পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৮১-[১৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামাতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? অতঃপর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হাদীসের অবশিষ্ট অংশ থেকে আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) -এর বর্ণিত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ ) (كَشْفِ السَّاقِ) “আল্লাহ তা’আলা পায়ের নলা উন্মুক্ত করবেন তিনি এ কথাটি উল্লেখ করেননি। আর তিনি (সা.) বলেছেন: জাহান্নামের উপর পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। সে সময় রাসূলদের মধ্যে আমি এবং আমার উম্মতই সর্বপ্রথম তা অতিক্রম করব। সেদিন (পুল অতিক্রমকালে) রাসূলগণ ছাড়া আর কেউই কথা বলবে না।
আর রাসূলগণও শুধু বলতে থাকবেন, আল্ল-হুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম। অর্থাৎ হে আল্লাহ নিরাপদে রাখ। হে আল্লাহ নিরাপদে রাখ। আর জাহান্নামের মধ্যে সাদানের কাঁটার মতো আংটা থাকবে, সে সমস্ত আংটাগুলোর বিশালত্ব সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই জানেন। ঐ আংটাগুলো মানুষদেরকে তাদের ’আমল অনুপাতে আঁকড়ে ধরবে। অতএব কিছু সংখ্যক লোক নিজ ’আমলের কারণে ধ্বংস হবে এবং কিছু লোক টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। আবার পরে মুক্তি পাবে।
অবশেষে যখন আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের বিচার-ফায়সালা শেষ করবেন এবং (নিজের দয়া ও অনুগ্রহে) কিছুসংখ্যক ঐ সকল জাহান্নামবাসীকে মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা করবেন, যারা এ সাক্ষ্য দিয়েছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আর কোন মা’বুদ নেই’, তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাদের)-কে আদেশ করবেন যে, যারা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। তখন তারা ঐ সকল লোক যাদের কপালে সিজদার চিহ্ন রয়েছে তা দেখে সনাক্ত করবেন এবং তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। আর আল্লাহ তা’আলা সিজদার চিহ্নসমূহ পুড়িয়ে দগ্ধ করা আগুনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত প্রতিটি আদম সন্তানের সিজদার স্থানটি ছাড়া তার সারা দেহ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে, তারা একেবারে কালো কয়লা হয়ে গেছে। তখন তাদের ওপর সঞ্জীবনী পানি ঢেলে দেয়া হবে। এর ফলে তারা এমনভাবে তরতাজা ও সজীব হয়ে উঠবে, যেমন কোন বীজ প্রবহমান পানির ধারে উদ্দাত হয়।
সে সময় জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থেকে সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশকারী এক লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে থেকে যাবে, যার মুখ হবে জাহান্নামের দিকে। সে বলবে, হে আমার প্রভু! জাহান্নামের দিক হতে আমার মুখখানা ফিরিয়ে দিন। কেননা জাহান্নামের গরম বাতাস আমাকে অত্যধিক কষ্ট দিচ্ছে এবং অগ্নিশিখা আমাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তবে কি যা তুমি চাচ্ছ, যদি তোমাকে আমি দান করি তাহলে আরো অন্য কিছুও তো চাইতে পার? তখন সে বলবে, না, তোমার সম্মানের শপথ করে বলছি, আমি আর কিছুই চাইব না। তখন সে আল্লাহ তা’আলাকে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি প্রদান করবে। তখন আল্লাহ তা’আলা তার মুখকে জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দেবেন। যখন সে জান্নাতের দিকে মুখ করবে এবং তার চাকচিক্য ও শ্যামল দৃশ্য দেখবে আল্লাহ যতক্ষণ তাকে চুপ রাখতে চাইবেন ততক্ষণ সে চুপ করে থাকবে।
অতঃপর বলবে, হে আমার প্রভু! আমাকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিন। এ কথা শুনে মহামহিম বারাকাতময় আল্লাহ বলবেন, তুমি কি ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তুমি একবার যা চেয়েছ তা ছাড়া কখনো আর কিছুই চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে তোমার সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বাধিক হতভাগা বানিয়ো না। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আচ্ছা, তোমাকে যদি এ সকল কিছু দেয়া হয়, তাহলে আবার অন্য আর কিছু চাবে না তো? সে বলবে, না, তোমার সম্মানের শপথ! এটা ছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। তারপর সে আল্লাহ তা’আলাকে এই মর্মে ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি প্রদান করবে যা আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করবেন। তখন তাকে জান্নাতের দরজার কাছে এগিয়ে দেয়া হবে। যখন সে জান্নাতের দরজার কাছে পৌছবে, তখন তার মধ্যকার আরাম আয়েশ ও আনন্দের প্রাচুর্য দেখতে পাবে এবং আল্লাহ তা’আলা যতক্ষণ চুপ রাখতে চাবেন ততক্ষণ সে চুপ থাকবে। অতঃপর সে বলবে, হে আমার প্রভু! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। তখন মহামহিম বারাকাতময় আল্লাহ বলবেন, আফসোস হে আদম সন্তান! তুমি কি মারাত্মক ওয়াদা ভঙ্গকারী! তুমি কি এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, আমি যা কিছু দেব তা ছাড়া অন্য কিছুই চাবে না? তখন সে বলবে, হে আমার প্রভু! আমাকে তোমার সৃষ্টির মাঝে সকলের চেয়ে দুর্ভাগা করো না। এই বলে সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকবে। এমনকি তার এ মিনতি দেখে আল্লাহ তা’আলা হেসে উঠবেন।
যখন হেসে ফেলবেন তখন তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বলবেন, এখন চাও (তোমরা যা কিছু চাওয়ার আছে) তখন সে আল্লাহ তা’আলার কাছে অন্তর খুলে চাবে। এমনকি যখন তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, এটা চাও, ওটা চাও। এমনকি সেই আকাঙ্ক্ষাও যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এ সকল কিছুই তোমাকে দেয়া হলো এবং সাথে সাথে আরো অনুরূপ পরিমাণ দেয়া হলো।
আর আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর রিওয়ায়াতে আছে- আল্লাহ তা’আলা বলবেন, যাও, তোমাকে এ সমস্ত কিছু তো দিলামই এবং এর দশগুণ পরিমাণও এর সাথে দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَن أبي هُرَيْرَة أَنَّ النَّاسَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ فَذَكَرَ مَعْنَى حَدِيثِ أَبِي سَعِيدٍ غَيْرَ كَشْفِ السَّاقِ وَقَالَ: يُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ جَهَنَّمَ فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يَجُوزُ مِنَ الرُّسُلِ بِأُمَّتِهِ وَلَا يَتَكَلَّمُ يَوْمَئِذٍ الرُّسُلُ وَكَلَامُ الرُّسُلِ يَوْمَئِذٍ: اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ. وَفِي جهنمَ كلاليب مثلُ شوك السعدان وَلَا يَعْلَمُ قَدْرَ عِظَمِهَا إِلَّا اللَّهُ تَخْطَفُ النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ فَمِنْهُمْ مَنْ يُوبَقُ بِعَمَلِهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُخَرْدَلُ ثُمَّ يَنْجُو حَتَّى إِذَا فَرَغَ اللَّهُ مِنَ الْقَضَاءِ بَيْنَ عِبَادِهِ وَأَرَادَ أَنْ يُخْرِجَ مِنَ النَّارِ مَنْ أَرَادَ أَنْ يُخْرِجَهُ مِمَّنْ كَانَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ أَمر الْمَلَائِكَة أَن يخرجُوا من يَعْبُدُ اللَّهَ فَيُخْرِجُونَهُمْ وَيَعْرِفُونَهُمْ بِآثَارِ السُّجُودِ وَحَرَّمَ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى النَّارِ أَنْ تَأْكُلَ أَثَرَ السُّجُودِ فَكُلُّ ابْنِ آدَمَ تَأْكُلُهُ النَّارُ إِلَّا أَثَرَ السُّجُودِ فَيَخْرُجُونَ مِنَ النَّارِ قَدِ امْتَحَشُوا فَيُصَبُّ عَلَيْهِمْ مَاءُ الْحَيَاةِ فَيَنْبُتُونَ كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ وَيَبْقَى رَجُلٌ بَيْنَ الجنَّةِ والنارِ وَهُوَ آخرُ أهلِ النارِ دُخولاً الْجَنَّةَ مُقْبِلٌ بِوَجْهِهِ قِبَلَ النَّارِ فَيَقُولُ: يَا رب اصرف وَجْهي عَن النَّار فَإِنَّهُ قد قَشَبَنِي رِيحُهَا وَأَحْرَقَنِي ذَكَاؤُهَا. فَيَقُولُ: هَلْ عَسَيْتَ إِنْ أَفْعَلْ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَ غَيْرَ ذَلِكَ؟ فَيَقُول: وَلَا وعزَّتكَ فيُعطي اللَّهَ مَا شاءَ اللَّهُ مِنْ عَهْدٍ وَمِيثَاقٍ فَيَصْرِفُ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النارِ فإِذا أقبلَ بِهِ على الجنةِ وَرَأى بَهْجَتَهَا سَكَتَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْكُتَ ثُمَّ قَالَ: يَا رَبِّ قَدِّمْنِي عِنْدَ بَابِ الجنةِ فَيَقُول الله تبَارك وَتَعَالَى: الْيَسْ أَعْطَيْتَ الْعُهُودَ وَالْمِيثَاقَ أَنْ لَا تَسْأَلَ غَيْرَ الَّذِي كُنْتَ سَأَلْتَ. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ لَا أَكُونُ أَشْقَى خَلْقِكَ. فَيَقُولُ: فَمَا عَسَيْتَ إِنْ أُعْطِيتُ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَ غَيْرَهُ. فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَ ذَلِكَ فَيُعْطِي رَبَّهُ مَا شَاءَ مِنْ عَهْدٍ وَمِيثَاقٍ فَيُقَدِّمُهُ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ فَإِذَا بَلَغَ بَابَهَا فَرَأَى زَهْرَتَهَا وَمَا فِيهَا مِنَ النَّضْرَةِ وَالسُّرُورِ فَسَكَتَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْكُتَ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ أَدْخِلْنِي الْجَنَّةَ فَيَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْدَرَكَ أَلَيْسَ قَدْ أَعْطَيْتَ الْعُهُودَ وَالْمِيثَاقَ أَنْ لَا تَسْأَلَ غَيْرَ الَّذِي أُعْطِيتَ. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ لَا تَجْعَلْنِي أَشْقَى خَلْقِكَ فَلَا يَزَالُ يَدْعُو حَتَّى يَضْحَكَ اللَّهُ مِنْهُ فَإِذَا ضَحِكَ أَذِنَ لَهُ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ. فَيَقُولُ: تَمَنَّ فَيَتَمَنَّى حَتَّى إِذَا انْقَطَعَتْ أُمْنِيَّتُهُ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: تَمَنَّ مِنْ كَذَا وَكَذَا أَقْبَلَ يُذَكِّرُهُ رَبُّهُ حَتَّى إِذَا انْتَهَتْ بِهِ الْأَمَانِيُّ قَالَ اللَّهُ: لَكَ ذَلِكَ ومثلُه معَه وَفِي رِوَايَةِ أَبِي سَعِيدٍ: قَالَ اللَّهُ: لَكَ ذلكَ وعشرةُ أمثالِه . مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (806) و مسلم (299 / 182)، (451) ۔ (متفّق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ইতোপূর্বে ৫৫৭৯ নং হাদীসে যা অতিবাহিত হয়েছে এখানেও তাই বিবৃত হয়েছে। জাহান্নামের উপর পুলসিরাত ব্রীজ স্থাপন করা হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যে তার উম্মতসহ ঐ ব্রীজ অতিক্রমকারী হব। অর্থাৎ আমার আগে কোন নবীই তার উম্মতকে নিয়ে ঐ পুলসিরাত পাড়ি দিতে পারবে না। সেই স্থানে রাসূলগণ ছাড়া কেউ আল্লাহর সাথে কথাও বলতে পারবে না। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (يِوْمَئِذٍ) দ্বারা পুলসিরাত পার হওয়ার সময় উদ্দেশ্য, সেখানে মানুষের কথা বলার জায়গা নয়। মহান আল্লাহ বলেন, (هٰذَا یَوۡمُ لَا یَنۡطِقُوۡنَ) “এটা সেদিন হবে যেদিন তারা কথা বলতেও পারবে না।” (সূরা আল মুরসালাত ৭৭: ৩৫)
কিন্তু পাশেই অন্যান্য অবস্থানস্থলে লোকেরা কথা বলবে। সেদিন পুলসিরাতের ঘাটে কথা না বলার বিষয়টি তাগিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। রাসূলগণ সেখানে শুধু বলতে থাকবেন, “আল্ল-হুম্মা সাল্লিম সাল্লিম”, “হে আল্লাহ! শান্তি দাও, শান্তি দাও।”
জাহান্নামের মধ্যে সাদানের কাঁটার মতো কাটাদার বিরাট বিরাট আংটা থাকবে সেগুলো জাহান্নামের চতুর্দিকে থাকবে। অথবা সেগুলো পুলসিরাতের সাথে ঝুলানো থাকবে, গুনাহগারেরা পুলসিরাত পার হতে কেটে কেটে জাহান্নামের ঐ কাঁটার সাথে আটকে যাবে।
(كَلَالِيْبُ) শব্দটি গায়রি মুনসরিফ, এটা প্রান্তিক জুমু'আহ্, অর্থ চারদিকে লোহার বাকা আলযুক্ত মাথা বের করে তৈরি করা বস্তু। তা দ্বারা মানুষকে আটকানো হবে অথবা গুনাহগারদের মাংসের সাথে আটকিয়ে (জাহান্নামের) তন্দুরে ঝুলিয়ে রাখা হবে।
(شَوْكِ السَّعْدَانِ) “সা'দান বৃক্ষের কাটা” আরবের প্রসিদ্ধ সা'দান বৃক্ষ, যার রয়েছে বড় বড় কাঁটা। এটা গঠনের সাদৃশ্য মাত্র, আকারের নয়, তার আকার বা প্রকাণ্ডতা যে কত বড় তা আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। মানুষকে তার খারাপ আমল অনুপাতে ঐ কাঁটা আটকিয়ে ধরবে। কেউ একেবারে আটকে থাকবে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে। কেউ আবার কেটে টুকরা টুকরা বা রেযা রেযা হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে (অবশ্য অনেকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে)।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বিচার-ফায়সালা শেষ করে একত্ববাদের সাক্ষ্য দানকারী হওয়া সত্ত্বেও খারাপ আমলের কারণে যারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করার ইচ্ছা করবেন। আর মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) নির্দেশ করবেন যে, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করেছে তাদের বের কর। এখানে এক আল্লাহর ইবাদত বলতে তার তাওহীদ স্বীকার করা এবং তাওহীদ চেনা অথবা তাওহীদের দাবী পূরণে যে ইবাদত সঠিক সেই ‘ইবাদত করা। (অনেক মানুষ আছেন যারা অন্তরে তাওহীদের বিশ্বাস ও দাবী সঠিক থাকলেও ‘ইবাদতে শির্ক করে ফেলে, তারা এ সুযোগের অন্তর্ভুক্ত হবে না) মালায়িকাহ্ সিজদার চিহ্ন দেখে দেখে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করবেন। যেমন- মহান আল্লাহর বাণী:
(سِیۡمَاهُمۡ فِیۡ وُجُوۡهِهِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ) “তাদের চিহ্নগুলো তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার কারণে পরিস্ফুট হয়ে থাকবে।” (সূরা আল ফাতহ ৪৮: ২৯)।
আল্লাহ তা'আলা সিজদার স্থানকে পোড়ানো জাহান্নামের আগুনের উপর হারাম করে দিয়েছেন। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসের দ্বারা এ কথা স্পষ্ট যে, জাহান্নামের আগুন সিজদার সাতটি অঙ্গের কোন কিছু ভক্ষণ করতে পারবে না। সে সাতটি অঙ্গ হলো: (নাকসহ) কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু ও দুই পা।
কাযী “ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সিজদার চিহ্ন বলতে শুধু কপালকেই খাস করা হয়েছে। মুল্লা আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, প্রথম মতটিই অধিক যুক্তিযুক্ত। অবশ্য দ্বিতীয় মতটির সপক্ষে হাদীসের প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে।
গুনাহগার সালাত আদায়কারীদের সিজদার চিহ্ন দেখে জাহান্নাম থেকে তুলে তুলে আবে হায়াতে গোসল করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পরও এক ব্যক্তি জান্নাত এবং জাহান্নামের মাঝখানে আ'রাফ নামক স্থানে থাকবে। এ ব্যক্তি হবে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তি এবং সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশকারী। এ ব্যক্তির মুখ জাহান্নামের দিকে রাখা হবে। তখন সে মহামহিম দয়াময় আল্লাহর কাছে পর্যায়ক্রমে আবেদন করে এবং আবেদন পূর্ণ হলে আর আল্লাহর কাছে কিছু চাইবে না বলে পাকা ওয়া'দা দিবে, কিন্তু ধীরে ধীরে জান্নাতের দরজায় পৌছে তার নিআমাতরাজি দর্শন করে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না, অতঃপর জান্নাতে প্রবেশের আবেদন জানাবে। এ বান্দার বার বার ওয়াদা ভঙ্গ এবং জান্নাতে প্রবেশের মিনতি দেখে আল্লাহ তা'আলা হেসে দিবেন এবং জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন।
জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তা'আলা তাকে বলবেন, তুমি তোমার মনের চাহিদা মতো চাও, সে চাইতে থাকবে, এমনকি তার আকাক্ষা চাহিদা শেষ হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তা'আলা তাকে বিভিন্ন নি'আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, এটা চাও, ওটা চাও। এটাও যখন শেষ হয়ে যাবে তখন আল্লাহ বলবেন, এসবগুলো তোমার অনুরূপ আরো সমপরিমাণ দেয়া হলো।
আবূ সা'ঈদ (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে, তোমার জন্য তোমার চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পরিমাণ এবং অনুরূপ আরো দশগুণ দেয়া হলো। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, ৫০৪ পৃ., শারহুন নাবাবী ৩য় খণ্ড, হা, ২৯৯)