পরিচ্ছেদঃ ৬৭/৩৬. বিয়ে করার পূর্বে মেয়ে দেখে নেয়া।
৫১২৫. ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, আমি তোমাকে স্বপ্নের মধ্যে দেখেছি, একজন ফেরেশতা তোমাকে রেশমী চাদরে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে এসে বলল, এ হচ্ছে আপনার স্ত্রী। এরপর আমি তোমার মুখমণ্ডল
থেকে চাদর খুলে ফেলে তোমাকে দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, যদি স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা বাস্তবায়িত হবে।[1][৩৮৯৫](আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৯)
[1] দাম্পত্য জীবনকে সুখময় ও স্থায়ী করার মানসে ও সুখ সমৃদ্ধির জন্য বিয়ের পূর্বে কনেকে দেখে নেয়া উচিত বলে ইসলামে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম দলীল হচ্ছে কুরআন মাজীদের নিম্নোক্ত বাণী-
‘তোমরা বিয়ে কর সেই স্ত্রীলোক যাকে তোমাদের ভাল লাগে।’ (সূরা আন-নিসা : ৩)
ইমাম সুয়ূতী এ আয়াতের ভিত্তিতে দাবী করে বলেছেন- এ আয়াতে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে বিয়ের পূর্বে কনেকে দেখে নেয়া সম্পূর্ণ হালাল। কেননা কোন্ মেয়ে পছন্দ কিংবা কোন্ মেয়ে ভাল হবে তা নিজের চোখে দেখেই আন্দাজ করা যেতে পারে। (রুহুল মা‘আনী ১৯৬ পৃঃ)
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ নাবী ﷺ বলেছেন-
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ الْمَرْأَةَ فَإِنْ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مَا يَدْعُوهُ إِلَى نِكَاحِهَا فَلْيَفْعَلْ)) قَالَ فَخَطَبْتُ جَارِيَةً فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ لَهَا حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا مَا دَعَانِي إِلَى نِكَاحِهَا وَتَزَوُّجِهَا فَتَزَوَّجْتُهَا.
‘‘তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেবে তখন নিজ চোখে তা দেখে নেয়ার অবশ্যই চেষ্টা করবে যা তাকে বিয়ে করতে আকর্ষিত করে। জাবির ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন- [রসূলের উক্ত কথা শুনে] আমি একটি মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলাম। তারপর তাকে গোপনে দেখে নেয়ার জন্য আমি চেষ্টা চালাতে শুরু করি। শেষ পর্যন্ত আমি তার মধ্যে এমন কিছু দেখতে পাই যা আমাকে আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধ করে তাকে বিয়ে করে স্ত্রী হিসেবে বরণ করে নিতে। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি। [আবূ দাঊদ (২০৮২) (হাদীসটিকে শাইখ আলবানী হাসান আখ্যা দিয়েছেন। নাবী -এর বাণী পর্যন্ত হাদীসটি ইমাম আহমাদও (১৪১৭৬, ১৪৪৫৫) বর্ণনা করেছেন]।
ইমাম আহমাদের বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় যে, জাবির (রাঃ) একটি গাছেরডালে গোপনে বসে থেকে প্রস্তাবিত কনেকে দেখে নিয়েছিলেন। (মুসনাদে আহমাদ)
মুহাম্মাদ বিন মাসলামা (রাঃ)হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ
خَطَبْتُ امْرَأَةً فَجَعَلْتُ أَتَخَبَّأُ لَهَا حَتَّى نَظَرْتُ إِلَيْهَا فِي نَخْلٍ لَهَا فَقِيلَ لَهُ أَتَفْعَلُ هٰذَا وَأَنْتَ صَاحِبُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ إِذَا أَلْقَى اللهُ فِي قَلْبِ امْرِئٍ خِطْبَةَ امْرَأَةٍ فَلَا بَأْسَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا.
আমি এক মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, অতঃপর আমি তাকে গোপনে দেখার চেষ্টা শুরু করলাম। আমি তার (মেয়ের) একটি গাছের মধ্য থেকে তাকে দেখলাম। তাকে [মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাকে -কে] বলা হলঃ আপনি এরূপ কর্ম করছেন অথচ আপনি রসূল -এর একজন সাহাবী! তখন তিনি বললেনঃ আমি রসূল ﷺ-কে বলতে শুনেছি- যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন পুরুষের মনে কোন বিশেষ মেয়েকে বিয়ে করার বাসনা জাগাবেন, তখন তাকে নিজ চোখে দেখে নেয়ায় কোনই দোষ নেই। [হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সহীহ্, দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্ সহীহাহ্’’ (৯৮, ১ম খন্ড) ও ‘‘সহীহ্ ইবনু মাজাহ্’’ (১৮৬৪)]।
হাদীসের মধ্যে রসূল আরো বলেছেনঃ
(إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَّنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كاَنَتْ لاَ تَعْلَمُ) .
‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে তখন তাকে দেখতে কোন সমস্যা নেই, যদি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার উদ্দেশ্যে দেখে, যদিও তা সে মেয়ে না জানে।’’ [হাদীসটি ইমাম ত্বহাবী, আহমাদ ও ত্ববারানী বর্ণনা করেছেন। হাদীসটিকে শাইখ আলবানী সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন, দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্ সহীহাহ্’’ (৯৭)]।
এ হাদীসগুলোর কারণে বিয়ের পূর্বেই কনে দেখে নেয়া বাঞ্ছনীয়। তাতে করে তার ভাবী স্ত্রী সম্পর্কে মনে খুঁৎখুঁতে ভাব ও সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। থাকবে না কোন দ্বিধা দ্বন্দ্বের অবকাশ। শুধু তাই-ই নয়, এর ফলে ভাবী বধূর প্রতি আকর্ষণ জাগবে এবং সেই স্ত্রীকে পেয়ে সে সুখী হতে পারবে।
এ হাদীসগুলোর দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি দিলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, শুধুমাত্র চেহারা ও হাত দেখাকে বুঝানো হয়নি, বরং মেয়ের আরো কিছু অঙ্গ যেমন হাঁটুর নিম্নের পায়ের নলার গোস্তের অংশ, কাঁধ, চুল, বা অনুরূপ কিছু অংশও দেখা যাবে এরূপ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ মতটিই সঠিক। এ সম্পর্কে সুবিখ্যাত মুহাদ্দিস শাইখ আলবানী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘‘সিলসিলাহ্ সহীহাহ্’’ এর প্রথম খন্ডের (৯৯) নম্বর হাদীসের ব্যাখ্যার মধ্যে একটি চমৎকার পর্যালোচনা সহকারে ফাকীহ্গণের মতামতগুলো তুলে ধরে উক্ত সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে দেখাটা যেন একমাত্র বিয়ের উদ্দেশ্যে হয়। অন্যকোন কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা নিয়ে যেন না হয়।
بَاب النَّظَرِ إِلَى الْمَرْأَةِ قَبْلَ التَّزْوِيجِ
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ لِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَيْتُكِ فِي الْمَنَامِ يَجِيءُ بِكِ الْمَلَكُ فِي سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ فَقَالَ لِيهٰذِه„ امْرَأَتُكَ فَكَشَفْتُ عَنْ وَجْهِكِ الثَّوْبَ فَإِذَا أَنْتِ هِيَ فَقُلْتُ إِنْ يَكُ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ يُمْضِه„.
Narrated `Aisha:
Allah's Messenger (ﷺ) said (to me), "You were shown to me in a dream. An angel brought you to me, wrapped in a piece of silken cloth, and said to me, 'This is your wife.' I removed the piece of cloth from your face, and there you were. I said to myself. 'If it is from Allah, then it will surely be.' "