পরিচ্ছেদঃ ২০. প্রথম অনুচ্ছেদ - রাগ ও অহংকার
৫১০৬-[৩] হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে জান্নাতবাসী লোকেদের কথা বলে দেব কি? তারা হলেন বৃদ্ধ ও দুর্বল লোক। তারা যদি আল্লাহর দরবারে কসম করে, তখন আল্লাহ তাদের সে শপথকে সত্যে পরিণত করে দেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসী লোকেদের কথা বলে দেব? তারা হলো, মিথ্যা ও তুচ্ছ বস্তু নিয়ে খুব বিবাদকারী, শান্ত মস্তিষ্কে ধন-সম্পদ সঞ্চয়কারী ও অহংকারী। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
মুসলিম-এর এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক সম্পদ সঞ্চয়কারী কৃপণ, জারজ ও অহংকারী।
بَابُ الْغَضَبِ وَالْكِبَرِ
وَعَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٌ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ؟ كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ. أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ» . مُتَّفق عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَة مُسلم: «كل جواظ زنيم متكبر»
ব্যাখ্যাঃ (كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ) উক্ত হাদীসাংশে ضَعِيفٍ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সেই ব্যক্তি যে নিজেকে বিনয়ের চাদরে আবৃত করে নম্র হয়ে চলে। বিনয়ীর বেশে চলাফেরার কারণে তার পারিপার্শ্বিক সকল অবস্থাদি দুর্বল বা হালকা মনে হয়। এ অবস্থায় নম্র হয়ে চলার কারণে তাকে বহু স্থানে লাঞ্ছিতও হতে হয়।
আবার কেউ বলেছেন, ضَعِيفٍ দ্বারা নিরহংকার ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে কোন মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করে না।
(مُتَضَعِّفٍ) ঐ লোককে বলা হয় যে মানুষের সাথে স্বাভাবিক অবস্থায় অত্যন্ত বিনয়ী মহানুভব আর শত্রুর সামনে তেজী ও সাহসী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেনঃ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
‘‘...মু’মিনরা শত্রুদের ওপর অত্যন্ত কঠোর আর তারা পরস্পর দয়ালু...।’’ (সূরাহ্ আল ফাত্হ ৪৮ : ২৯)
অনুরূপভাবে আল্লাহ বলেনঃ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ
‘‘মু’মিনরা একে অন্যের ওপর বিনয়ী আর কাফিরদের ওপর অত্যন্ত কঠোর।’’ (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৫৪)
অতএব এখানে ঐ ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যে শক্তি ও সাহস থাকার পরও মানুষের সাথে সদয় এবং বিনয়ী। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে উদ্দেশ্য ঐ ব্যক্তি যাকে লোকেরা দুর্বলভাবে এবং নিচু চোখে দেখে। সামাজিক জীবনে আর্থিক বা শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে তাকে নিচু শ্রেণীর মানুষ হিসেবে গণ্য করে।
(عُتُلٍّ) উক্ত শব্দের ব্যাখ্যায় ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। ইমাম ফাররা (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে (عُتُلٍّ) অর্থ হলো অত্যন্ত ঝগড়াটে লোক।
আবূ ‘উবায়দাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্যধিক কঠোর প্রকৃতির লোক; এখানে কাফির উদ্দেশ্য। ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ দয়ামায়াহীন ব্যক্তি। ইমাম ‘আবদুর রাযযাক (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে অশ্লীল কাজে অভ্যস্ত নোংরা ব্যক্তি। ইমাম দাউদিয়্যু (الدَّاوُدِيُّ) (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বিশাল আকৃতির পেট ও ঘাড়ওয়ালা লোক।
ইমাম হারবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, যে ব্যক্তি নিজে পাপ কাজ করে এবং অপরকে সৎকাজ করতে বাধা দেয়। কারো মতে, পেটুক প্রকৃতির লোক। আবার কারো মতে নাসীহাত শুনার পরও তা মানতে যার অন্তর কঠোর বা বাঁকা।
(جَوَّاظٍ) খত্ত্বাবীর মতে, جَوَّاظٍ বলা হয় সেই ব্যক্তিকে যার দৈহিক আকৃতি ও শক্তি অন্যের তুলনায় বেশী হওয়ার কারণে অহংকার করে চলে। ইবনু ফারিস (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, অধিক ভক্ষণকারী পেটুক লোক। কারো মতে, এমন লোক যার কখনো অসুখ হয় না। কেউ বলেন, ঐ ব্যক্তিকে جَوَّاظٍ বলা হয় যে নিজেকে এমন সব বস্তু বা গুণাবলীর অধিকারী হিসেবে গর্ব করে যা তার কাছে আদৌ নেই।
(لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهٗ) ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এখানে এর অর্থ হলো সে যদি (আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায়) আল্লাহর ওপর শপথ বা কসম করে থাকে তবে আল্লাহ তা অবশ্যই পূরণ করেন। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-ও একই অর্থ নিয়েছেন।
(ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯১৮; শারহুন নাবাবী ১৭শ খন্ড, হাঃ ২৮৫৩/৪৬; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)