১২৯৫

পরিচ্ছেদঃ ৩৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - রমাযান মাসের ক্বিয়াম (তারাবীহ সালাত)

ক্বিয়ামে রমাযান হলো রমাযানের রাত্রিগুলোতে ক্বিয়াম (কিয়াম) করা এবং সালাতুত্ তারাবীহ ও কুরআন তিলাওয়াত প্রভৃতি ’ইবাদাতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করা।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন যে, ক্বিয়ামে রমাযান দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তারাবীহের সালাত।

হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সেটা (তারাবীহ) দ্বারা রমাযানের ক্বিয়াম (কিয়াম)-এর উদ্দেশ্য হাসিল হবে।

তবে বিষয়টি এরূপ নয় যে, তারাবীহ ব্যতীত কিয়ামে রমাযান হবে না।

আল্লামা কিরমানী (রহঃ) বলেন যে, সকলের ঐকমত্য রয়েছে যে, কিয়ামে রমাযান দ্বারা তারাবীহের সালাতই উদ্দেশ্য تراويح শব্দটি ترويحة-এর বহুবচন যার অর্থ একবার বিশ্রাম নেয়া। রমাযানের রাত্রিগুলোর জামা’আতবদ্ধ সালাতের নামকরণ করা হয়েছে তারাবীহ। কেননা যারা ক্বিয়ামে রমাযানের ১ম জামা’আত করেছেন তারা প্রতি দু’ সালামের মাঝে বিশ্রাম নিতেন। ফাতহুল বারীতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।

আল ক্বামূস-এ রয়েছে যে, প্রতি চার রাক্’আতের পর বিশ্রামের কারণে রমাযানের ক্বিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে তারাবীহ। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের চার রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের পর বিশ্রাম নিতেন.....। (বায়হাক্বী- ২য় খন্ড, ৪৯৭ পৃঃ)

তবে জেনে রাখতে হবে যে, রমাযানে তারাবীহ, ক্বিয়ামে রমাযান, সালাতুল লায়ল, তাহাজ্জুদের সালাত এগুলো একই জাতীয় ’ইবাদাত এবং একই সালাতের ভিন্ন নাম। রমাযানে তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ ভিন্ন সালাত নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ অথবা য’ঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের রাত্রে দু’টি সালাত আদায় করেছেন যার একটি তারাবীহ ও অপরটি তাহাজ্জুদ। সুতরাং রমাযান ছাড়া অন্য মাসে যা তাহাজ্জুদ, রমাযানে তা তারাবীহ। যেমন- আবূ যার ও অন্যান্য রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস তার দলীল এবং হানাফী মাযহায অবলম্বী ফায়জুল বারী গ্রন্থ প্রণেতা (রহঃ) বলেন আমার নিকট পছন্দনীয় মত হলো তারাবীহ এবং রাতের সালাত একই যদিও উভয়ের গুণাবলী ভিন্ন, যাই হোক আমি বলব (মির্’আত প্রণেতা) যে, তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ একই সালাত এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তাহাজ্জুদটি শেষ রাতের সাথে নির্দিষ্ট। তবে আমার নিকট উত্তম কথা হলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ রাতের সালাত ছিল রাতের শেষাংশে।


১২৯৫-[১] যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমাযান) মাসে মসজিদের ভিতর চাটাই দিয়ে একটি কামরা তৈরি করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এখানে কয়েক রাত (তারাবীহ) সালাত আদায় করলেন। আস্তে আস্তে তাঁর নিকট লোকজনের ভিড় জমে গেল। এক রাতে তাঁর কণ্ঠস্বর না শুনতে পেয়ে লোকেরা মনে করেছে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে গেছেন। তাই কেউ কেউ গলা খাকারী দিলো, যাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের কাছে বেরিয়ে আসেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের যে অনুরাগ আমি দেখছি তাতে আমার আশংকা হচ্ছে এ সালাত না আবার তোমাদের ওপর ফরয হয়ে যায়। তোমাদের ওপর ফরয হয়ে গেলে তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে না। অতএব হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের বাড়ীতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর। এজন্য ফরয সালাত ব্যতীত যে সালাত ঘরে পড়া হয় তা উত্তম সালাত। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ

عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّخَذَ حُجْرَةً فِي الْمَسْجِدِ مِنْ حَصِيرٍ فَصَلَّى فِيهَا لَيَالِيَ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَيْهِ نَاسٌ ثُمَّ فَقَدُوا صَوْتَهُ لَيْلَةً وَظَنُّوا أَنَّهُ قَدْ نَامَ فَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يَتَنَحْنَحُ لِيَخْرُجَ إِلَيْهِمْ. فَقَالَ: مَا زَالَ بِكُمُ الَّذِي رَأَيْتُ مِنْ صَنِيعِكُمْ حَتَّى خَشِيتُ أَنْ يُكْتَبَ عَلَيْكُمْ وَلَوْ كُتِبَ عَلَيْكُمْ مَا قُمْتُمْ بِهِ. فَصَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ فَإِنَّ أَفْضَلَ صَلَاةِ الْمَرْء فِي بَيته إِلَّا الصَّلَاة الْمَكْتُوبَة)

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা, আমি তোমাদের ওপর ক্বিয়ামে রমাযান (তারাবীহ) ফরয হওয়ার ভয় পাচ্ছি। অর্থাৎ যদি সর্বদা আদায় করা হয় তবে তা তোমাদের ওপর ফরয হয়ে যেতে পারে। আর ফরয হয়ে গেলে তোমরা তা পালনে অক্ষম হবে।

মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন যে, এখানে দলীল রয়েছে যে, নিশ্চয় তারাবীহ জামা‘আত এবং এককভাবে আদায় করা সুন্নাত, তবে আমাদের যামানায় তা জামা‘আতের সাথে আদায় করা উত্তম; কারণ মানুষ এখন অলস, (অর্থাৎ যদি জামা‘আতের সাথে তারাবীহ না আদায় করা হয় তবে মানুষ অলসতাবশতঃ ক্বিয়ামে রমাযান থেকে সম্পূর্ণ গাফেল থাকবে।)

(فَصَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ) অর্থাৎ এখানে ঐ সকল নফল সালাতের কথা বলা হয়েছে যেগুলো জামা‘আতের সাথে আদায় করার ব্যাপারে শার‘ঈ কোন নির্দেশ নেই এবং যা মসজিদের সাথে নির্দিষ্টও নয়। এখানে উল্লেখিত ‘আমর (فَصَلُّوا) টি মুস্তাহাব বুঝাতে ব্যবহার হয়েছে।

(فَإِنَّ أَفْضَلَ صَلَاةِ الْمَرْء) এখানে এ বাক্যটি ব্যাপক অর্থবোধক যা সকল নফল ও সুন্নাত সালাতকে নির্দেশ করে। তবে যে সকল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ইসলামের নিদর্শন যেমন ঈদের সালাত, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত ও সালাতুল ইস্‌তিসক্বা বা পানি প্রার্থনার সালাত এগুলো ছাড়া সকল নফল ও সুন্নাত বাড়িতে পড়া উত্তম। তবে ফরয সালাত ব্যতীত ফরয সালাত মসজিদেই আদায় করতে হবে।

আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন যে, এখানে বাড়ীতে নফল সালাত আদায়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ তা অধিক গোপন ও রিয়া (লোক দেখানো) ‘ইবাদাত হতে সংরক্ষিত এবং এ নফল সালাতের ফলে বাড়ীতে আল্লাহর রহমাত নাযিল হয় ও শায়ত্বন (শয়তান) পলায়ন করে। আমি বলব (মির‘আত প্রণেতা) যে, এ হাদীস প্রমাণ করে তারাবীহের সালাত বাড়ীতে আদায় করাই উত্তম। কেননা তিনি রমাযানের সালাতের যে বিবরণ দিয়েছেন তা মসজিদে নাবাবীর ক্ষেত্রে। সুতরাং রমাযানের সালাত যখন মসজিদে নাবাবীর চেয়ে বাড়ীতে আদায় করাই উত্তম তখন মসজিদে নাবাবী ছাড়া সেটা অন্যান্য মসজিদে আদায় করার হুকুম কি হবে? এ ব্যাপারে অধিকাংশ ‘উলামাগণ বলেছেন যে, নিশ্চয় রমাযানের সালাত (তারাবীহ) মসজিদে পড়াই উত্তম। যা আলোচ্য হাদীসের বিপরীত, কেননা উক্ত হাদীসের মূল বিষয় হচ্ছে সালাতুর রমাযান বা তারাবীহ সংক্রান্ত এবং তাদের পক্ষ থেকে এ মর্মে জবাব দেয়া হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা (ফরয ছাড়া সব সালাত বাড়ীতে পড়া উত্তম) বলেছেন ফরয হওয়ার ভয়ে। কাজেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের মাধ্যমে যখন ভয় দূরীভূত হয় তখন তো তা মসজিদে আদায়ের নিষেধের কারণটিও রহিত হয়ে যায়। অতএব তা মসজিদে আদায় করাই উত্তম অন্যান্য রাত্রিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে সালাত আদায় করার মতই। অতঃপর ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তা চালু করেছেন এবং আজ পর্যন্ত মুসলিম মিল্লাতের ‘আমল তার উপর বলবৎ রয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ