১৭৭৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৭৭৯-[৮] আবূ হুমায়দ আস্ সা’ইদী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযদ গোত্রের ইবনুল লুত্বিয়াহ্ নামক ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করার জন্য কর্মকর্তা নিযুক্ত করলেন। সে (যাকাত উসূল করে) মদীনায় ফিরে এসে (মুসলিমদের নিকট) বলতে লাগল, এ পরিমাণ সম্পদ তোমাদের (যাকাত হিসেবে উসূল হয়েছে, তোমরা এর হকদার)। আর এ পরিমাণ সম্পদ তুহফা হিসেবে আমাকে দেয়া হয়েছে (এটা আমার হক)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এসব কথা শুনে) লোকদের উদ্দেশে হামদ ও সানা পড়ে খুতবাহ্ দিলেন। তিনি (খুতবায়) বললেন, তোমাদের কিছু লোককে আমি ওসব কাজের জন্য নিয়োগ দিয়েছি যেসব কাজের জন্য আল্লাহ আমাকে হাকিম বানিয়েছেন। এখন তোমাদের এক ব্যক্তি এসে বলছে, এটা (যাকাত) তোমাদের জন্য, আর এটা হাদিয়্যাহ্। এ হাদিয়্যাহ্ আমাকে দেয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করো, সে ব্যক্তি তার পিতা অথবা মাতার বাড়ীতে বসে রইল না কেন? তখন সে দেখতো (তুহফা দানকারীরা) তাকে তার বাড়ীতেই তুহফা পৌঁছে দিয়ে যেত কিনা?

ঐ মহান সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন। তোমাদের যে ব্যক্তি যে কোন জিনিস তদ্রূপ করবে তা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার গর্দানের উপর বহন করে নিয়ে আসবে। যদি তা উট হয় তাহলে তার আওয়াজ উটের আওয়াজ হবে। যদি তা গরু হয় তাহলে তার আওয়াজ গরুর আওয়াজ হবে। যদি তা বকরী হয় তাহলে বকরীর আওয়াজ হবে। (অর্থাৎ দুনিয়ায় কোন জিনিস অন্যায়ভাবে গ্রহণ করলে, তা কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে কথা বলতে থাকবে)। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দু’ হাত এতো উপরে উঠালেন যে, আমরা তার বগলের নীচের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি মানুষের কাছে কি তা পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি (তোমার কথা) কি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি? (বুখারী, মুসলিম)[1]

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ’’তাকে জিজ্ঞেস করো, সে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার বাড়ীতে বসে থাকল না কেন? তখন সে দেখত তুহফা তার বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে যায় কিনা?’’ এ সম্পর্কে খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, এ বাণী এ কথারই দলীল যে, কোন হারাম কাজের জন্য যে জিনিসকে উপায় বা ওয়াসিলা বানানো হয় সে উপায়ে বা ওয়াসিলাও হারাম। আরো বলা যায়, কোন একটি ব্যাপারকে অন্য কোন ব্যাপারের সাথে (যেমন- বেচাকেনা, বিয়ে-শাদী ইত্যাদি) সম্পর্কিত করলে দেখতে হবে, সে ব্যাপারগুলোর কোন পৃথক পৃথক হুকুম এদের এক সাথে সম্পর্কিত হুকুমের সদৃশ কি-না। হলে তা জায়িয। আর না হলে না জায়িয। (শারহুস্ সুন্নাহ্)

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَن أبي حميد السَّاعِدِيّ: اسْتَعْمَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنَ الأزد يُقَال لَهُ ابْن اللتبية الأتبية عَلَى الصَّدَقَةِ فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ: هَذَا لَكُمْ وَهَذَا أُهْدِيَ لِي فَخَطَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأثْنى عَلَيْهِ وَقَالَ: أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أَسْتَعْمِلُ رِجَالًا مِنْكُمْ عَلَى أُمُور مِمَّا ولاني الله فَيَأْتِي أحدكُم فَيَقُول: هَذَا لكم وَهَذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِي فَهَلَّا جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ أَوْ بَيْتِ أُمِّهِ فَيَنْظُرُ أَيُهْدَى لَهُ أَمْ لَا؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْهُ شَيْئًا إِلَّا جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى رَقَبَتِهِ إِنْ كَانَ بَعِيرًا لَهُ رُغَاءٌ أَوْ بَقْرًا لَهُ خُوَارٌ أَوْ شَاة تَيْعر ثمَّ رفع يَدَيْهِ حَتَّى رَأينَا عفرتي إِبِطَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَل بلغت» . . قَالَ الْخَطَّابِيُّ: وَفِي قَوْلِهِ: «هَلَّا جَلَسَ فِي بَيْتِ أُمِّهِ أَوْ أَبِيهِ فَيَنْظُرُ أَيُهْدَى إِلَيْهِ أَمْ لَا؟» دَلِيلٌ عَلَى أَنَّ كُلَّ أَمْرٍ يُتَذَرَّعُ بِهِ إِلَى مَحْظُورٍ فَهُوَ مَحْظُورٌ وَكُلُّ دخل فِي الْعُقُودِ يُنْظَرُ هَلْ يَكُونُ حُكْمُهُ عِنْدَ الِانْفِرَادِ كَحُكْمِهِ عِنْدَ الِاقْتِرَانِ أَمْ لَا؟ هَكَذَا فِي شرح السّنة

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস হতে বুঝা যায় যে, যাকাত আদায় করার সময় কোন প্রকার হাদিয়্যাহ্ গ্রহণ করা জায়িয নয়। প্রকৃতপক্ষে এ হুকুম সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা এরূপ হাদিয়্যাহ্ বা ঘুষ গ্রহণ করবে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে উক্ত হাদিয়্যার মাল কাঁধে করে বহন করবে। উক্ত লোকটি কে ছিলেন তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ইয়ামানের আযদ গোত্রের। আবার কেউ কেউ বলেন, আসাদ গোত্রের। কোন কোন বর্ণনায় আছে, বানী আসাদ। কেউ কেউ বলেন, উক্ত গোত্রের নাম আযদও বলা হয় এবং আসাদও বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, তার নাম ইবনু লুতবিয়্যাহ্। হাফিয ইবনু হাজার বলেন যে, আমি তার নাম সম্পর্কে অবহিত হয়নি।

এ হাদীস থেকে কতগুলো উপকারিতা পাওয়া যায়। যথাঃ ১. ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীস থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, যাকাত আদায়কারীদের গ্রহণকৃত উপঢৌকন হারাম এবং তা আমানাতের খিয়ানত।

২.  যাকাত আদায়কারী আমানতদার ব্যক্তিকে আত্মসমালোচনা করতে হবে। কেননা এটি তার আমানাতকে সঠিক ভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

৩. যাকাত আদায়কারীদেরকে প্রদত্ত উপঢৌকনসমূহ বায়তুল মালের অন্তর্ভুক্ত হবে। যাকাত আদায়কারী তার স্বত্বাধিকারী হবে না যদি না নেতা সন্তুষ্ট চিত্তে তা তাকে দেন।

৪. কোন ব্যক্তি পক্ষপাতমূলকভাবে কোন সম্পদ গ্রহণের জন্য যে সব পথ অবলম্বন করে তা বাতিল।

৫. যে ব্যক্তি কোন ব্যাখ্যা জানতে পারবে যা কেউ গ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তার ভুলটি মানুষদের মাঝে বর্ণনা করে দিবে, যাতে তারা এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে সতর্ক হতে পারে।

৬. ভুলকারীকে ধমক/শাসন করা বৈধ এবং নেতৃত্ব, আমানাত রক্ষার ক্ষেত্রে উত্তম ব্যক্তির বিদ্যমানে তার চেয়ে নিচু স্তরের লোক নিয়োগ দেয়া বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ