পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩২-[২১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, মানুষকে কোন্ জিনিস সবচেয়ে বেশি জান্নাতের প্রবেশ করাবে? সেটা হলো, আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জানো, মানুষকে কোন্ জিনিস সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? সেটা হলো, দু’টো গহ্বর; একটি মুখ, অপরটি জননেন্দ্রিয়। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وعنن أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتُدْرُونَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ؟ تَقْوَى اللَّهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ. أَتُدْرُونَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ؟ الْأَجْوَفَانِ: الْفَمُ وَالْفَرْجُ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যাঃ কোন্ জিনিস মানুষকে অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? এর অর্থ হলো কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষকে সফলকামী মানুষের সাথে জান্নাতের অধিকারী করবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার উত্তর দেন। জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো : আল্লাহভীতি। আল্লাহভীতির ন্যূনতম পন্থা হলো উত্তম চিন্তা। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো উত্তম চরিত্র বা উত্তম আচরণ। প্রতিটি সৃষ্টিজীবের সাথে উত্তম আচরণ করা। সৎ চরিত্র এবং উত্তম আচরণের ন্যূনতম পন্থা হলো তাদের কষ্ট দান থেকে বিরত থাকা, আর সর্বোচ্চ পর্যায় হলো যে কষ্ট দেয় তার সাথে ভালো আচরণ করা এবং তার প্রতি ইহসান করা।
এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নাকারে কথা উপস্থাপনা করার উদ্দেশ্য হলো এ কথার প্রভাব যেন ভালোভাবে মানুষের হৃদয়ে বসে যায়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপভাবেই প্রশ্নাকারে উত্থাপন করেছেন যে, কোন বস্তু মানুষকে অধিকহারে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। এখানেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার উত্তরে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দু’টি গহ্বর অর্থাৎ মানব দেহের দু‘টি গহবর যা মানুষকে অধিকারে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে।
মানবদেহের এ গহ্বর দু’টি হলো মুখ এবং যৌনাঙ্গ। কেননা মানুষ অধিকাংশ সময় এ দু’টির কারণে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়ে থাকে এবং তার পরিণামে সে জাহান্নামের অধিকারী হয়ে যায়।
‘আল্লামা ত্বীবী (تَقْوَى اللهِ) ‘আল্লাহভীতি’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ এ বাক্যটি আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে এবং নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে উত্তম মুআমলাহর দিকে ইশারা করছে। অনুরূপ (حُسْنُ الْخُلُقِ) ‘হুসনু খুলুক’ দ্বারা সকল সৃষ্টিজীবের প্রতি উত্তম আচরণের দিকে ইশারা করছে। এ দু’টি উত্তম বৈশিষ্ট্যই মানুষকে জান্নাতের অধিকারী করে থাকে। এর বিপরীতে জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা মুখ এবং যৌনাঙ্গকে তার মোকাবেলায় তৈরি করেছেন। জিহ্বাকে মুখের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শারী‘আতের সকল নির্দেশিত কাজে তার হিফাযাত যেমন জরুরী তেমনি সকল হালাল খাদ্য খাওয়াও তাকওয়ার শীর্ষস্তর।
অনুরূপ যৌনাঙ্গের হিফাযাতও দ্বীনের সবচেয়ে বড় মর্যাদাপূর্ণ একটি স্তর। আল্লাহ মু’মিনদের নিদর্শন ও গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ‘‘আর যারা তাদের যৌনাঙ্গের হিফাযাতকারী’’- (সূরাহ্ আল মু’মিন ৪০ : ০৫)। শাহ্ওয়াত বা প্রবৃত্তির তাড়নার প্রাধান্যকালে যিনার সকল উপকরণ ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে বিরত রাখা সিদ্দীক্বীনদের দরজায় পৌঁছার শামিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০০৪)