হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৬০৭৫

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৭৫-[৭] সুমামাহ্ ইবনু হাযন আল কুশায়রী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন তাঁর গৃহের কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন উসমান (রাঃ) গৃহের উপর হতে লোকেদের প্রতি তাকিয়ে বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলা এবং ইসলামের হক স্মরণ করিয়ে প্রশ্ন করছি- তোমরা কি এ ব্যাপারে অবহিত আছ যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরত করে যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন ’রূমার কূপ’ ছাড়া অন্য কোথাও লবণমুক্ত পানি পাওয়া যেত না?
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে রূমার কূপটি ক্রয় করে মুসলিমদের অবাধে ব্যবহারের জন্য ওয়াকফ করে দেবে, বিনিময়ে সে জান্নাত তদপেক্ষা উত্তম কূপ অর্জন করবে। তখন আমি উক্ত কূপটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অর্থে ক্রয় করি। অথচ আজ তোমরা আমাকে উক্ত কূপের পানি পান করা হতে বাধা দিচ্ছ। এমনকি আমি সমুদ্রের লোনা পানি পান করছি। লোকেরা বলল, হে আল্লাহ! হ্যাঁ, আমরা জানি।
এরপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ও ইসলামের হক স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করছি- তোমরা কি জান যে, যখন মসজিদে নাবাবী মুসল্লীদের তুলনায় সংকীর্ণ হয়ে পড়ল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, যে লোক অমুকের বংশধর হতে এ জমিনটি ক্রয় করে মসজিদখানি বৃদ্ধি করে দেবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তাকে তা হতে উত্তম ঘর জান্নাতে দান করবেন। তখন আমিই তা আমার ব্যক্তিগত অর্থ হতে ক্রয় করি, অথচ আজ তোমরা আমাকে সেই মসজিদে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করা হতেও বাধা দিচ্ছ। উত্তরে লোকেরা বলল, হে আল্লাহ! হ্যাঁ, আমরা জানি।
অতঃপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ও ইসলামের হক স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করছি- তোমরা কি অবগত আছ যে, ভীষণ কষ্টের অভিযানে (তাবুক যুদ্ধে) সৈন্যদেরকে আমি আমার নিজস্ব সম্পদ হতে যুদ্ধের সামান দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলাম? লোকেরা বলল, হে আল্লাহ! হ্যাঁ, আমরা জানি। তারপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ও ইসলামের হক স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করছি- তোমরা এ কথাটিও অবগত আছ কি, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কার অনতিদূরে ’সাবীর’ পাহাড়ের উপর দণ্ডায়মান ছিলেন, তাঁর সঙ্গে সেখানে আবূ বকর, ’উমার এবং আমিও ছিলাম। হঠাৎ পাহাড়টি নড়াচড়া করতে লাগল। এমনকি তা হতে কিছু পাথর নিচের দিকে পড়তে লাগল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাতে স্বীয় পা ঠুকে বললেন, স্থির হয়ে যাও, হে সাবার!
তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দুজন শহীদ রয়েছে। উত্তরে লোকেরা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহ! আমরা জানি। অতঃপর তিনি তিনবার বললেন, কাবার প্রভুর শপথ! নিশ্চয় আমি একজন শহীদ লোক। (তিরমিযী, নাসায়ী ও দারাকুত্বনী)

اَلْفصْلُ الثَّنِ (بَاب مَنَاقِب عُثْمَان)

وَعَن ثُمامة بن حَزْنٍ الْقشيرِي قَالَ: شَهِدْتُ الدَّارَ حِينَ أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ عُثْمَانُ فَقَالَ: أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ يُسْتَعْذَبُ غَيْرُ بِئْرِ رُومَةَ؟ فَقَالَ: «مَنْ يَشْتَرِي بِئْرَ رُومَةَ يَجْعَلُ دَلْوَهُ مَعَ دِلَاءِ الْمُسْلِمِينَ بِخَيْرٍ لَهُ مِنْهَا فِي الْجَنَّةِ؟» فَاشْتَرَيْتُهَا مِنْ صُلْبِ مَالِي وَأَنْتُمُ الْيَوْمَ تَمْنَعُونَنِي أَنْ أَشْرَبَ مِنْهَا حَتَّى أَشْرَبَ مِنْ مَاءِ الْبَحْرِ؟ قَالُوا: اللَّهُمَّ نعم. فَقَالَ: أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ الْمَسْجِدَ ضَاقَ بِأَهْلِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَشْتَرِي بُقْعَةَ آلِ فُلَانٍ فَيَزِيدُهَا فِي الْمَسْجِد بِخَير مِنْهَا فِي الْجَنَّةِ؟» . فَاشْتَرَيْتُهَا مِنْ صُلْبِ مَالِي فَأَنْتُمُ الْيَوْمَ تَمْنَعُونَنِي أَنْ أُصَلِّيَ فِيهَا رَكْعَتَيْنِ؟ فَقَالُوا: اللَّهُمَّ نعم. قَالَ: أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنِّي جَهَّزْتُ جَيْشَ الْعُسْرَةِ مِنْ مَالِي؟ قَالُوا: اللَّهُمَّ نَعَمْ. قَالَ: أَنْشُدُكُمُ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَلَى ثَبِيرِ مَكَّةَ وَمَعَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَأَنَا فَتَحَرَّكَ الْجَبَلُ حَتَّى تَسَاقَطَتْ حِجَارَتُهُ بِالْحَضِيضِ فَرَكَضَهُ بِرِجْلِهِ قَالَ: «اسْكُنْ ثَبِيرُ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيُّ وَصِدِّيقٌ وَشَهِيدَانِ» . قَالُوا: اللَّهُمَّ نَعَمْ. قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ شَهِدُوا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ أَنِّي شَهِيدٌ ثَلَاثًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيّ وَالدَّارَقُطْنِيّ حسن دون قولہ ’’ ثبیر ‘‘ ، رواہ الترمذی (3703 وقال : حسن) و النسائی (6 / 235 ۔ 236 ح 3638) و الدارقطنی (4 / 196)

ব্যাখ্যা: (شَهِدْتُ الدَّارَ) আমি ‘উসমান (রাঃ)-এর ঐ বাড়ীতে উপস্থিত ছিলাম যেখানে তাকে বন্দী করা হয়।
(بِئْرَ رُومَةَ) হলো একটি কুপের নাম যা একটি ছোট উপত্যকায় অবস্থিত ছিল। উসমান (রাঃ) কূপটি একশত হাজার দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করেন। ইমাম বাগাবী (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস উল্লেখ করেন, যখন মুহাজির সাহাবীগণ মদীনায় আগমন করলেন তখন তাদের পানি পানে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আর গিফার গোত্রের এক ব্যক্তির একটি ঝরনা ছিল যাকে রূমাহ্ বলা হত। তিনি তা হতে এক মশক পানি বিক্রি করতেন এক মুদ্দের বিনিময়ে।
নবী (সা.) তাকে বললেন, কূপটি আমার কাছে বিক্রি কর জান্নাতের একটি ঝরনার বিনিময়ে। ব্যক্তিটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমার ও আমার পরিবারের জন্য এটাই একমাত্র সম্বল। এ সংবাদ যখন ‘উসমান (রাঃ) এর কাছে পৌছল তখন তিনি ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে কূপটি ক্রয় করলেন। অতঃপর তিনি নবী (সা.) -এর কাছে এসে বললেন, আমার জন্য কি সেই সুযোগ করে দিবেন যে সুযোগ ঐ ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন উসমান (রাঃ) বললেন, আমি কূপটি মুসলিমদের জন্য দান করে দিলাম।
(أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَلَى ثَبِيرِ مَكَّةَ) মিসবাহুল লুগাতে (ثَبِيرِ) সম্পর্কে বলা হয়েছে, সাবীর হলো মক্কাহ্ ও মীনার মাঝে অবস্থিত একটি পাহাড় যা মীনা থেকে দেখা যায় এবং মীনা থেকে মক্কাহ অভিমুখী ব্যক্তির হাতের ডানে পড়ে।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে বলেন, সাবীর হলো মুযদালিফার একটি পাহাড়, মীনা অভিমুখী ব্যক্তির হাতের বামে। এটা হলো মক্কাহ্ ও মীনায় অবস্থিত সকল পাহাড়ের চেয়ে বড় ও উঁচু। আর সেখানে অবস্থিত সকল পাহাড়ের নাম সাবীর।
ইমাম ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সাবীর হলো মীনা অভিমুখী ব্যক্তির হাতের বামে।
ইবনু জামা'আহ্ (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে বলেন, মুযদালিফায় অবস্থিত বড় পাহাড় যা ‘আরাফাহ্ অভিমুখী ব্যক্তির হাতের ডানে অবস্থিত।
ইমাম বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সাবীর হলো মক্কার সবচেয়ে বড় পাহাড় যা হুযায়ল গোত্রের একটি ব্যক্তির নামে পরিচিতি লাভ করে, ব্যক্তিটির নাম ছিল সাবির এবং তাকে এখানে দাফন করা হয়।
ইমাম আল জাওহারী, সুহায়লী ও মুত্বাররাযী (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেন, সাবীর হলো মক্কার পাহাড়সমূহ হতে একটি পাহাড়। কেউ কেউ বলেন, হেরা পাহাড়ের সামনে অবস্থিত একটি পাহাড়।
উক্ত হাদীস দ্বারা উসমান (রাঃ) -এর মর্যাদা সুস্পষ্ট হয়। আরো স্পষ্ট হয় যে, একজন ব্যক্তি তার মর্যাদার কথা বলতে পারে অপবাদ দূর করা এবং উপকার হাসিলের জন্য, আর এটা অপছন্দ করা হয়েছে গর্ব অহংকারের ক্ষেত্রে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওযাযী ৯/৩৭১১)।