পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪৩৯-[১৪] আবূ লুবাবাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, আমার পূর্ণাঙ্গ তওবা্ এটাই হবে যে, আমি আমার বংশীয় আবাসস্থল পরিত্যাগ করব, যে ঘরে আমি এ পাপকার্যে লিপ্ত হয়েছি এবং আমি আমার সমস্ত ধন-সম্পদ সাদাকাস্বরূপ প্রদান করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার জন্য এক-তৃতীয়াংশই যথেষ্ট। (রযীন)[1]
وَعَن أبي لبَابَة: أَنَّهُ قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَهْجُرَ دَارَ قَوْمِي الَّتِي أَصَبْتُ فِيهَا الذَّنْبَ وَأَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي كُلِّهِ صَدَقَةً قَالَ: «يُجْزِئُ عَنْكَ الثُّلُثُ» . رَوَاهُ رزين
ব্যাখ্যা: আবূ লুবাবাহ্, তিনি হলেন কিফায়াহ্ ইবনু ‘আবদুল মুনযীর আল আনসারী আল আওসী, তিনি তার উপনাম আবূ লুবাবাহ্ নামে বেশী পরিচিত ছিলেন, তিনি বদর যুদ্ধে শরীক ছিলেন, কারও মতে অংশগ্রহণ করেননি।
হাদীসের ভাষ্যে ঘটনার বিবরণ, আবূ লুবাবাহ্ আল আনাসারী -এর পরিবার-পরিজন ও বিষয়-সম্পত্তি ইয়াহূদী এলাকায় ছিল বলে তার উক্ত সম্প্রদায়ের সাথে বাহ্যিক হৃদ্যতা ছিল যে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবায়যাকে ২৫ দিন ধরে অবরোধ করে রেখেছিলেন। তখন তারা ভীত হলো এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আবূ লুবাবাকে আমাদের কাছে পাঠান, আমরা তার সাথে পরামর্শ করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তাদের কাছে পাঠালেন, তারা আবূ লুবাবাকে কেঁদে কেঁদে জিজ্ঞেস করল, যদি আমরা নিজেদেরকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সোপর্দ করি তাহলে তিনি আমাদের সঙ্গে কি আচরণ করবেন? তখন আবূ লুবাবাহ্ নিজের গলার উপর হাত বুলে এদিকে ইঙ্গিত করলেন যে, তিনি তোমাদের যাবাহ (হত্যা) করবেন। এই গোপনীয়তা প্রকাশ করতেই তার মনে জাগল যে, তিনি তো বিরাট আমানাতের খিয়ানাত করে ফেলেছেন এবং নিজের কৃতকর্মের জন্য ভীষণ অনুতপ্ত হলেন আর বললেন, সে আল্লাহর ও রসূলের খিয়ানাত করেছে- এ প্রসঙ্গে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে, يٰاَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوا لَا تَخُونُوا اللّٰهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা খিয়ানাত করো না আল্লাহর সাথে ও রসূলের সাথে এবং খিয়ানাত করো না নিজেদের পারস্পারিক আমানাতে জেনে শুনে’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ২৭)।
এ ঘটনার পর আবূ লুবাবাহ্ মসজিদের মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং নিজকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে নিলেন যতদিন পর্যন্ত আমার তাওবাহ্ কবুল না করেন আল্লাহ ততদিন পর্যন্ত, খানাপিনা আমার জন্য হারাম এভাবে যতদিন থাকলেন। অতঃপর বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন আর আল্লাহ তার তাওবাহ্ কবুল করলেন, তাকে বলা হলো আপনার তাওবাহ্ আল্লাহ কবুল করেছেন নিজকে মুক্ত করুন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম আমি নিজকে বাঁধনমুক্ত করব না যতক্ষণ না বাঁধনমুক্ত করেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এসে তার বন্ধন খুলে দিলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কথাটি বলেছিলেন যা হাদীসে বর্ণিত।
(‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩০৯)
হাদীসে দলীল প্রমাণিত হয় যে, মানৎকারীর ওপর তার সকল সম্পদ সাদাকা করা আবশ্যিক হয় না।