হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৫৫৩৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৩-[২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন দুনিয়ার এই জমিনটি হবে একটি রুটির মতো, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাকে হাতের মাঝে নিয়ে এমনভাবে উলট-পালট করবেন যেমন তোমাদের কেউ সফর অবস্থায় তাড়াতাড়ি করে এই হাতে সেই হাতে নিয়ে রুটি তৈরি করে এবং এই রুটি দিয়ে জান্নাতবাসীদের আপ্যায়ন করা হবে। নবী (সা.) -এর আলোচনা এ পর্যন্ত পৌছলে তখন জনৈক ইয়াহুদী এসে বলল, হে আবূল কাসিম ! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে কল্যাণ দান করুন। আমি কি আপনাকে অবগত করব না যে, (তাওরাতে উল্লেখ আছে,) কিয়ামতের দিন জান্নাতবাসীদেরকে কি বস্তু দিয়ে সর্বপ্রথম আপ্যায়ন করা হবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, বল! সে বলল, এ জমিন হবে একটি রুটি, যেরূপ নবী (সা.) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ইয়াহূদীর কথা শুনে নবী (সা.) আমাদের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হাসলেন যে, তাঁর চোয়ালের দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়ল। অতঃপর ইয়াহুদী বলল, আমি কি আপনাকে জানাব না যে, সে খাদ্যের তরকারি কি হবে? তা হবে বালাম ও নূন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, এটা আবার কী? সে বলল, ষাঁড় ও মাছ। সে দু’টির কলিজার উপরের অতিরিক্ত যে মাংস তা সত্তর হাজার লোকে খাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَكُونُ الْأَرْضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُبْزَةً وَاحِدَةً يَتَكَفَّؤُهَا الْجَبَّارُ بِيَدِهِ كَمَا يَتَكَفَّأُ أَحَدُكُمْ خُبْزَتَهُ فِي السّفر نُزُلاً لِأَهْلِ الْجَنَّةِ» . فَأَتَى رَجُلٌ مِنَ الْيَهُودِ. فَقَالَ: بَارَكَ الرَّحْمَنُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ أَلَا أُخبرُك بِنُزُلِ أهل الجنةِ يومَ القيامةِ؟ قَالَ: «بَلَى» . قَالَ: تَكُونُ الْأَرْضُ خُبْزَةً وَاحِدَةً كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَنَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا ثُمَّ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ ثُمَّ قَالَ: أَلَا أُخْبِرُكَ بِأَدَامِهِمْ؟ بَالَامٌ وَالنُّونُ. قَالُوا: وَمَا هَذَا؟ قَالَ: ثَوْرٌ وَنُونٌ يَأْكُلُ مِنْ زَائِدَةِ كَبِدِهِمَا سَبْعُونَ ألفا. مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (6520) و مسلم (30 / 2792)، (7057) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (خُبْزَةً) অর্থ রুটি আর তা এমন আটা যা চুলায় আগুনে জ্বালানোর পর তার গর্তে রাখা হয়। সে গর্তকে মানুষ গরম ছাই বা খাক বা মাটি বলে।
(يَتَكَفَّؤُهَا)-এর অর্থ নোয়ানো, ঝুকানো। এ থেকে ব্যবহৃর হয় (كَفَأْتُ الْإِنَاءَ) (যখন তুমি তাকে উল্টাবে)।
(خُبْزَتَهُ فِي السّفر) খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এমন রুটি যা মুসাফিরের জন্য তৈরি করা হয়। কারণ এটাকে বিছানো হয় না যেমন পাতলা রুটিকে বিছানো হয়। মূলত হাতের উপরে উলটপালট করা হয় যাতে সেটা সমান হয়।
(نُزُلاً لِأَهْلِ الْجَنَّةِ) তা হলো এমন জিনিস যা আহলে জান্নাতদের মেহমানদারী হিসেবে তৈরি করা হবে। বলা হয়, (أصلح القوم نزلهم) অর্থাৎ খাবারের পূর্বে মেহমানের জন্য তাড়াতাড়ি যা পেশ করা হয়। হাদীসের জমিনের রুটির সাদৃশ্য তার দুটি অর্থ হতে পারে (এক) সেদিন জমিনের আকৃতি বর্ণনা করা। অন্যটি হলো রুটির বর্ণনা সম্পর্কে যা জান্নাতীদের জন্য আতিথেয়তা হবে। অথবা নতুনভাবে এবং বিরাট পরিমাণের বর্ণনা সম্পর্কে।
হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: দুনিয়ার জমিন আগুনে পরিবর্তিত হওয়া হাক্বীকৃী বা আসল অর্থে ধরতে হবে এবং অবস্থান স্থলের ব্যক্তিদের খাদ্যের জন্য রুটিতে পরিবর্তিত হওয়াকে রূপক অর্থে গণ্য করতে হবে।
(بَالَامٌ) শব্দটির ব্যাপারে মতভেদ আছে। শব্দটি হাদীসের বর্ণনায় হিব্রু ভাষায় রয়ে গেছে। যে কারণে সাহাবীগণ শব্দটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। আল্লামাহ্ নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে বলেন, এটা হিব্রু ভাষা যার অর্থ বলদ।
(يَأْكُلُ مِنْ زَائِدَةِ كَبِدِهِمَا سَبْعُونَ ألفا) কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অতিরিক্ত অংশ বলতে কলিজার সাথে যুক্ত আলাদা অংশ বুঝানো হয়েছে যা উৎকৃষ্ট। সে কারণে তা খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে সত্তর হাজার জনকে। আর তারাই বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদেরকে উৎকৃষ্টমানের খাদ্য সামগ্রী দ্বারা আপ্যায়ন করা হবে। আর সত্তর হাজার সংখ্যা দ্বারা অধিক সংখ্যককে বুঝানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। (ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা, ৬৫২০-২১)।
জমিন খাদ্যে রূপান্তরিত হওয়া বিবেকবিরোধী নয়। এখন জমিনের মাটি থেকে নতুন নতুন চমৎকার সাদযুক্ত ফলমূল উৎপাদন হচ্ছে। আবার আল্লাহ তা'আলা যদি জমিনকে দুধে ময়দায় রূপান্তর করেন, এটা আল্লাহর নিকটে দূরের ব্যাপার নয়। যে দলটি জমিনী রুটিকে খাবে তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, ৩৮১ পৃ.)