পরিচ্ছেদঃ ১২. স্বপ্নে মহান আল্লাহ কে দেখা সম্পর্কে
২১৮৮. আব্দুর রহমান ইবনু আয়িশ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি: “আমি আমার রবকে সর্বোত্তম সূরতে (স্বপ্নে) দেখেছি।” তিনি (মহান আল্লাহ) বললেন: ’মালাউল আ’লা’ (সর্বোচ্চ পরিষদ) কী নিয়ে বিতর্ক করছে?’ তখন আমি বললাম, “হে রব! আপনিই ভাল জানেন।”তিনি বলেন: “অত:পর তিনি তাঁর হাতের তালু[1] আমার উভয় কাঁধের উপর রাখলেন; এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের শীতলতা অনূভব করলাম। এভাবে আমি আসমান ও যমীনসমূহে যা রয়েছে তা জানতে পারলাম। একথা বলে তিনি তিলাওয়াত করলেন: “এভাবে আমরা ইবরহীমকে আসমান ও যমিনসমূহের মুলুকিয়াত বা রাজত্ব দর্শন করালাম, যাতে সে দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।[2] সূরা আন’আম ৫৭।”
[1] এ হাদীসটি সিফাত বা আল্লাহর গুণাবলী সংক্রান্ত হাদীসের অন্তর্ভুক্ত, ফলে আমাদের জন্য এর তাশবীহ ও তামছীল ও তা’বীল (সাদৃশ্য ও উপমা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ) ছাড়াই এর বাহ্যিক অর্থের উপর সামগ্রিকভাবে ঈমান আনা ওয়াজিব। আর একে প্রত্যাখ্যান করা কিংবা ব্যাখ্যা করা ঠিক নয়।
((এরপর মুহাক্বিক্ব এবং সাহাবী ও তাবি’ঈগণের এবং সালাফদের মধ্যে বিশেষভাবে ইমাম আহমাদ, ইমাম জুওয়াইনী ইমামুল হারামাঈন-এর মতামত উল্লেখ করেছেন।–অনুবাদক))
[2] তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ, যদি আব্দুর রহমান ইবনু আয়িশ এর সাহাবী হওয়া সাব্যস্ত হয়।
তাখরীজ: আবী আসিম, আস সুন্নাহ নং ৩৮৮, ৪৬৭, আহাদ ওয়াল মাছানী নং ২৫৮৫; ইবনুল জাওযী, আল ইলালুল্ মুতানাহিয়্যাহ ১/৩১ নং ১১; আজুরী, আশ শরীয়াহ পৃ: ৪৩৩; বাইহাকী, আসমা ওয়াস সিফাত পৃ: ২৯৮; হাকিম ১/৫২০; তাবারী, তাফসীর ৭/২৪৭; আহমাদ ১/৩৬৮, ৪/৬৬, ৫/৩৭৮; ইবনু খুযাইমা, আত তাওহীদ নং ৫৫; তিরমিযী, তাফসীর ৩২৩১, ৩২৩২, ৩২৩৩ একটি কে তিরযিমী হাসান সহীহ বলেছেন; তিনি আরও বলেন, ‘আমি এ হাদীস সম্পর্কে মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল (বুখারী) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেন, এ হাদীস হাসান সহীহ’।; আবূ ইয়ালা, আল মুসনাদ নং ২৬০৮; তাবারাণী, কাবীর ২০/১০৯ নং ২১৬; হাইছাম ইবনু কুলাইব, আল মুসনাদ নং ১৩৪৪; ইবনু আদী, আল কামিল ৬/২৩৪৪;
দারু কুতনী আল ইলাল ৬/৫৭ এ বলেন, এ হাদীসের সনদের বিভিন্নতা আলোচনা করে বলেন, এ ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই, এর প্রত্যেকটি মুযতারিব (বিক্ষিপ্ত)।’
বাইহাকী আসমা ওয়াস সিফাত পৃ: ৩০১ এ বলেন, এ হাদীস সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।’
এ ব্যাপারে সনদের দিক দিয়ে সর্বার্ধিক বিশুদ্ধ হলো মুয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে, ১. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানী: “এরপর আমার নিকট সকল বিষয় উদ্ভাষিত হয়ে উঠল এবং আমি জেনে নিলাম।”
২. “এরপর আমার নিকট সকল বিষয় উদ্ভাষিত হয়ে উঠল এবং আমি তা জেনে নিলাম।”
৩. “এরপর আমার নিকট আসমান যমীনের সকল বিষয় উদ্ভাষিত হয়ে উঠল।”
৪. “এরপর আমি আসমান যমীনের সকল বিষয় জেনে নিলাম।”
৫. “এরপর আমি পুর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার সকল বিষয় জেনে নিলাম।”
(অনুবাদকের টীকা: সম্মানিত পাঠক! এখানে মহামতি মুহাক্বিক্ব লম্বা টীকা দিয়েছেন, যার বিষয় বস্তু হলো, কিছু লোক এ হাদীস মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘বাশারিয়াত’ তথা ‘মানুষ’-এর শ্রেণি থেকে বের করে দেয়। কেননা, তাদের নিকট ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব ও পরের সকল জ্ঞান পরিবেষ্টন করে আছেন।’ যা ছিল তা তিনি জানেন, যা হবে তাও তিনি জানেন, যা অচিরেই হবে তা তিনি জানেন, ফলে তিনি লাওহ ও কলমের জ্ঞানকেও পরিবেষ্টন করে আছেন।’
এ সকল আকীদা পোষণকারীদের খণ্ডণে মুহাক্বিক্ব ইমাম বুসীরী (রহঃ) এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। এরপর আল কুরআন কারীমের অনেক গুলি আয়াত উদ্ধৃত করেছেন, যেখানে মহান আল্লাহ সকল রাসূলকে মানুষ হিসেবে প্রেরণ করার কথা উল্লেখ করেছন। এছাড়া আরও অনেক আয়াত উল্লেখ করেছেন যেখানে ইলমুল গায়িব মহান আল্লাহ নিজের জন্য খাস করেছেন, আসমান ও যমীনের আর কেউ জানেনা, বলে উল্লেখ করেছেন। এসকল আয়াতের মাধ্যমে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মানবত্ব এবং সকল জ্ঞান পরিবেষ্টন করে থাকার অসম্ভবতা প্রমাণ করেছেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে দেখুন, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লার ইসলামী আকীদা পৃ: ১৯৬-২০৭। এছাড়াও দেখুন, শাইখ ইহসান ইলাহী যহীর রাহিমাহুল্লাহ রচিত আমাদের কর্তৃক অনুদিত ‘আল বেরেলভীয়্যাহ’ বা বেরেলভী মতবাদ’, পৃ; ১৪৩-২০৫।)
আর এ হাদীসে যে জ্ঞান দানের কথা বলা হয়েছে: তা কী সম্পর্কিত, এ হাদীসেই তার জবাব রয়েছে, যাতে মহান আল্লাহ’র প্রশ্ন: মালাউল আ’লা কি নিয়ে বিতর্ক করছে? তিনবার এর উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবারই বলেছেন: ‘আমি জানিনা।’ এরপর যখন মহান আল্লাহ তাঁর হাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁধের মাঝে রাখলেন, তখন তিনি কী জানতে পারলেন? তা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার প্রশ্নের উত্তরে বললেন: ‘পাপের কাফ্ফারা, .....।’
ফলে এর মাধ্যমে সকল জ্ঞান অবগত হওয়ার আকীদা বাতিল। তবে নাবীদের স্বপ্ন যেহেতু ওহী তাই এ ওহী বর্ণনা করতে হবে।
بَاب فِي رُؤْيَةِ الرَّبِّ تَعَالَى فِي النَّوْمِ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُبَارَكِ حَدَّثَنِي الْوَلِيدُ حَدَّثَنِي ابْنُ جَابِرٍ عَنْ خَالِدِ بْنِ اللَّجْلَاجِ وَسَأَلَهُ مَكْحُولٌ أَنْ يُحَدِّثَهُ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَائِشٍ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ رَأَيْتُ رَبِّي فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ قَالَ فِيمَ يَخْتَصِمُ الْمَلَأُ الْأَعْلَى فَقُلْتُ أَنْتَ أَعْلَمُ يَا رَبِّ قَالَ فَوَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ فَوَجَدْتُ بَرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَعَلِمْتُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَتَلَا وَكَذَلِكَ نُرِي إِبْرَاهِيمَ مَلَكُوتَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلِيَكُونَ مِنْ الْمُوقِنِينَ