লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৩২. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাতের সালাতে যা পড়তেন
১২১১-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে সজাগ হয়ে এ দু’আ পড়তেন, ’
’আল্ল-হুম্মা লাকাল হামদু, আনতা ক্বইয়্যিমুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না, ওয়ালাকাল হামদু, আনতা নূরুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না ওয়া লাকাল হামদু, আনতা মালিকুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না, ওয়ালাকাল হামদু, আনতাল হাক্কু, ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু, ওয়ালিক্ব-উকা হাক্কুন, ওয়া ক্বওলুকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান্না-রু হাক্কুন, ওয়ান্ নবীয়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন, ওয়াস্ সা-’আতু হাক্কুন, আল্ল-হুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া ’আলায়কা তাওয়াক্কালতু, ওয়া ইলায়কা আনাবতু, ওয়াবিকা খ-সামতু, ওয়া ইলায়কা হা-কামতু, ফাগফিরলী মা- ক্বদ্দামতু, ওয়ামা- আখখারতু, ওয়ামা- আসরারতু, ওয়ামা- আ’লানতু, ওয়ামা- আনতা আ’লামু বিহী মিন্নী, আনতাল মুক্বদ্দিমু, ওয়া আন্তাল মুআখখিরু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, ওয়ালা- ইলা-হা গয়রুকা।’’
অর্থাৎ ’’হে আল্লাহ! সব প্রশংসাই তোমার। তুমিই আসমান জমিন এবং যা এ উভয়ের মাঝে আছে ক্বায়িম রেখেছ। সকল প্রশংসা তোমার। তুমি আসমান-জমিন এবং এ উভয়ের মধ্যে যা আছে সকলের বাদশাহ। সকল প্রশংসা তোমারই। তুমিই সত্য। তোমার ওয়া’দা সত্য। তোমার সাক্ষাৎ সত্য। তোমার কালাম সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। সকল নবী সত্য। মুহাম্মাদ (রসূলুল্লাহ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছি। আমি তোমার ওপর ঈমান এনেছি। তোমার ওপরই ভরসা করেছি। তোমার দিকেই আমি ফিরেছি। তোমার মদদেই আমি শত্রুর মুকাবিলা করছি। তোমার নিকট আমার ফরিয়াদ। তুমি আমার আগের ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দাও। আমার গোপন ও প্রকাশ্য গুনাহ তুমি মাফ করে দাও। আমার ওসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও, যা আমার চেয়ে তুমি ভাল অবগত আছো। তুমি যাকে ইচ্ছা করবে আগে আনবে, যাকে ইচ্ছা করবে পেছনে সরিয়ে দিবে। তুমি ছাড়া (প্রকৃত) কোন মা’বূদ নেই। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يَقُوْلُ إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَتَهَجَّدُ قَالَ: «اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَقَوْلُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ وَلَا إِلَهَ غَيْرك»
ব্যাখ্যা: ‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের মূল হলো, (ترك الهجود) অর্থ নিদ্রা বর্জন। এখানে নিদ্রা বর্জন পূর্বক সালাত আদায়কে বুঝানো হয়েছে। এ হাদীসে দেখা যায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাত্রিতে তাহাজ্জুদের জন্য যখন উঠতেন তখন পড়তেনঃ ‘আল্ল-হুম্মা লাকাল হাম্দ আনতা ক্বইয়্যিমুস সামা-ওয়া-তি......’ কিন্তু মুসলিম, মালিকসহ আসহাবুস্ সুনানগণের বর্ণনায় এসেছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মধ্যরাতে যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন পড়তেন .......। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, বাক্যের প্রকাশ্য অর্থে বুঝা যায় যে, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখনই বলতেন (এই দু‘আ পাঠ করতেন।) ইমাম ইবনু খুযায়মাহ্ এর প্রমাণে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে নিম্নের এ হাদীসও পেশ করেছেনঃ ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাহাজ্জুদের জন্য দাঁড়াতেন ‘আল্ল-হু আকবার’ (তাকবীরে তাহরীমা) বলার পর বলতেন, ‘আল্ল-হুম্মা লাকাল হাম্দ ...........।’ সুনানে আবূ দাঊদেও উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ‘ক্বইয়্যিম’ শব্দটি বহুভাবে পড়া যায়, সকল পদ্ধতির অর্থ একই। এটি আল্লাহর নির্দিষ্ট সুন্দর নামসমূহের একটি নাম। অর্থ হলো সৃষ্টির সকল কর্মকান্ড প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনাকারী, যিনি স্বয়ং নিজেই প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া আসমান ও জমিনে কোন বস্ত্তর অস্তিত্ব থাকবে না, সুতরাং তাহমীদ খাস তারই জন্য।
‘তুমি আসমান জমিনের নূর,’ এর অর্থঃ এ দু’টিকে আলোকিত করেছ, তোমার কুদরত ও ক্ষমতার মাধমে আসমান জমিন আলোকিত হয়েছে এবং এ আলো থেকেই অন্যান্য সব সৃষ্টি আলোকিত। ‘মানুষের জ্ঞান-অনুভূতি তুমিই সৃষ্টি করেছ এবং এগুলোকে পরিমিত উপকরণ প্রদান করেছ’- এ বাক্যটি একটি দৃষ্টান্তের মতো, যেমন বলা হয়, অমুক ব্যক্তি শহরের নূর বা আলো, এর অর্থ হলো সে শহরকে আলোকিত করেছে। ‘তুমি আসমান জমিনের মালিক’ এর অর্থ হলোঃ প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল প্রকার কাজের একক নির্বাহী, এ কাজে তোমার কোন শরীক বা অংশীদার নেই।
‘আনতাল হাক্কু’ এর অর্থ হলোঃ তোমার অস্তিত্ব সন্দেহাতীত ও নিশ্চিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত এতে কোনই সন্দেহ নেই। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এ গুণটি কেবল আল্লাহর জন্যই খাস, যেহেতু তার ওপর (عدم) বা অনস্তিত্বের স্পর্শ লাগে না।
‘তোমার ওয়া‘দা হক’ এর অর্থ হলোঃ তুমি সত্যবাদী, তোমার কথার খেলাফ হয় না।
‘তোমার সাক্ষাৎ হক বা সত্য’ এর অর্থ হলোঃ আখিরাতের দিকে প্রত্যাবর্তন এবং তার দর্শন লাভ। কেউ কেউ বলেছেন, নেককার বদকার সকলের জন্য আখিরাতে জাযা প্রাপ্তি। কেউ অর্থ নিয়েছেন মৃত্যু, যেহেতু মৃত্যু হলো সাক্ষাতের ওয়াসীলা; কিন্তু ইমাম নাবাবী এ ব্যাখ্যাকে বাতিল বলে অভিহিত করেছেন।
‘জান্নাত সত্য জাহান্নাম সত্য’ এর অর্থ হলো এগুলো বর্তমান মওযুদ আছে।
‘মুহাম্মাদ সত্য’ এখানে অন্য সকল নাবী বা রসূলকে বাদ দিয়ে শুধু মুহাম্মাদের নাম উল্লেখ করা বা খাস করা তার মর্যাদার কারণে।
‘তোমার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছি, তোমার ওপর ঈমান এনেছি, তোমার ওপরই ভরসা করছি’ এর অর্থ হলোঃ তোমার আনুগত্য প্রকাশ করছি, তোমার কাছে নত হচ্ছি এবং তোমাকে সত্য জানছি, আর আমার সকল কর্মকান্ড তোমার কাছেই পেশ করছি।
আমি আমার ক্বলব তোমার দিকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি আর তোমার দেয়া দলীল প্রমাণাদির মাধ্যমে বিরুদ্ধবাদীর সাথে আমি তোমার জন্যই ঝগড়ায় লিপ্ত হই।
‘আমার পূর্বাপর গুনাহ এবং গোপন প্রকাশ্যের গুনাহ ক্ষমা করে দাও’; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষমা চাওয়ার অর্থ হলো অতিরিক্ত বিনয়ী হওয়া এবং আল্লাহর মহত্বের প্রতি ঝুঁকে পড়া, অথবা উম্মাতকে শিক্ষাদানের উদ্দেশে, যাতে উম্মাত এটা অনুসরণ করে চলে। পূর্বাপর গুনাহ বলতে এখন থেকে পূর্বে যা করা হয়েছে এবং যা করা হবে। অনুরূপ প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য বলতে অন্তরের কল্পনাপ্রসূত গুনাহ এবং মুখে উচ্চারণের দায়ে গুনাহও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
‘আন্তাল মুক্বদ্দিমু ওয়াল মুআখখিরু’ দ্বারা তিনি তার সত্তার দিকে ইশারা করেছেন। কারণ তিনি ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে উত্থানের দিক থেকে সর্বাগ্রে উত্থিত হবেন কিন্তু তিনি দুনিয়াতে প্রেরণের দিক থেকে সর্বশেষে প্রেরিত হয়েছেন। ক্বাযী ‘আয়ায বলেন, এর অর্থ বলা হয় বিভিন্ন বস্ত্তর অবতরণ এবং মনযিল বিষয়ে, কোনটি আগে কোনটি পরে হয়েছে। কাউকে সম্মানিত করেছেন কাউকে লাঞ্ছিত করেছেন। অথবা একজনকে আরেকজনের ওপর মর্যাদাশীল করেছেন। ইমাম কিরমানী বলেন, এ হাদীসটি জাওয়ামিউল কালাম সম্বলিত, যার শব্দ অল্প কিন্তু অর্থ ব্যাপক এবং গভীর।