পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৩১-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা লা’নাত করেন এমন সব নারীর ওপর যারা অপরের অঙ্গে উল্কি করে এবং নিজের অঙ্গেও করায়, যারা (ভ্রু বা কপাল) চুল উপড়িয়ে ফেলে এবং তারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত সরু ও তার ফাঁক বড় করে আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলিয়ে দেয়। এ সময় জনৈকা মহিলা ইবনু মাস্’ঊদ -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, আমি শুনতে পেলাম, আপনি নাকি এমন এমন নারীদের ওপর লা’নাত করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি কেন তাদের ওপর লা’নাত করব না, যাদের ওপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন আর আল্লাহর কিতাবেও রয়েছে। মহিলাটি বলল, আমি তো সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছি, কিন্তু তার মধ্যে কোথাও তো তা পেলাম না, যা আপনি বলছেন। তখন ইবনু মাস্’ঊদ(রাঃ) বললেনঃ যদি তুমি কুরআন পড়তে, তাহলে তুমি অবশ্যই (মনোযোগ দিয়ে) তা পেতে। আচ্ছা তুমি কি তা এ আয়াত পড়নি? وَمَآ اٰتٰكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهٰكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا.। অর্থাৎ- ’’রসূল তোমাদেরকে যা কিছু দেন তা তোমরা মেনে নাও, আর যা হতে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাকো।’’ এটা শুনে মহিলাটি বলল : হ্যাঁ, এটা তো পড়েছি। তখন ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর রসূল এ সমস্ত কাজ হতেও নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ التَّرَجُّلِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ فَجَاءَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ: إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّكَ لَعَنْتَ كَيْتَ وَكَيْتَ فَقَالَ: مَا لِي لَا أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ هُوَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَقَالَتْ: لَقَدْ قَرَأْتُ مَا بَيْنَ اللَّوْحَيْنِ فَمَا وجدت فِيهِ مَا نقُول قَالَ: لَئِنْ كُنْتِ قَرَأْتِيهِ لَقَدْ وَجَدْتِيهِ أَمَا قَرَأت: (مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا) ؟ قَالَت: بلَى قَالَ: فإِنه قد نهى عَنهُ
ব্যাখ্যাঃ (الْمُتَنَمِّصَاتِ) এর অর্থ হলো ঐ সব মহিলা যারা চেহারার চুল উপড়ানোর আবেদন করে বা উপড়িয়ে নেয়। এখানে উদ্দেশ্য হলো ভ্রু প্লাক করা। ভ্রু প্লাক তথা ভ্রুর কিছু চুল উপড়িয়ে ভ্রুকে চিকন করিয়ে নেয়া এবং করে দেয়া উভয়টি হারাম। এর উপরে আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ। হ্যাঁ তবে যদি মহিলার দাড়ি বা গোঁফ গজিয়ে যায় তবে তা উপড়িয়ে নেয়া হারাম নয়।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বরং এটা আমাদের মাযহাবে মুস্তাহাব। চেহারার চুল উপড়ানোর নিষেধাজ্ঞা ভ্রু ও চেহারার আশপাশের পশমের সাথে নির্দিষ্ট।
(الْمُتَفَلِّجَاتِ) অর্থ হলো দাঁতের মাঝে দূরত্ব বা ফাঁক সৃষ্টিকামী নারী। অর্থাৎ রেত বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে দাঁতকে ঘষে যে নারী দুই দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে দাঁতকে ভিন্ন আকৃতিতে নিয়ে আসে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। সাধারণত বৃদ্ধা বা বৃদ্ধার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছে যাওয়া নারীরা এমনটি করে থাকে, দাঁতের সৌন্দর্য প্রকাশের মাধ্যমে নিজের শৈশব প্রকাশের জন্য। কেননা দাঁতের মাঝে এই সূক্ষ্ম ফাঁক ছোট মেয়েদের হয়ে থাকে। অতএব মহিলা যখন বৃদ্ধা হয় এবং তার বয়স বৃদ্ধি হয় এবং নিঃসঙ্গতা অনুভব করে তখন রেত দিয়ে ঘষে; যাতে দাঁত চিকন ও দেখতে সুন্দর হয় এবং তাকে কমবয়সী ধারণা করা হয়। এসব হাদীসের ভিত্তিতে এমন কর্ম হারাম, যে করবে এবং যে করিয়ে নিবে উভয়ের জন্য। কেননা এতে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির পরিবর্তন রয়েছে। এছাড়া এতে ধোঁকা ও প্রতারণা রয়েছে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, ৪৮৮৬)
(وَمَنْ هُوَ فِي كِتَابِ اللهِ) এবং যার ওপর লা‘নাত আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনে রয়েছে। অর্থাৎ কুরআনের অভ্যন্তরে এদের লা‘নাতের কথা উল্লেখ রয়েছে। বাহ্যত প্রকাশ্যভাবে কুরআনের কোথায়ও এই সিফাতের নারীদের লা‘নাতের কথা উল্লেখ না থাকায় মহিলার কাছে সেটি অস্পষ্ট ছিল। যার দরুন সে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর কাছে প্রশ্ন করেছি, আমি তো কিতাবুল্লাহর দুই কভারের মাঝে যা আছে তা পড়েছি, অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি, কোথায়ও এদেরকে লা‘নাতের কথা পাইনি। তখন ইবনু মাস্‘ঊদ বলেন, لئن كنت قرأتيه لقد وجدتيه তুমি যদি চিন্তা ও গভীর মনোযোগসহ কুরআন পড়তে তবে অবশ্যই তা পেতে। তারপর তিনি কুরআনের যে আয়াত থেকে এগুলোর নিষেধাজ্ঞা বুঝা যায় তা পাঠ করলেন।
(فَإِنَّهٗ قَدْ نَهٰى عَنهُ) তিনি তথা রসূল তো এ থেকে নিষেধ করেছেন। মর্ম হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকতে বান্দা যখন নির্দেশিত, আবার তিনি এই সকল বস্তু থেকে নিষেধ করেছেন এ হাদীস ও অন্যান্য হাদীসে, অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার নিষেধাজ্ঞা যেন কুরআনেই রয়েছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে ইঙ্গিত হলো, এসব কাজে জড়িত নারীর ওপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভিশাপ আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপের ন্যায়। অতএব এগুলো থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)