পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬২১৯-[২৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে ছিলাম। এ সময় তিনি (সা.) ঘোষণা দিলেন, যে লোক আবূ সুফইয়ান-এর গৃহে প্রবেশ করবে সে নিরাপদে, আর যে লোক অস্ত্র ফেলে দেবে সেও নিরাপদ। তখন আনসরাগণ বলতে লাগল, লোকটির মাঝে স্বীয় আত্মীয়স্বজনের মায়া ও স্বীয় জন্মস্থানের প্রতি আকর্ষণ দেখা দিয়েছে। এমন সময় আল্লাহ তা’আলা রাসূল (সা.)-এর ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা তো আমার সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য করেছ যে, লোকটিকে আত্মীয়স্বজন ও জন্মভূমির মায়া গ্রাস করে ফেলেছে। কখনো নয়! নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আমি আল্লাহ পথে এবং তোমাদের দিকে হিজরত করেছি। তোমাদের মাঝেই আমার জীবন আর তোমাদের মাঝেই আমার মরণ। এ কথা শুনে তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আমরা উক্ত কথাটি শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ব্যাপারে নিজ কার্পণ্য হিসেবে বলেছি। তখন তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদের সত্যবাদিতা গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদের আপত্তি গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)
وَعَنْهُ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْفَتْحِ فَقَالَ: «مَنْ دَخَلَ دَارَ أَبِي سُفْيَانَ فَهُوَ آمِنٌ وَمَنْ أَلْقَى السِّلَاحَ فَهُوَ آمِنٌ» . فَقَالَتِ الْأَنْصَارُ: أَمَّا الرَّجُلُ فَقَدْ أَخَذَتْهُ رَأْفَةٌ بِعَشِيرَتِهِ وَرَغْبَةٌ فِي قَرْيَتِهِ. وَنَزَلَ الْوَحْيُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «قُلْتُمْ أَمَّا الرَّجُلُ فَقَدْ أَخَذَتْهُ رَأْفَةٌ بِعَشِيرَتِهِ وَرَغْبَةٌ فِي قَرْيَتِهِ كَلَّا إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ هَاجَرْتُ إِلَى الله وإليكم فالمحيا مَحْيَاكُمْ وَالْمَمَاتُ مَمَاتُكُمْ» قَالُوا: وَاللَّهِ مَا قُلْنَا إِلَّا ضِنًّا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ. قَالَ: «فَإِنَّ اللَّهَ وَرَسُوله يصدقانكم ويعذرانكم» . رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (86 / 1780)، (4624) ۔ (صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসটির ব্যাখ্যায় ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ সুফইয়ান যখন ইসলাম গ্রহণ করল তখন ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, সে তো এমন লোক যে গর্ব করতে পছন্দ করে তো আপনি তার জন্য কিছু একটা করে দেন না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, যে আবূ সুফইয়ান-এর বাড়িতে প্রবেশ করবে সেও নিরাপদ।
মিরক্বাতুল মাফাতীহ প্রণেতা আবূ সুফইয়ান সম্পর্কে বলেন, তিনি হলেন, মুআবিয়াহ (রাঃ)-এর পিতা আবূ সুফইয়ান ইবনু সাখর ইবনু হারূব আল উমাবী আল কুরায়শী। জাহিলী যুগে হস্তির ঘটনা ঘটার দশ বছর পূর্বে সম্ভ্রান্ত কুরায়শ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কুরায়শ বংশের নেতা। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হুনায়নের যুদ্ধে শরীক হন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার মনোরঞ্জনের লক্ষ্যে সেই যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত গনীমতের মাল থেকে ১০০টি উট এবং ৪০ উক্বিয়্যাহ্ দিয়েছিলেন। ত্বায়িফ যুদ্ধের দিন তিনি এক চোখে আঘাত পান। তারপর ইয়ারমূক যুদ্ধ পর্যন্ত তার এক চোখ অন্ধই ছিল। অতঃপর তার আরেক চোখে একটি পাথর লাগে। এতে তিনি একেবারে অন্ধ হয়ে যান। ৩৪ হিজরীতে তিনি মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। তারপর তাকে বাক্বী কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার থেকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আনসারগণ যখন ধারণা করল যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) হয়তো মক্কায় থেকে যাবেন। তখন অনেকেই পরস্পর বলতে লাগল যে, মক্কার প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসা এবং আত্মীয়-স্বজনের মায়া ছেড়ে তিনি হয়তো আর মদীনায় যাবেন না।
সে সময় আল্লাহ ওয়াহী নাযিল করে তা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বিষয়টি জানিয়ে দিলেন। তারপর তিনি আনসারদের জানিয়ে দিলেন, কক্ষনোই না। আমার মক্কাহ থেকে মদীনায় হিজরত করাটা ছিল শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে। অতএব, যে ভূমির মায়া ছেড়ে তোমাদের কাছে চলে গেছি সেখান থেকে আর এখানে ফিরে আসব না। অতএব যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন তোমাদের সাথে থাকব। আর যখন মারা যাবো তখন তোমাদের ভূমিতেই মারা যাব। আনসারগণ রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর প্রতি এই ধারণা করেছিলেন, কারণ হলো মানুষ প্রকৃতিকভাবেই স্বদেশের প্রতি এবং আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জনদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। তাই তারা আশঙ্কা করলেন যে, হয়তো তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে হাতছাড়া করছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে যেন না ছাড়তে হয় এই আশা ও আকাক্ষা নিয়ে তারা এসব কথাও বলছিলেন।
উক্ত হাদীস থেকে এটিও পাওয়া যায় যে, ‘আলিমগণকে ও নেককার লোকেদেরকে নিজেদের সাথে রাখা এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে তাদের বিচ্ছেদে অসন্তুষ্ট হওয়া জায়িয। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।