লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৮০১-[১২] আবূ হুমায়দ আস্ সা’ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি জানি। তারা বললেন, তা আমাদেরকে বলুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ালে দু’ হাত উঠাতেন, এমনকি তা দু’ কাঁধ বরাবর উপরে তুলতেন। তারপর তাকবীর বলতেন। এরপর ’ক্বিরাআত (কিরআত)’ পাঠ করতেন। এরপর রুকূ’তে যেতেন। দু’ হাতের তালু দু’ হাঁটুর উপর রাখতেন। পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ- মাথা নীচের দিকেও ঝুকাতেন না, আবার উপরের দিকেও উঠাতেন না। এরপর (রুকূ’ থেকে) মাথা উঠিয়ে বলতেন ’’সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’। তারপর সোজা হয়ে হাত উপরে উঠাতেন, এমনকি তা কাঁধ বরাবর করতেন এবং বলতেন, ’আল্লা-হু আকবার’। এরপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার জন্য জমিনের দিকে ঝুঁকতেন। সাজদার মধ্যে দুই হাতকে বাহু থেকে আলাদা করে রাখতেন। দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোকে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে ফিরিয়ে দিতেন। তারপর মাথা উঠাতেন। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসতেন। এরপর সোজা হয়ে থাকতেন, যাতে তাঁর সমস্ত হাড় নিজ নিজ জায়গায় এসে যায়।
তারপর তিনি দাঁড়াতেন। দ্বিতীয় রাক্’আতও এভাবে আদায় করতেন। দু’ রাক্’আত আদায় করে দাঁড়াবার পর তাকবীর বলতেন ও কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন, যেভাবে প্রথম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করার সময় করতেন। এরপর তাঁর বাকী সালাত এভাবে তিনি আদায় করতেন। শেষ রাক্’আতের শেষ সাজদার পর, যার পরে সালাম ফিরানো হয়, নিজের বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং এর উপর বসতেন। তারপর সালাম ফিরাতেন। তারা বলেন, আপনি সত্য বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবেই সালাত আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ, দারিমী, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1] আর তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ এ বর্ণনাটিকে এই অর্থে নকল করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আবূ হুমায়দ-এর হাদীসে আছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ করলেন। দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু আঁকড়ে মজবুত করে ধরলেন। এ সময় তাঁর দু’ হাত ধনুকের মতো করে দু’ পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। আবূ হুমায়দ (রাঃ)আরও বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। নাক ও কপাল মাটির সাথে ঠেকালেন। দু’ হাতকে পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। দু’ হাত কাঁধ সমান জমিনে রাখলেন। দু’ উরুকে রাখলেন পেট থেকে আলাদা করে। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসলেন। ডান পায়ের সম্মুখ ভাগকে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম উরুর উপর রাখলেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করলেন। আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই রাক্’আতের পর বাম পায়ের পেটের উপর বসতেন। ডান পা রাখতেন খাড়া করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চতুর্থ রাক্’আতে বাম নিতম্বকে জমিনে ঠেকাতেন আর পা দু’টিকে একদিক দিয়ে বের করে দিতেন (ডান দিকে)।[2]
عَن أبي حميد السَّاعِدِيّ قَالَ فِي عشرَة مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا أَعْلَمُكُمْ بِصَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا فَاعْرِضْ. قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاة يرفع يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يُكَبِّرُ ثُمَّ يَقْرَأُ ثُمَّ يُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يَرْكَعُ وَيَضَعُ رَاحَتَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ ثُمَّ يَعْتَدِلُ فَلَا يُصَبِّي رَأْسَهُ وَلَا يُقْنِعُ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَيَقُولُ: «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ مُعْتَدِلًا ثُمَّ يَقُولُ: «اللَّهُ أَكْبَرُ» ثُمَّ يَهْوِي إِلَى الْأَرْضِ سَاجِدًا فَيُجَافِي يَدَيْهِ عَن جَنْبَيْهِ وَيفتح أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ وَيُثْنِي رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا ثُمَّ يَعْتَدِلُ حَتَّى يَرْجِعَ كل عظم إِلَى مَوْضِعِهِ مُعْتَدِلًا ثُمَّ يَسْجُدُ ثُمَّ يَقُولُ: «اللَّهُ أَكْبَرُ» وَيَرْفَعُ وَيَثْنِي رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا ثُمَّ يَعْتَدِلُ حَتَّى يَرْجِعَ كُلُّ عَظْمٍ إِلَى مَوْضِعِهِ ثُمَّ يَنْهَضُ ثُمَّ يَصْنَعُ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ إِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا كَبَّرَ عِنْدَ افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ ثُمَّ يَصْنَعُ ذَلِكَ فِي بَقِيَّةِ صَلَاتِهِ حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِي فِيهَا التَّسْلِيمُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْسَرِ ثُمَّ سَلَّمَ. قَالُوا: صَدَقْتَ هَكَذَا كَانَ يُصَلِّي. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والدارمي وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ مَعْنَاهُ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَفِي رِوَايَةٍ لِأَبِي دَاوُدَ مِنْ حَدِيثِ أَبِي حُمَيْدٍ: ثُمَّ رَكَعَ فَوَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ كَأَنَّهُ قَابِضٌ عَلَيْهِمَا وَوَتَّرَ يَدَيْهِ فَنَحَّاهُمَا عَنْ جَنْبَيْهِ وَقَالَ: ثُمَّ سَجَدَ فَأَمْكَنَ أَنْفَهُ وَجَبْهَتَهُ الْأَرْضَ وَنَحَّى يَدَيْهِ عَنْ جَنْبَيْهِ وَوَضَعَ كَفَّيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَفَرَّجَ بَيْنَ فَخِذَيْهِ غَيْرَ حَامِلٍ بَطْنَهُ عَلَى شَيْءٍ مِنْ فَخِذَيْهِ حَتَّى فَرَغَ ثُمَّ جَلَسَ فَافْتَرَشَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَأَقْبَلَ بِصَدْرِ الْيُمْنَى عَلَى قِبْلَتِهِ وَوَضَعَ كَفَّهُ الْيُمْنَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَى وَكَفَّهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ يَعْنِي السَّبَّابَةَ. وَفِي أُخْرَى لَهُ: وَإِذَا قَعَدَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ قَعَدَ عَلَى بَطْنِ قَدَمِهِ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْيُمْنَى وَإِذَا كَانَ فِي الرَّابِعَةِ أَفْضَى بِوَرِكِهِ الْيُسْرَى إِلَى الْأَرْضِ وَأَخْرَجَ قَدَمَيْهِ مِنْ نَاحِيَةٍ وَاحِدَة
ব্যাখ্যা: এ হাদীস নির্দেশ করে যে, আবূ হুমায়দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের বিবরণ দিয়েছেন কথার মাধ্যমে এবং তার থেকে আর এক বর্ণনা আছে, সেখানে তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের বিবরণ দিয়েছেন কর্মের মাধ্যমে। ‘আল্লামা হাফিয (রহঃ) বলেন, এ দু’ রিওয়ায়াতের মাঝে এভাবে সমন্বয় করা সম্ভব যে, একবার সালাতের বিবরণ আসছে কথায় আর একবার সালাতের বিবরণ আসছে কাজের মাধ্যমে যা আরো সুস্পষ্ট।