। সুতরাং প্রত্যেক বান্দার ওপর আবশ্যক একে অন্যের প্রতি অবিচার না করা।
(يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُه) অর্থাৎ- যে ব্যক্তির সুপথের দিশা অর্জন হয়েছে তা কেবল আল্লাহর তরফ থেকে, তার নিজের তরফ থেকে নয়। এমনিভাবে খাদ্য, বস্ত্র যার যতটুকু অর্জিত হয়েছে তা কেবল আল্লাহর তরফ থেকে নিজের তরফ থেকে নয়। আর এ বিশ্বাস দাবী করছে সকল সৃষ্টি তাদের দীন ও দুনিয়াতে কল্যাণ আনয়ন ও ক্ষতি প্রতিহতকরণে আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আর নিশ্চয়ই বান্দাগণ এ সবের কিছুই নিজেরা করার ক্ষমতা রাখে না। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সুপথের দিক নির্দেশনা ও দানের মাধ্যমে যাকে দয়া করেননি দুনিয়াতে সে এ দু’টি জিনিস থেকে মাহরুম হবে।
মাযূরী বলেন, এর বাহ্যিক দিক হল, নিশ্চয়ই তাদেরকে পথভ্রষ্টতার উপরে সৃষ্টি করা হয়েছে তবে আল্লাহ যাকে সুপথের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সে ছাড়া। প্রসিদ্ধ হাদীসে আছে, প্রত্যেক ভূমিষ্ঠ সন্তান সনাতন ধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে। তিনি বলেন, অতঃপর প্রথমটি দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের কাছে পাঠানোর পূর্বে তারা যে অবস্থার উপর ছিল সে ব্যাপারে তাদের বর্ণনা দেয়া অথবা যদি তাদেরকে ও তাদের স্বভাবে যে প্রবৃত্তি, আরাম ও অবকাশগত ঢিলেমি আছে তা ছেড়ে দেয়া হয় অবশ্যই তারা পথভ্রষ্ট হবে আর এ দ্বিতীয়টিই হল সর্বাধিক স্পষ্ট। মানাবী বলেন, كلكم ضال অর্থাৎ- তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট, অর্থাৎ- রসূলদেরকে প্রেরণ করার পূর্বে তোমাদের প্রত্যেকেই শারী‘আত সম্বন্ধে উদাসীন ছিলে, তবে আল্লাহ যাকে ঈমান আনার তাওফীক দিয়েছেন সে হিদায়াত পেয়েছে।
কারী বলেন, এটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (كل مولود يولد على الفطرة) অর্থাৎ- ‘‘প্রত্যেক ভূমিষ্ঠ সন্তান সনাতন ধর্মের উপর জন্ম গ্রহণ করে’’ এ উক্তির পরিপন্থী না। কেননা الفطرة দ্বারা তাওহীদ উদ্দেশ্য। আর الضلالة দ্বারা ঈমানের বিধিবিধান ও ইসলামের দণ্ডবিধির বিশ্লেষণ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা উদ্দেশ্য। আর এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী, وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدٰى অর্থাৎ- ‘‘আর তিনি আপনাকে পথহারা পেয়েছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।’’ (সূরা আয্ যুহা- ৯৩ : ৭)
ইবনু রজব বলেন, কতক মনে করেন নিশ্চয়ই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (كلكم ضال إلا من هديته) এ বাণী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘ইয়ায-এর (আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি আমার বান্দাদেরকে তাওহীদবাদী করে সৃষ্টি করেছি’’) এ হাদীসের পরিপন্থী এবং অন্য বর্ণনাতে (মুসলিমদের থেকে শয়তান পৃথক হয়ে গেছে) এ বাণীর পরিপন্থী। অথচ এরূপ নয়। কেননা আল্লাহ আদম সন্তানদের সৃষ্টি করে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের উপযোগী করেছেন এবং তার দিকে তাদেরকে ঝুকিয়ে দিয়েছেন এবং ক্ষমতা দ্বারা তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন কিন্তু বান্দার জন্য আবশ্যক কর্মের মাধ্যমে ইসলামকে শিখে নেয়া, কেননা বান্দা শিক্ষা গ্রহণের পূর্বে মূর্খ থাকে তখন সে কিছু জানে না। যেমন আল্লাহ বলেন, وَاللهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُوْنِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَيْئًا অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতার পেট থেকে বের করেছেন এমতাবস্থায় তোমরা কিছু জানতে না’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৭৮)। আর তার নাবীকে বলেন, وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدٰى অর্থাৎ- ‘‘আর তিনি আপনাকে পথহারা পেয়েছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।’’ (সূরা আয্ যুহা- ৯৩ : ৭)
অত্র আয়াতে وَوَجَدَكَ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কিতাব এবং কৌশলের যা কিছু আল্লাহ নাবীকে শিক্ষা দিয়েছেন তার পূর্বে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতেন না। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘আর এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আমার তরফ থেকে রূহ তথা কুরআন প্রত্যাদেশ করেছি ইতিপূর্বে আপনি জানতে না কিতাব কি ও ঈমান কি কিন্তু আমি একে করেছি জ্যোতিস্বরূপ, আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা এর মাধ্যমে আমি তাকে পথপ্রদর্শন করি।’’ (সূরা আশ্ শূরা ৪২ : ৫২)
(يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُه) অর্থাৎ- ‘‘হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের সকলেই ক্ষুধার্ত তবে আমি যাকে খাইয়েছি সে ছাড়া।’’ ‘আলকামাহ্ বলেন, এটা এ কারণে যে, মানুষ কোন কিছুর মালিক নয় আর রিযক্বের ভাণ্ডার আল্লাহর হাতে। সুতরাং আল্লাহ অনুগ্রহপূর্বক যাকে খাওয়াবেন না আল্লাহর ন্যায়-ইনসাফ হিসেবে সে ক্ষুধার্ত থাকবে। কেননা কাউকে খাওয়ানো তার ওপর আবশ্যক না। এখন কেউ যদি বলেন কি করে এটা হতে পারে অথচ আল্লাহ বলেছেন, وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللهِ رِزْقُهَا অর্থাৎ- ‘‘পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সকল প্রাণীর খাদ্যভার একমাত্র আল্লাহর ওপর’’- (সূরা হূদ ১১ : ৬)। উত্তরে বলা হবে, এটা আল্লাহর তরফ থেকে অনুগ্রহ। মূলত প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহর ওপর কোন দায়িত্ব আছে এমন না। অতঃপর যদি বলা হয়, খাদ্যদানকে কিভাবে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা হল? অথচ আমরা স্বচক্ষে পেশা, কর্ম এবং উপার্জনের বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা খাদ্যসমূহ আগমন করতে দেখতে পাই। উত্তরে বলা হবে, তা আল্লাহর ক্ষমতা ও তাঁর গোপন কৌশলের মাধ্যমে প্রকাশ্য উপকরণসমূহের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
কারী বলেন, (إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُه) অর্থাৎ- যাকে আমি খাওয়াব, যার রিযককে আমি প্রশস্ত করে দেব এবং যাকে আমি ধনী করব একমাত্র সেই তো পাবে।
(فَاسْتَطْعِمُونِىْ) অর্থাৎ- তোমরা খাদ্য ও খাদ্যের সহজতা আমার থেকে অনুসন্ধান কর। (أُطْعِمْكُمْ) অর্থাৎ- আমি তোমাদের জন্য খাদ্য অর্জনের উপকরণ সহজ করে দিব।
(أَكْسُكُمْ) অর্থাৎ- আমি তোমাদের জন্য তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা সহজ করে দিব এবং তোমাদের থেকে তোমাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ পাওয়ার অপমান দূর করে দিব।
(فَتَنْفَعُونِىْ) ‘‘অতঃপর তোমরা আমার উপকার করবে’’। অর্থাৎ- বান্দাগণ আল্লাহর কোন ধরনের উপকার ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না, কেননা আল্লাহ তিনি নিজে ধনী, প্রশংসিত, বান্দার আনুগত্যের প্রয়োজন তাঁর নেই। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যেমে তার কোন উপকার সাধিত হয় না, বরং তারা নিজেরাই একে অপরের মাধ্যমে পরস্পর লাভবান হয়। তাদের অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত হন না, তারা নিজেরাই কেবল অবাধ্যতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ- ‘‘আর যারা কুফরীতে তরান্বিত করে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহর ক্ষতি সাধন করতে পারবে না’’- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৭৬)। আর আল্লাহ মূসা (আঃ) সম্পর্কে বর্ণনা দিতে যেয়ে বলেন, মূসা (আঃ) বলেছেনঃ অর্থাৎ- ‘‘তোমরা এবং সমস্ত জমিনবাসী যদি কুফরী কর তাহলে জেনে রেখ অবশ্যই আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, ধনী’’- (সূরা ইব্রাহীম ১৪ : ৮)।
কারী বলেন, অর্থাৎ- তোমাদের দ্বারা আমার কোন ক্ষতি করা এবং উপকার করা সম্ভব হবে না, কেননা তোমরা সকলে যদি আমার চূড়ান্ত ‘ইবাদাত করার দিকে সংঘবদ্ধ হও তাহলেও আমার রাজত্বে কোন উপকার পৌঁছানো সম্ভব হবে না আর যদি তোমরা আমার কোন চূড়ান্ত অবাধ্যতার উপর একত্রিত হও তাহলেও তোমরা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। বরং ‘‘যদি ভাল ‘আমল কর তাহলে তোমাদের নিজেদের উপকারার্থেই তা করলে আর যদি মন্দ ‘আমল কর তাহলে তোমাদের নিজেদের অকল্যাণের জন্যই তা করলে’’- (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭ : ৭)। আর এটি হল আল্লাহর (لو أن أولكم وأخركم-থ حديث قدسى) এ বাণীর মর্ম।
(كَانُوْا عَلٰى اَفْجَرِ قَلْبِ وَاحِدٍ مِنْكُمْ) অর্থাৎ- তোমরা যদি তোমাদের মধ্য থেকে সর্বাধিক ভীতিপূর্ণ ব্যক্তির হৃদয়ের উপর অবস্থান করে চূড়ান্ত আল্লাহ ভীতির অধিকারী হয়ে যাও। কবাযী বলেন, অর্থাৎ- তোমরা যদি কোন ব্যক্তির সর্বাধিক আল্লাহ ভীতি অবস্থার উপর অবস্থান কর, অর্থাৎ- তোমাদের থেকে প্রত্যেকেই এ অবস্থার উপর অবস্থান করে এভাবে মিরকাতে আছে।
(مَا زَادَ ذٰلِكَ فِىْ مُلْكِىْ شَيْئًا) অর্থাৎ- তোমরা আমার উপকার করার জন্য উপকার করার অবস্থানেই পৌঁছাতে পারবে না।
(مَا نَقَصَ مِنْ مُلْكِىْ شَيْئًا) অর্থাৎ- সামান্যতমও কমাতে পারবে না। অত্র হাদীসে شيئا অর্থাৎ- নাকেরা বা অনির্দিষ্ট বিশেষ্য আনা হয়েছে অতি নগণ্য বুঝানোর জন্য। আর এটা বুঝা যাচ্ছে, আগত হাদীসে এর পরিবর্তে (جناح بعوضة) দ্বারা। আর এটি আল্লাহর (لن تبلغوا ضرى فتضرونى) ‘‘তোমরা কখনো আমার ক্ষতিসাধন করার জন্য আমার ক্ষতি সাধন করার স্থানে পৌঁছাতে পারবে না।’’ এ বাণীর দিকে প্রত্যাবর্তন করছে। অর্থাৎ- আল্লাহর রাজত্ব সৃষ্টজীবের আনুগত্যের কারণে বৃদ্ধি পায় না যদিও তাদের প্রত্যেকেই পুণ্যবান হয়ে যায় এবং অবাধ্যদের অবাধ্যতার কারণে রাজ্যে কোন কিছু হ্রাসও পায় না যদিও জিন্ ও মানব প্রত্যেকইে অবাধ্য হয়ে যায়। কেননা আল্লাহ সুবহানাহূ সত্তাগতভাবে অন্যান্যদের থেকে অমুখাপেক্ষী। তাঁর গুণাবলী, তাঁর কর্মে ও তাঁর সত্তাতে রয়েছে সাধারণ পূর্ণাঙ্গতা। সুতরাং তাঁর রাজত্ব পূর্ণাঙ্গ রাজত্ব। তাঁর রাজত্বে কোন দিক দিয়ে কোন কারণে অপূর্ণাঙ্গতা নেই।
(فِىْ صَعِيدٍ وَاحِدٍ) অর্থাৎ- একই জমিনে একই স্থানে। ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, الصعيد শব্দটি মাটি ও ভূ-পৃষ্ঠ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এখানে ভ-ূপৃষ্ঠ উদ্দেশ্য।
(فَسَأَلُونِىْ) অর্থাৎ- তারা প্রত্যেকে আমার কাছে চায়। ইমাম ত্বীবী বলেন, চাওয়াকে একই স্থানে একত্রিত হওয়ার সাথে আওতাভুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কেননা যার কাছে একত্রিতভাবে চাওয়া হয় সেই চাওয়া তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয় এবং তা চাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করে এবং তার কাছে তাদের লক্ষ্যের সফলতা এবং তাদের দাবী উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যায়।
(فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ) অতঃপর আমি প্রত্যেক মানুষকেই দান করি, এমনিভাবে প্রত্যেক জিনকেও।
(مَا نَقَصَ ذٰلِكَ مِمَّا عِنْدِىْ) ‘‘এতে আমার নিকট যা আছে তার কিছুই কমবে না’’ এর দ্বারা তাঁর ক্ষমতার পূর্ণাঙ্গতা এবং তাঁর রাজত্বের পূর্ণাঙ্গতা উদ্দেশ্য। তাঁর রাজত্ব এবং তাঁর ধনভাণ্ডার শেষ হবে না এবং দানের কারণে তা কমবে না। যদিও পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে, একই স্থানে তারা যা চায় সব কিছু দেয়া হয়।
(إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ) একটি সুঁই যখন সমুদ্রে ডুবিয়ে আবার উঠিয়ে নেয়া হলে সমুদ্রের পানি যতটুকু কমায়। এখানে এ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট যা কিছু তা কমে না এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তা শেষ হয়ে যাবে আর আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা অবশিষ্ট থাকবে’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৯৬)। কেননা সমুদ্রে যখন কোন সুঁই প্রবেশ করানোর পর বের করা হবে তখন এ কারণে সমুদ্রে কিছু কমবে না। ত্বীবী বলেন, সুঁই সমুদ্র থেকে যা কমায় তা যখন অনুভূতিশীল না, জ্ঞানের কাছে তা যখন গণ্য না বরং তা না কমার হুকুমের মাঝে গণ্য তখন তা সৃষ্টিজীবের প্রয়োজনাদি পূর্ণাঙ্গভাবে দান করার সাথে আরো বেশি অনুভূতিশীল ও সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা তাঁর কাছে যা আছে তা কমে না।
নাবাবী বলেন, বিদ্বানগণ বলেছেন, এ উপমা অবলম্বন একটি বিষয় বুঝিয়ে দেয়ার নিকটবর্তী একটি মাধ্যম। এর অর্থ হল, প্রকৃতপক্ষে তা কিছু কমায় না। যেমন অন্য হাদীসে এসেছে, কোন খরচ তাকে কমায় না। কেননা আল্লাহর কাছে যা আছে তাতে অসম্পূর্ণতা প্রবেশ করে না। অসম্পূর্ণতা কেবল প্রবেশ করে ধ্বংসশীল সীমাবদ্ধ জিনিসের মাঝে। আর আল্লাহর দান তাঁর রহমাত ও তাঁর অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। আর এ দু’টি হল সিফাতের কদীম যাতে অসম্পূর্ণতা প্রবেশ করতে পারে না। অতঃপর সমুদ্রে সুঁইয়ের মাধ্যমে উপমা পেশ করা হয়েছে, কেননা স্বল্পতার ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে যা বর্ণনা করা হয় তার মাঝে এটি চূড়ান্ত পর্যায়। উদ্দেশ্য হল মানুষ যা স্বচক্ষে দেখে তা উপলব্ধি করার কাছাকাছি করে দেয়া। কেননা সমুদ্র দর্শনীয় জিনিসের মাঝে সর্বাধিক বড়, পক্ষান্তরে সুঁই অস্তিত্বশীল জিনিসের মাঝে সর্বাধিক ছোট। সেই সাথে তা মসৃণ। পানি তার সাথে সম্পৃক্ত হয় না।
(فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি তার রবের পক্ষ থেকে কল্যাণের তাওফীক পাবে এবং নিজের তরফ থেকে কল্যাণের কাজ পাবে। (فليحمد الله) অর্থাৎ- আল্লাহ তাকে কল্যাণকর কাজে তাওফীক দেয়ার কারণে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, কেননা তিনি পথপ্রদর্শক।
(وَمِنْ وَجَدَ غَيْرَ ذٰلِكَ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি অকল্যাণকর কিছু পাবে, অকল্যাণ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি তা তুচ্ছ হওয়ার জন্য এবং তার সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে।
(فَلَا يَلُوْمَنَّ إِلَّا نَفْسَه) ‘‘সে যেন নিজেকে ব্যতীত অন্য কাউকে দোষারোপ না করেন’’। কেননা অকল্যাণ তার নিজ থেকে প্রকাশ পেয়েছে অথবা সে তার এ পথভ্রষ্টতার উপর আছে যে দিকে আল্লাহর (كلكم ضال তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট) এ বাণী দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটি কারীর উক্তি। ‘আলক্বমাহ্ বলেন, নিশ্চয়ই ঐ আনুগত্যসমূহ যার ওপর সাওয়াব দেয়া হয় এবং আল্লাহর তাওফীক্বে ঐ কল্যাণ যার কারণে আল্লাহর প্রশংসা করা আবশ্যক এবং ঐ অবাধ্যতার কাজসমূহ যার ওপর শাস্তি আরোপ করা হয় এবং অকল্যাণ আরোপ করা হয়। যদিও সে অবাধ্যতার বিষয়গুলো আল্লাহর তাকদীর এবং বান্দাকে তার লাঞ্ছিত করার নিমিত্তে হয়ে থাকে তবুও তা বান্দার অর্জন। সুতরাং মন্দ উপার্জনের ক্ষেত্রে তার বাড়াবাড়ির কারণে সে যেন নিজকে তিরস্কার করে।