লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল
১৮৩৭-[১] ক্ববীসাহ্ ইবনু মুখারিক্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। তার কাছে ঋণ আদায়ের জন্য কিছু চাইলাম। তিনি বললেন, অপেক্ষা করো। আমার কাছে যাকাতের মাল আসা পর্যন্ত আসলে তোমাকে কিছু দেবার জন্য বলে দেব। তারপর তিনি বললেন, ক্ববীসাহ্! শুধু তিন ধরনের ব্যক্তির জন্য কিছু চাওয়া জায়িয। প্রথমতঃ যে ব্যক্তি অপরের ঋণের যামিনদার। তবে বেশী চাইতে পারবে না। বরং যতটুকু ঋণ শোধের জন্য প্রয়োজন শুধু ততটুকু চাইবে। এরপর আর চাইবে না। দ্বিতীয়তঃ ওই ব্যক্তি যে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে (দুর্ভিক্ষ প্লাবন ইত্যাদিতে)। তার সব ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। তারও (শুধু খাবার ও পোশাকের জন্য) ততটুকু যাতে প্রয়োজন মিটে যায়। তার জীবনের জন্য অবলম্বন হয়ে যায়। তৃতীয়তঃ ওই ব্যক্তি (যে ধনী, কিন্তু তার এমন কোন কঠিন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে যা মহল্লাবাসী জানে। যেমন ঘরের সব মালপত্র চুরি হয়ে গেছে অথবা অন্য কোন দুর্ঘটনার কারণে মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে)। (মহল্লার) তিনজন বুদ্ধিমান সচেতন লোক এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে যে, সত্যিই এ ব্যক্তি মুখাপেক্ষী। তার জন্যও সেই পরিমাণ (সাহায্য) চাওয়া জায়িয, যাতে তার প্রয়োজন মিটে। অথবা তিনি বলেছেন এর দ্বারা তার মুখাপেক্ষিতা ও প্রয়োজন দূর হয়, তার জীবনে একটি অবলম্বন আসে। হে ক্ববীসাহ্! এ তিন প্রকারের ’চাওয়া’ ছাড়া হালাল নয়। আর হারাম পন্থায় প্রাপ্ত মাল খাওয়া তার জন্য হারাম। (মুসলিম)[1]
بَاب مَنْ لَا تَحِلُّ لَهُ الْمَسْأَلَةُ وَمَنْ تَحِلُّ لَه
عَن قبيصَة بن مُخَارق الْهِلَالِي قَالَ: تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْأَلُهُ فِيهَا. فَقَالَ: «أَقِمْ حَتَّى تَأْتِينَا الصَّدَقَة فنأمر لَك بهَا» . قَالَ ثُمَّ قَالَ: «يَا قَبِيصَةُ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَحِلُّ إِلَّا لِأَحَدِ ثَلَاثَةٍ رَجُلٍ تَحَمَّلَ حَمَالَةً فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَهُ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قَالَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتَّى يقوم ثَلَاثَة من ذَوي الحجى مِنْ قَوْمِهِ. لَقَدْ أَصَابَتْ فُلَانًا فَاقَةٌ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قَالَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ فَمَا سِوَاهُنَّ من الْمَسْأَلَة يَا قبيصَة سحتا يأكلها صَاحبهَا سحتا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: মানুষের নিকট ভিক্ষাবৃত্তি করা বা চাওয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে এ হাদীসটি একটি বিশেষ দলীল। আর যে তিন প্রকার ব্যক্তির জন্য চাওয়া বৈধ বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলোঃ
১। যে ব্যক্তি কোন দেনার যামিন হয়েছে, যতক্ষণ না সে তা পরিশোধ করবে ততক্ষণ তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা বা চাওয়া বৈধ।
২। যে ব্যক্তির ওপর কোন বিপদ এসে তার সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে, যতক্ষণ না তার প্রয়োজন মিটাবার ব্যবস্থা হবে ততক্ষণ সে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বা চাইতে পারবে।
৩। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং তার প্রতিবেশীদের থেকে তিনজন ব্যক্তি (সৎ ও বিবেক সম্পন্ন) ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে, তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা বা চাওয়া বৈধ যতক্ষণ না সে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতে পারবে।
আল্লামা খাত্ত্বাবী বলেন, অত্র হাদীসের মধ্যে অনেক জানার বিষয় এবং উপকারিতা রয়েছে। আর তা হলো যাদের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা বা চাওয়া জায়িয তাদেরকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এক প্রকার হলো ধনী ব্যক্তি আর দু’প্রকারের দরিদ্র ব্যক্তি। অতঃপর দরিদ্র ব্যক্তিদেরকে আবার দু’ ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
১। মূলত দরিদ্র, কিন্তু গোপন রাখে।
২। প্রকাশ্যে তা বুঝা যায়।
হাদীসটির মাঝে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেকেই তার প্রয়োজন মিটানো পর্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তি করতে বা চাইতে পারবে তার অতিরিক্ত নয়। হাদীসের বাহ্যিক বিধান হলো যে, উপরে উল্লেখিত তিন প্রকারের ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা বা চাওয়া হারাম।